বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » » প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আন্দোলনে পরিবহন শ্রমিকরা
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আন্দোলনে পরিবহন শ্রমিকরা
নবগঠিত সড়ক ও পরিবহন আইনে শাস্তি এবং জরিমানার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আন্দোলনে নেমেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আইনের তিনটি বিষয় দ্রুত সংস্কার করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো।
কয়েকটি জেলায় বাস ও সারা দেশে ট্রাক-কভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। খুলনা বিভাগ বাদে রাজধানীর সাথে অন্য জেলার বাস বন্ধ না হলেও যা চলছে তা সংখ্যায় খুবই কম। বাস না পেয়ে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের সড়ক ও চালকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনটি আইনকে সংস্কার করতে হবে। আগে একজন চালকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল পঞ্চম শ্রেণি পাশ। তা এখন করা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি। এর ফলে অনেক অভিজ্ঞ চালকের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। বর্তমানে বাসের তুলোনায় চালক অনেক কম। আগে যেখানে জরিমানা ছিল ২০ হাজার টাকা এখন তা করা হয়েছে দুই লাখ টাকা।
শ্রমিকদের বক্তব্য, একজন চালক মাসে কয় টাকা রোজগার করেন যে এত টাকা জরিমানা দেবেন? এছাড়াও বাংলাদেশে সড়ক আর আমেরিকার সড়ক এক নয়। অথচ আইন করা হয়েছে এক। সড়কে তো শুধু চালকের জন্য দুর্ঘটনা হয় না। এর জন্য পথচারীরও দায় আছে। যার ফলে আগে যেখানে জামিন যোগ্য অপরাধ আর এখন করা হয়েছে জামিন অযোগ্য অপরাধ।
তারা আরো বলছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি তাদের দাবি না মানা হয় তবে সারাদেশের সকল যানবহন বন্ধ করে দেয়া হবে।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ অন্তঃজেলা বাসটার্মিনালগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বাস খুব কম চলছে। টার্মিনালে ভেতরে সারি সারি করে রাখা হয়েছে বাসগুলো। অথচ টার্মিনালের সামনে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়।
রিয়াদ নামে এক যাত্রী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জামালপুর যাওয়ার জন্য সকাল ১০টায় এসেছি। এখন একটা দুপুর ১টা বাজে। কিছুক্ষণ আগে একটা বাস ছেড়েছে। তবে সেখানে আমার জায়গা হয়নি। এখন আবার কখন ছাড়বে বোঝ যাচ্ছে না। যেখানে আগে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর গাড়ি ছাড়া হত।
সিলেট থেকে এসেছেন চালক কফিল উদ্দিন। আগে সৌখিন নামের গাড়ি চালাতেন। তবে এখন চালাবেন এনা গাড়ি। কিন্তু আসার পর একটা ট্রিপও দিতে পারেননি। তাই অলস সময় পার করছেন।
সূত্র জানায়, আন্তঃজেলার বাসচালকদের একটা বড় অংশেরই লাইসেন্স নেই। তারা এত দিন ম্যনেজ করে রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে আসছিলো। কিন্তু বর্তমানে সড়ক আইন চালু হওয়ায় তারা বিপদে আছে। যে পরিমাণে জরিমানা করা হবে তা দিতে হিমসিম খেয়ে যাবে। যার ফলে মামলা খাওয়ার ভয়ে তারা রাস্তায় নামছে না। বর্তমানে যতজন বৈধ চালক রয়েছেন তা দিয়ে সারাদেশ কভার করা যাবে না। গাড়ির তুলনায় চালক সংকট রয়েছে। এখন এই আইনের ফলে আরো বেশি সংকট তৈরি হবে। বর্তমানে যত বাস টার্মিনাল পড়ে রয়েছে এর অন্যতম কারণ বৈধ চালক সংকট। যার ফলে এই আইন যদি কঠোর হয় তবে অনেক চালক বেকার হয়ে পথে বসে যাবে।
গাবতলীর চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এই সমস্যা আইন করে সমাধান করা সম্ভব নয়। সবাইকে মিলে সচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষিতদের এই পেশায় এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা পতিষ্ঠানগুলোতে চালক হওয়ার জন্য আলাদা বিষয় খুলতে হবে।
শিক্ষিতরা এই পেশায় এলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে আইন করা হয়েছে তা মাথায় নিয়ে কেই গাড়ি চালাতে পারে না। সব সময় এই বিষয়টা মাথায় থাকলে এমনিতেই মানুষিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। আমরা চাই এমন আইন করা হোক যা সবার কথা বিবেচনা করে তৈরী।
বাসচালকরা বলছেন, এই আইন চালু হওয়ার পর থেকে বাস মালিকরা সরাসরি বলছেন চালকদের দায় তারা নেবেন না। এ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। অনেক সময় পেটের দায়ে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চালাতে হয়। অনেক দুর্বল কম্পানির গাড়িও চালাতে হয়। কিন্তু এর দায় যদি তারা না নেয় তবে কে নেবে।
এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ খান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, চালকদের দায় আমরা নেব না। তারা তাদের নিজরে ভুলে দুর্ঘটনা ঘটাবে, তার দায় আমরা কেন নেব? ফিটনেসের ব্যাপারে এই নেতা বলেন, যদি ফিটনেসের কারণে দুর্ঘটনা হয় তবে সে ক্ষেত্রে মালিকের দায় আছে। আইনে যা আছে তাই মেনে আমরা দায় নেব, এর বাইরে নয়।