সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » রামগতি-কমলনগরে জেলেদের অধিকার আদায়ে এনজিও (কোডেক) মতবিনিময়
রামগতি-কমলনগরে জেলেদের অধিকার আদায়ে এনজিও (কোডেক) মতবিনিময়
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা নদী বা সাগরে জলদস্যু , নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের হাতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবনিমিয় সভায় করেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) জেলেদের অধিকার আদায়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।
প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলে, কোডেকের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোর্শেদা বেগম, মনিটরিং অফিসার দেব দুলাল হাওলাদার, ফিল্ড অফিসার মোকাম্মেল হোসেন, জেলে প্রতিনিধি, আব্দুল মতলব মাঝি, আবুল কালামসহ প্রেসক্লাব’র সাধারন সম্পাদক ইউছুফ আলী মিঠু, উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মানিক, বেলাল হোসেন জুয়েল, সহ সভাপতি কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, মোখলেছুর রহমান ধনু, আমানত উল্লাহ, মুসা কালিমুল্লাহ, শাহরিয়ার কামাল, রিয়াজ, আফসার রাসেলসহ প্রমুখ।
জেলেরা জানান, নদী বা সাগরে মাছ শিকারে গেলে জলদস্যু, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। জেলেদের আটক করে টাকা আদায়, মাছ চিন্তাই, টাকা না দিলে হত্যা, জাল পুড়ে পেলা সহ নানান সমস্যার শিকার হতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান সাময়িক হলেও পরবর্তি কোন ব্যবস্থা নেই বললে চলে। এছাড়াও নদীতে মাছ শিকার বন্ধ হলে জেলেদের পরিবারে নেমে আসে সাময়িক অন্ধকার। তারা মাছ শিকারে নদীতে যায় না। পুরো অবরোধে জেলেরা পুরো পরিবারসহ নাওয়া-খাওয়ার সমস্যায় থাকেন। সরকারি বরাদ্দে কার্ডধারীরা জেলেরা সামান্য চাল পায়। এতে তাদের চলে না। তাও আবার চাল সঠিক সময়ে পায় না। যখন পায় তখন অবরোধ শেষ। এক পরিবারে জেলের সংখ্যা ৪ জন হলেও কার্ড পায় ০১ জন। এতে এক জনের কার্ডের চালে পুরো পরিবার চলে না। অবরোধের সময় জেলেদের জীবন -জীবিকা চালাতে খুবই হিমশিম খেতে হয়।
নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে মোটা অংকের টাকা, মাছ চিন্তাই, জাল পুড়ে ফেলা জেলেদের জীবন কত কঠিন ভাবে অতিবাহিত হয় চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। তবে দু:খের বিষয় জলদস্যু চেয়ে নদীতে নিরাপত্তা প্রহরী কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের অত্যাচার বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জেলেরা জানান।
তারা আরও দাবি করেন, জোর পূর্বক মাছ শিকারে ট্রলার বা নৌকাসহ জেলেদের গভীর নদীতে বা জঙ্গলে আটক রেখে পরিবারের কাছে এসব দাবি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নৌ-পুলিশ বা কোস্টগার্ড তাদের দালাল বা এজেন্টের মাধ্যমে এসব অপকর্ম করছে। কিছু বললে হত্যা সহ নানা ধরণের সমস্যায় ফেলছে।
জেলে কার্ড করাতে আরও মহা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সঠিক জেলে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে জেলে কার্ড করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত জেলেরা কার্ড বা জেলে সম্প্রদায় হতে বাদ পড়ে যায়। জেলে কার্ড করাতে সরাসরি সম্ভব হয় না। উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কার্ড হবে না। বিভিন্ন সমস্যার অজুহাত পেতে হয়। দালাল বা তার মনোনিত এজেন্টের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কার্ড করা হয়। জেলে কার্ডের চাল নিতেও স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের টাকা দিতে হয় এমনটাও তারা জানান।
জেলেরা আক্ষেপ করে বলেন, এত বিড়ম্বনায় তারা কোথায় গেলে একটু সমাধান পাবে..?
জেলেরা নদী বা সাগরে মাছ শিকারে যেতে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধাদন নিতে হয়। এ টাকা শোধ করতে মাছ ধরার বেলা শেষ হলে ধাদনের টাকা শেষ হয় না। তাদের দাবি জেলেদের জন্য সরকার ‘জেলে লোন’ ব্যবস্থা করা। তাহলে ধাদনের সমস্যায় পড়তে হবে না। ধাদনের টাকার জন্য জেলে হত্যা পর্যন্ত হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় এসব সমস্যার কথা বলতে চাচ্ছে না জেলেরা। তারা মনে করে এসব বললে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। তাই নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে কোডেক সমন্বয়ক মোর্শেদা বেগম জানান, জেলেদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে কোডেক জাতীয় পর্যায়ে কাজ করছে। কিভাবে জেলে ও তাদের পরিবারকে উন্নত করা যায়। জেলেদের জন্য কোডেক বিভিন্ন প্রনোদনার ব্যবস্থা করছে। এছাড়াও তাদের পরিববারে ছেলে মেয়ে পরিজনদের জন্য কোডেক হাঁস-মুরগি পালন, শাক-সবজি চাষ, সেলাই প্রশিক্ষণ, অটোমোবাইল প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থায় কাজ করছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জেলেদের নদীতে মাছ শিকারে নানা সমস্যা হচ্ছে। তবে এসব সমস্যার বিষয়ে প্রশাসনের দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জেলে কার্ড করাতে টাকা দিতে হয়। এটা সত্য নয়। উপজেলা মৎস্য অফিস দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত। টাকা নিয়ে জেলে কার্ড করাচ্ছে এরকম লোকদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেয়া হবে।