মেঘনার ভাঙন রোধে ঠিকাদারদের হ য ব র ল কান্ড
আমজাদ আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর-রামগতি উপজেলায় মেঘনার ভাঙন রোধে একনেক থেকে প্রায় ৩১ শত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। সরকার বরাদ্দকৃত কাজে ট্রেন্ডারের মাধ্যমে কিছু ঠিকাদার নিয়োগ করেন। কাজের প্রাথমিক স্ট্রেটমেন্ট ছিল প্রথমে বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং হবে। এবং যথাসময়ে নদীর ভাঙন রোধে কাজে ব্লক তৈরি, ব্লক ডাম্পিং, ব্লক প্লেসিং ও মাটির বেড়িবাঁধ তৈরি করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেশ কিছু ঠিকাদার কোম্পানি কাজ পেয়েও কাজ করছে না। তারা শুধু শুধু নামে বড় বড় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নদী ভাঙন রোধের কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ নদী শাসনের এসব নামে-বেনামের কোম্পানির কোন অভিজ্ঞতা পর্যন্ত নেই। তারা নানাবিধ অজুহাতে কাজ বন্ধ করে রেখেছে। বালু নেই, ব্লক নেই, কাজের সাইড সমস্যা ইত্যাদি বলে কাজ এড়িয়ে যাচ্ছে।
ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর খবর নিয়ে জানা যায়, বিল্ডার্স বিশ্বাস নামে এক কোম্পানি নদীর বাঁধ নির্মানের কাজ উদ্ভোধন করেন। অথচ কিছুদিন পরে উদ্বোধনী ন্যামপ্লেট বা সাইনবোর্ড নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। তাদের একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা টেন্ডার পাইছে, কাজ শুরু করবে কিন্তু কোন বিল পায়নি। যার কারণে কাজ করছে না। তারা কোন ইনভেষ্ট করতে রাজি হচ্ছে না। তাহলে কাজ নিয়েছে কেন..?জানতে চাইলে কোন উত্তর দিতে পারেনি।
ন্যাশন টেক কোম্পানি কিছু কাজ করেছে। তবে কাজ করতে গিয়ে তাদের এককর্মী নদীতে ডুবে মৃত্যু বরণ করেন। পরে বালু সংকট দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখে।
ঠিকাদার কোম্পানি গুলোর মধ্যে আরও যারা - এস বি কোং, সিনাম, বি জে, ইলেক্ট্র গ্লোব, কে কে এন্টারপ্রাইজ, জামিল-ইকবাল কোম্পানি সহ অনেকগুলো নামে-বেনামী কোম্পানি টেন্ডার নিয়ে কাজ করছে না। এরা বালু সংকট সহ কিছু অদ্ভুত কারণ দেখিয়ে কাজ করছে না।
খবর নিয়ে জানা যায়, টেন্ডার পাওয়া কোম্পানি গুলোর বেশির ভাগই নদী শাসনের দক্ষ কোন জনবল ও সরজ্ঞাম নেই। তারা ছয়-নয় করে অর্থ কামাতে কাজ নিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, যেসব কোম্পানি কাজ নিয়েছে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া বাকিরা সবাই অর্থ হাতানোর ধান্ধায় টেন্ডার নিয়েছে। তাদের নদী শাসনের পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা ও দক্ষ জনবল বা কোন ধরণের সরজ্ঞাম নেই। ঠিকাদারদের হ য ব র ল কান্ডে ভাঙনের তলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।
ঠিকাদারদের খামখেয়ালির কারণে মেঘনার ভাঙনে শত শত মানুষ ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, স্বপ-আশা শূন্যে বাসিয়ে দিচ্ছে। নদীর কাজে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কাজ হবে, ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। এসব জেনে-শুনে নদীর পাড়ের মানুষ স্বপ্ন বুনেছে। অথচ কাজের কোন লেস নেই বলে ভাঙন কবলিত মানুষ হতাশ হয়ে দিন পার করছে। স্বপ্ন চোখের সামনে মাটি-বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমির মত ভাঙছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজে চলমান রয়েছে ওয়েস্টার্ণ ইন্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তারা নদী ভাঙনের বাঁধ নির্মানের এক কিলোমিটার কাজ করেছে। তাদের নিজস্ব ব্লক তৈরি ফ্যাক্টরি রয়েছে। তাদের নদী শাসনের কাজে সারাদেশে অবস্থান অন্যতম। নদীর শাসনের কাজ তাদের কোম্পানির প্রদান উদ্দেশ্যে। তারা রামগতি-কমলনগর উপজেলা নদী ভাঙন রোধে বেশ কিছু কাজ পেয়েছে।
ওয়েষ্টার্ণ ইন্জিনিয়ারিং কোম্পানি ম্যানেজার বোরহান বলেন, নদী ভাঙন রোধে তাদের কোম্পানি সারা দেশে কাজ করছে। মেঘনার ভাঙন রোধে কমলনগর-রামগতিতে বেশ কিছু কাজে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলছে। এছাড়াও কমলনগরে ব্লক তৈরির ছয়টি ফ্যাক্টরি রয়েছে। সবগুলো ফ্যাক্টরিতে ব্লক তৈরি চলমান রয়েছে। বাকি কাজগুলো যথাসময়ে চলমান থাকবে।
সরকার নদী শাসনের ৩১ শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজ হচ্ছে না কেন…এমন প্রশ্ন থাকলেও কোন উত্তর নেই। নানা প্রশ্ন পরিলক্ষিত হয় ভাঙনে উপকূলবাসীর চোখে-মুখে। তারা হতাশ, আর বাঁচাতে পারবে না বসত বাড়ি-ফসলি সম্পদ।
গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেঘনার ভাঙনে প্রায় বিশ কিলোমিটার উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, লুধুয়া, পাটারিরহাট, সাহেবের হাট, রামগতির চর আবদুল্লাহ, চর আলেকজান্ডারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙন কবলিত। এভাবে ভাঙন চলমান থাকলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে রামগতি-কমলনগরের বেশির ভাগ জনপদ। এদিকে বাঁধ নির্মান না হওয়ায় প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে ত্রিশটি গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ফারুক বলেন, ঠিকাদাররা বালু সংকট দেখাচ্ছে। এছাড়াও কাজের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। ফান্ড সমস্যা রয়েছে। এসব কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে বালু সংকট কাটলে কাজ শুরু হবে।
ভী-বাণী /ডেস্ক