রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » বিবিধ » স্যালুট নেননি মুক্তিযোদ্ধা বাবা, ছেলেরাও ফিরিয়ে দিলেন ডিসির চাকরির প্রস্তাব
স্যালুট নেননি মুক্তিযোদ্ধা বাবা, ছেলেরাও ফিরিয়ে দিলেন ডিসির চাকরির প্রস্তাব
দিনাজপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন হওয়া মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলামসহ তার পরিবার জেলা প্রশাসক কর্তৃক চাকরি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখান করেছেন। তারা যাঁর সুপারিশে চাকরি হয়েছিল, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তাই তারা মেনে নেবেন।
চোখে-মুখে ক্ষোভ নিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন হওয়া মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুরুজ্জামান নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নুরনেহার বেগম এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চান। স্ত্রী নুরনেহার বেগম বলেন, ছেলেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যার কারণেই স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার তদন্ত করে শাস্তি দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে শনিবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন ঘটনা তদন্তে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর কালের কণ্ঠের অনলাইন ও ২৫ অক্টোবর প্রিন্ট ভার্সনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না-হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। পরে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে যান। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নুরনেহার বেগম ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, নুর ইসলামকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং সরকারি যে বাড়িতে থাকত সে বাড়িতেই থাকবে নুর ইসলাম ও তার পরিবার। সেই বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করেন যে চাকরি ফেরত পেল সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। যাতে নুর ইসলাম বা তার পরিবারের কোনো বক্তব্য ছিল না।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নুরনেহার বেগমের সঙ্গে কথা বলছেন রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো, ইসমাইল হোসেনের ছেলে চাকরিচ্যুতনুর ইসলাম ও তার বড় ভাই নুরুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, জেলা প্রশাসক এসেছিলেন। আমরা তাকে সম্মানের সঙ্গে কথা বলে বিদায় দিয়েছি। তিনি চাকরি ও বাড়ি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। তার সেই সিদ্ধান্তকে আমরা প্রত্যাখান করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে চাকরি হয়েছিল, আর জেলা প্রশাসক চাকরি খেয়েছেন। জেলা প্রশাসক চাকরি দিয়ে আবার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে। হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে চাকরি হয়েছিল, তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি দিনাজপুরে নেই। তিনি এসে যা সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তা-ই মেনে নেব। এ সময় ‘মাফ করে দেওয়া’র বিষয়টি জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, আমার বাবা জীবদশায় যার সঙ্গে যার সাক্ষাৎ পাননি, মরণের পরেও যাদের কারণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গ্রহণ করেননি, তাদেরকে আমরা মাফ করার কে?
চাকরিচ্যুত নুর ইসলামের স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, আমাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা আগে সিনেমায় দেখতাম। বাস্তবে দেখিনি। আমি দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি। আমি চাই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হোক।
অপরদিকে, শনিবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন ঘটনা তদন্তে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের বাড়ীতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লোকমান হাকিম, দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোরাম নবী দুলাল।
সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, আমি ঘটনা তদন্তে এসেছি। ভিকটিম ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েছি। নুর ইসলামকে লিখিত বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা সেই সংবাদটি লিংকে দেওয়া হলো :