প্রশংসা, ভালোবাসায় মানবিক ইউএনও’র বিদায়
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : বদলি জনিত কারণে বিদায় নিলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি মানবিকতা ও কর্মগুনে সকল শ্রেণি পেশা মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। তার কর্মদক্ষতায় সাধারণ আপাময় জনগনের মন জয় করেন তিনি। তিনি সততা, নিষ্ঠার সাথে তার ২৫ মাস অতিবাহিত করেন।
তিনি উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, বীরমুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেন। তার বিদায় বেলা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাকে সম্মানা স্মারক, ক্রেস্ট, বই সহ যাবতীয় সামগ্রিক উপহার দেন। উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন কর্মকান্ডে মানুষ তাকে সারা জীবন স্মরণ রাখবে এমন কথা শুনা যাচ্ছে।
তিনি কমলনগরে রিকসাওয়ালা, দিনমজুর থেকে শুরু সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন। তিনি মহামারি করোনা ভাইরাস চলাকালীন সময়ে যোগদান করেন। তখন থেকে তার পথচলা ছিল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। তিনি গত দু’বছর কর্মজীবনে দলমতের উর্ধে কাজ করেন। তার বদলির কারনে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাহাকার দেখা গেছে। তার বিদায় বেলায় কান্নায় ভেঙে পড়েন উৎসুক জনতা।
তিনি করোনা মুহূর্তে মানুষের দরজা দরজা গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ান। তিনি যখনি সুযোগ পেয়েছেন, তখনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন। সাধারণ মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল খুব মার্জিত ও স্বাবলীন। তিনি সবসময় হাঁসি-খুঁশি থাকতেন। মানুষ উপজেলার দুর-দুরান্ত থেকে সরাসরি তার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আসতেন। তিনি সাধ্যমতে সমস্যা সমাধানে কাজ করতেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় নিজেই অর্থ দিতেন। কোন মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়া-লেখা যেন বন্ধ না হয় তার জন্য সবকিছু করতেন। তাকে মানবিক ইউএনও ডাকা হতো। তার শূন্যতা কিছুটা বেদনাদায়ক। তার কর্মদক্ষতায় তা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দু’বছর ইউএনও কামরুজ্জামান স্যার সাধারণ মানুষের সাথে দিন কাটিয়েছেন। গ্রামের মহল্লায়, টং দোকানে সাধারণ মানুষের সাথে বসে চা খেতেন। সাধারণ মানুষের মনের কথা শুনতেছেন। সাধারণ মানুষ তার কাছে সুখ-দুঃখের গল্প করতেন। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন। তার বদলিতে মানুষের চোখে-মুখে কষ্টের চাপ দেখা গেছে।
চায়ের দোকানে বসে কিছুলোক বলেন, ইউএনও স্যার ভালা মানুষ, আমরা তার কাছে সরাসরি কথা বলতে পারছি। শুনছি সে চলে যাইতাছে। তবে তার জন্য খুব কষ্ট, মায়া লাগে। তার বিদায়ে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ বেশি কষ্ট, দু:খ পাইবো। তিনি অনেক অসহায় মানুষে লাই কাজ করেছেন।
যাওয়ার সময় আমজনতা বিদায়ে সাক্ষাৎ করেন। এসময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অশ্রু দিয়ে ভিজিয়ে গেলেন সবাইকে। আত্মার সম্পর্কে তিনি প্রচুর কেঁদেছেন।
তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনাদের জন্য কিছু ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে আপনাদের ভালোবাসা আন্তরিকতায় আমি ঋনী হয়ে গেলাম। কখনো কমলনগর উপজেলা মানুষের কথা ভুলতে পারবো না। এই উপজেলা আমার সেকেন্ড হোম। আমি যেখানেই থাকি সবসময় আপনাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
তার বিদায়ে কমলনগরে নাগরিক সমাজ ব্যানারে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এসময়, সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ তাকে সংবর্ধনায় বিদায় জানান। মো.কামরুজ্জামান কক্সবাজার জেলা টেকনাফ উপজেলায় যোগদান করবেন।
ভী-বাণী /ডেস্ক/ আমু