কমলনগরে ডেঙ্গু জ্বর মানে-ই হঠাৎ আতংক
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : স্বাভাবিক জ্বর হলেই শরীর ব্যাথা, বমি বম ভাব, শরীর কাঁপনি-ঝাঁকানি, শরীর ঝিনঝিন করছে এসব দেখা দিচ্ছে। জ্বর হতেই পারে। জ্বরগুলো সৃজনশীল, যেকোন সময় যে কারো হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জ্বর মানে আতংক। জ্বর হলে শরীর বা দেহে হঠাৎ লক্ষণগুলো উপছে পড়ছে। জ্বর দু’তিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু দেহে প্রছন্ড ব্যাথা, শরীরে অস্বাভাবিক টুং টাং হচ্ছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের পরে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বেশি দেখাচ্ছে সারাদেশে..।
হাসপাতালে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ছে গণহারে ডেঙ্গু। বাসা-বাড়িতে প্রতিটি ঘরে দু’তিনজন করে সব ধরণের বয়সিদের জ্বর এবং ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে।
লক্ষণ ছাড়াই প্রতিনিয়ত লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ছে। চলতি মাসের পনের দিনের হাসপাতাল রিপোর্ট সূত্রে দেখা যাচ্ছে- হাসপাতাল রেকর্ড পরিমান ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ক’দিনে প্রায় ৩৮০ জন ভর্তি, এরমধ্যে চলমান চিকিৎসা চলছে প্রায় ৩৫জনের। একদিনে ৪০-৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। এছাড়াও ডেঙ্গু ধরা পড়ে প্রতিদিন ২০-২৫ জন রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাহলে প্রতিদিন গড়ে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ছে ৬০-৭০ জন। পরিসংখ্যান ডেঙ্গু রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা চিকিৎসায় থাকতে হচ্ছে। কিন্তু থাকতে পারছে না। হাসপাতালে তেমন ডেঙ্গুর স্বাভাবিক চিকিৎসা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা প্লেটলেট নেই। ডেঙ্গু রোগ মানে-ই হঠাৎ আতংক। তবে সময়ের সাথে আতংক কেটে যাচ্ছে।
সরেজমিনে হাসাপাতালে দেখা যায়, ৫০শর্য্যা সিট এবং নিচে ফ্লোরিং এর যত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন তারমধ্যে, অর্ধেক এরও বেশি জ্বর এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা চলছে।
উপজেলার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন্দ্র এবং পাইভেট চেম্বারভুক্ত ডাক্তারদের সাথে আলাপ করে জানা গেল, প্রতিদিন অসংখ্য জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে পাঠাতে চাইলেও যাচ্ছে না। মেডিসিন লিখে দিলে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গড়ে জ্বরের রোগীর মাত্রাতিরিক্ত দেখা যাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও বলেন, মাঝে-মধ্যে রোগীর প্লেটলেট কমে গেলে ঝুঁকিতে পড়তে হয়। সাধারাণত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয় দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ প্লেটলেট প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে থাকে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে চলে যেতে পারে। এই সময় রক্তপাতের ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়। মাঝারি ঝুঁকি পূর্ণ রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা ২১ থেকে ৪০ হাজার থাকে।
গত একমাসে ৯জনকে প্লেটলেট কমে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগী নিয়ে তেমন একটা বিপাকে পড়তে হয়নি। তবে ঔষধ দিতে হিমশিম খাচ্ছি। পর্যাপ্ত ঔষধ এবং স্যালাইন না থাকায় একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তথ্যমতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আবু তাহের বলেন, প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীদের পর্যাপ্ত ঔষধ এবং সীট দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে চিকিৎসায় ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি (সাইট্রাস ফল, বেরি এবং শাক-সবজি), জিঙ্ক (সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং বাদাম), আয়রন (মাংস, মটরশুঁটিতে পাওয়া যায়), ওটমিল(সহজপাচ্যকার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ), পেঁপে, ডাবের পানি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন করতে হয়।
সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার, শরীরকে হাইড্রেট করার জন্য। আর সহজে হজম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগী দের খাওয়া উচিত নয়। যেমন- আমিষ খাবার, চর্বি, তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজাভুজি জাতীয় সব ধরনের খাবার।
তবে ভয়ে’র কোন কারণ নেই। ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যায়। যারা বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নেয়। তারা ঝুঁকি মনে করলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন।
এছাড়াও বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালতের আশে-পাশে পানি জমা কোন পাত্র রাখা যাবে না। নারিকেল মালা, ফুলের টপ, পানির বতল, জার ইত্যাদি পানি জমে থাকা পাত্রগুলো নস্যাৎ করতে হবে। ডেঙ্গুর জন্ম নর্ধমার পানিতে হয়। এছাড়াও ড্রেন, জলাশয়, পুকুরের আশেপাশে পানি পরিস্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনমতে মশার প্রজনন ধংস করতে স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
ভ-বাণী/ডেস্ক