বিধবাদের জন্য বিশ্বের যত অমানবিক রীতি
অনলাইন ডেস্ক
কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেলে সাময়িক কষ্ট হলেও তাদের কোনো ধরনের সামাজিক রীতিনীতি মানতে হয় না। বরং নিকটাত্মীয় ও সমাজের বিভিন্ন লোকজন তাদের ফের বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। ওই বিপত্নীক ব্যক্তিটি বৃদ্ধ হলেও কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে স্বামী মারা গেলে তাদের বিধবা স্ত্রীদের নানা ধরনের সামাজিক রীতি মেনে চলতে হয়, যার বেশিরভাগই নিষ্ঠুর ও অমানবিক। পৃথিবীর নানা দেশে বিধবাদের জন্য রয়েছে বিচিত্র সব রীতি-নীতি। ফলে এগুলো বিধবাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। অনেক সময় তাদের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে।
এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ভারতীয় বিধবাদের। এখানে বিধবাদের খাওয়ার সময় খেতে ডাকা হয় না। তাদের জন্য সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও নিষেধ। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের সামাজিক উৎসবেও তাদের অংশ নিতে দেয়া হয় না। এখন অবশ্য পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে।
ঘানাতে দরিদ্র বিধবাদের অবস্থা অরো শোচনীয়। সে দেশের সরকার বিধবাদের পালনীয় বিপজ্জনক রীতিগুলো সংস্কার করলেও, এখনো অনেকে সেসব আঁকড়ে আছেন। কেউ কেউ এখনো পুষ্টিকর খাবার খান না। এমনকি ঘানার কোনো অংশে বিধবাদের তাদের মৃত স্বামীর শরীরের অংশ দিয়ে বানানো স্যুপ বা খাবার পর্যন্ত খেতে হয়।
ঘানায় বিধবাদের কল্যাণে স্থাপিত এক সংস্থার কর্মকর্তা ফাতি আব্দুলাই জানিয়েছেন, খাবার বানানোর কাজে মৃতের চুল আর নখ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, স্বামীর লাশ গোসল করানো হয় যে পানি দিয়ে, সেই পানি পান করতে দেয়া হয় তার স্ত্রীকে। অনেক বিধবাই এখন আর এসব রীতি মানেন না। তবে যারা দরিদ্র তারা সে সাহস দেখাতে পারেন না, বাধ্য হয়ে এখনো তাদের সেসব মানতে হয়।
যেহেতু স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি তার পরিবারে ফেরত যায়, তার ফলে অনেক বিধবা জমির অধিকার হারান যদি না তিনি মৃত স্বামীর পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে বিয়ে না করেন।
পৃথিবীতে বর্তমানে সাড়ে ২৮ কোটি বিধবা নারী অছেন। এদের প্রতি দশজর একজন চরম দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। জাতিসংঘের হিসাবে অনেক দেশে বিধবাদের সাথে যেসব অমানবিক আচরণ করা হয়, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান।
পৃথিবীর অনেক জায়গাতে এমনকি বিত্তশালী পরিবারেও বিধবাদের অমর্যাদাকর নিয়ম মানতে বাধ্য করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক দশক আগেও বিধবাদের স্বাভাবিক জীবন ছিল না। তাদের জন্য মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এর অর্থ, সব ধরণের পুষ্টিকর খাবার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হত। তাদের রঙিন বা ঝলমলে কোনো কাপড় পরতেও দেয়া হতো না। হিন্দু বিধবাধের জন্য বরাদ্দ ছিলো পাড়হীন সাদা থান। এ ধরণের আচরণে শারীরিক ও মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়তেন বিধবারা।
শুধু ভারত নয়, চীন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানেও বিধবা নারীদের খাবারের মান ও বৈচিত্র প্রায় থাকেই না, এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের ওজন কমে যায়।
সত্তর এবং আশির দশকে কানাডার বিধবাদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ভেসনাভার। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দাদী এবং নানীকে দেখেছি প্রায় বিপরীত জীবন কাটাতে। একজন স্বামী মারা যাবার দুই বছরের মাথায় কোন রকম প্রকট অসুখ ছাড়াই মারা গেছেন। আরেকজন খাবারদাবারকে একেবারে ওষুধ জ্ঞান করতেন এবং নিজের যত্ন নিতেন।’
ভেসনাভার দেখেছেন, স্বামী মারা যাবার পরের দুই বছরের মধ্যে স্ত্রীর মারা যাবার খুবই ঝুঁকি থাকে। তিনি মনে করেন এর পেছনে বড় কারণ খাবার।
গবেষণায় তিনি দেখেছেন, বিধবাদের খাবার ও পুষ্টির নিয়মিত প্যাটার্ন বদলে যায়। আয়ু কমে যাবার পেছনে কম খাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি অব্যবস্থাই দায়ী।
মৃত স্বামীর শরীরের অংশ দিয়ে বানানো স্যুপ পর্যন্ত খেতে হয়