নীলা হারুনের ‘মুসাফির’ ও অন্যান্য কবিতা
ম্যাসাকার
অন্ধকার নেমে আসে।
কি ভয়ঙ্কর ধারালো শীতল অন্ধকার!
শাণিত ভয় কোটিগুণ হয়ে
বরফ করে দেয় প্রতিটি রক্তকণিকা।
শ্বেতকণিকাদের ক্ষমতা শেষ, অণুচক্রিকারা অবসন্ন
কেবল লোহিত কণিকা নিরুপায় বরফ হয়ে
গলে গলে পড়ছে।
একটা সবুজ দেশের মাথা কেটে দিয়েছে শ্বাপদেরা।
ওদের হাসির শব্দ রাইফেলের চেয়ে ভীতিকর।
আমরা, অজস্র জনগণ,
মাতৃভূমির পেটের ভেতরেই
ছটফট করে মরে যাচ্ছি।
আমরা অজস্র চা এর পাতা যেন,
এক নির্দয় চা ওয়ালা পরের বাগান থেকে
তুলে এনে আমাদের ফুটিয়ে নিচ্ছে
নিজের উনুনে।
মুসাফির
কোন এক পবিত্র দিনে,
আসর আর মাগরিবের মাঝে
যখন দুয়া কবুল হয়-
জুমা’বারের সেই নির্দিষ্ট সময়
এক বয়োবৃদ্ধ মুসাফির
কড়া নাড়বে দরজায়।
আমি তাকে সাদরে দোর খুলে দেব,
খেতে দেব খেজুর আর মিষ্টি পানি।
কুশল জিজ্ঞেস করবো
তার প্রিয়জনদের-
যারা কি না আমার অপরিচিতজন।
আমি তাকে বসতে দেব কোমল চাদর বিছিয়ে,
বৃষ্টির আরামদায়ক ছাঁটের সাথে হাওয়ায় ভিজবে
বারান্দায় শুকাতে দেওয়া রুমাল।
শুকরিয়া আদায় করে,
সফেদ হাসিতে মুসাফির দু’হাত তুলে
মোনাজাত ধরবে।
আমি মুসাফিরকে আপ্যায়ন করব-
আমি জানি মুসাফিরের দোয়া কবুল হয়।
* শুক্রবারের একটা নির্দিষ্ট সময়ে দোয়া কবুলের কথা কিতাবে আছে। আর বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।
খোঁটা
আগুন লেগেছে পবিত্র আল আকসায়!
লেগেছে নটরডেমে!
মেঠাইয়ের শহরে
ডিমের কুসুম আর গলা চকলেটের রং এর সাথে
গুলিয়ে যাচ্ছে রাতের কমলা অনল।
ফালাফেলের উত্তাপ সামলাবে কি?
সামলাও এবার ঈশ্বরের ক্রোধ।
রুটির ভেতর বুটের দানা;
চিবিয়ে খেয়েছ কত নিষ্পাপ মাথা!
হে ভিক্টর!
তুমি দেখতে পাচ্ছ?
তোমার গল্পের নগরী উঠেছে জ্বলে।
শুনছি-
সম্মানিত বারবণিতার প্রেমিক ঢালবে সম্পদ
পাথরের পায়ে!
সম্মানিত জুতা, সম্মানিত জামা,
সম্মানিত মুখোশের রং এর মালিকরাও
আপোষ করেছে!
ওদিকে সোনালি গম্বুজের অদূরে
শিঙ্গা বাজছে ইস্রাফিলের-
শত সহস্র শিশু নীরব এতিম
ধুঁকছে অনাহারে।
প্রলাপ-১
চাক ভেঙ্গে মধু খেতে যেয়ে দেখি
মুখে ঢুকে গেছে মোম
মৃত্যু বড় শীতল বলেই
জনম এত ওম।
ইয়ামন
আমি শহুরে নই,
গ্রাম্যও নই।
আমি তবে কে?
আমিতো নিরবান্ধব এক,
হতে চাইনি কিছুই;
জলচর অথবা স্থলচর,
চেয়েছিলাম
ছন্দ কথা শব্দ আর সুরের বাইরে যে জীবন,
যে জীবন মেঘের অথবা মহাকাশের,
বিস্তীর্ণ অথচ শূন্য-
আচ্ছা, মেঘ বা মহাকাশের টিকে থাকা কি
জীবন হতে পারে?
যেখানে নেই হৃদয় নামক আকরক?
অথবা, হতেও তো পারে-
যেদিন আর সব আপাত জড় সাক্ষি দিতে
উঠেপড়ে লাগবে,
সেদিন কি মেঘ অথবা মহাকাশ চুপ করে থাকবে?
আমিতো নির্বান্ধব এক ,
যে কিনা জীবন খুঁজে বেড়ায় সবখানে,
সবকিছুতে,
আজন্ম একাকী সময়ে
ইনসান না পেলেও
আত্মার দেখাতো পেয়েছি,
এটাই বা কম কিসে?
সান্ত্বনা নিজেকে।
আমাকে বাঁধতে চেয়ো না কোন সীমানাতে,
আমিতো তুচ্ছ জীব মাত্র,
মিশে যাব মাটিতে।
তখন আমার দেহাবশেষ জমিনে মিশে
কার সীমানার বৃক্ষের শোভা বাড়াবে,
কে জানে?