কমলনগরে ২০ বছরের বন্ধ সড়ক দখলমুক্ত করেন প্রশাসন
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘ ২০ বছর বন্ধ থাকার পর পূর্ণরুদ্ধার হলো লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের হাজির হাট ইউনিয়ন পরিষদের একটি গ্রামীন সড়ক। এটি উদ্ধারে তৎপর ছিলেন উপজেলার প্রশাসন ও হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.নিজাম উদ্দিন। তিনি সড়কটি মানুষের চলাচলের জন্য পূর্নরুদ্ধারের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় কাজ করেন। গ্রামীন সড়কটি হাজিরহাট ইউপি’র ০২ নম্বর ওর্য়াডের জয়নাল হাওলাদার সড়ক নামে পরিচিত ছিল। এই সড়কটি ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দ দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য নির্মান করেন। সেই সময় থেকে এই সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু ২০০৩-০৪ সালে পারিবারিক দ্বন্ধে স্থানীয় একলোক (ইব্রাহিম গং) সড়কটি বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও তিনি জেলা আদালতে মামলা করে সড়কটির প্রসস্ত পথে অংশ নকশায় কেটে পেলে। এবং নিজের বলে সড়কটি বন্ধ করে গর্ত ও গাছ রোপন করে বন্ধ করে দেয়। এতে স্থানীয় সড়কটি দিয়ে প্রায় ২০ টা পরিবারের লোকজন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয়। পথ বন্ধ রাখা এভাবেই চলতে থাকে টানা ২০-২২ বছর।
সরেজমিনে, মঙলবার( ১৭ আগস্ট) সকালে উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের ০২ নম্বর ওর্য়াডের পুর্নরুদ্ধার হওয়া( জয়নাল হাওলাদার) সড়কটি মাটি সংস্কার করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় চলাচলে সমস্যার সম্মুখিন সুমন হাওলাদার ও অন্যরা বলেন, এখান দিয়ে বিগত ৫০-৬০ বছর যাবত মানুষ চলাচল করে। মানুষের চলাচলের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বরাদ্দ দিয়ে সড়কটির সংস্কারে কাজ করেন। কিন্তু পরোক্ষণে ২০০৩-০৪ সালে পারিবারিক সমস্যার কারণে লোকজনের চলাচলে বন্ধ করে দেয় স্থানীয় ইব্রাহিম ও তার পরিবার। এই সড়কটি বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ টি পরিবারে সদস্যেরা যাতায়াত করতে পারে না। শুস্ক মৌসুমে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে বাচ্চারা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে চায় না। যাতায়াতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। পানি দিয়ে যেতে বই, খাতা সহ যাবতীয় জিনিস পত্র নষ্ট হয়ে যায়। রাতে চলতে সাপ সহ মারাত্মক ব্যাধির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও একজন ভুক্তভুগী জানান, পথ না থাকলে বাড়ির বা মানুষের কোন মূল্য থাকে না। পথটি হলে জীবনে চলাচলার গতি ভালো হত। পথটি স্থানীয় ২০ টা পরিবারের চলাচলে খুবই প্রয়োজন।
একবৃদ্ধা জানান, তার বয়স প্রায় ৯৫ বছর। তিনি দু:খ করে বলেন, ভালো ডাক্তার দেখাতে পারি না। হাটতে সমস্যা, দাঁড়াতে পানি না। বাড়িতে যানবাহন আসতে পারে না। পথ নেই, পথ হলে দু:খ মুছবে।
ইব্রাহিম বলেন, এখান দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ একটি সড়ক বের করেন। সড়কটি তার সম্পতির উপর দিয়ে গেছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে সবার সম্মতিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান তার জমি বুঝিয়ে দিয়ে সড়কটির ১২ ফুট জায়গা বের করেন। এই সড়কে চলাচলে আর কোন বাধা-বিপত্তি থাকবে না বলে তিনি জানান।
সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের প্রতিনিধি আমির হোসেন শিপন বলেন, স্থাণীয় ভাবে চেয়ারম্যান মো.নিজাম উদ্দীন (জমিপরিমাপক) দিয়ে বৈঠক করে ইউনিয়ন পরিষদ (জয়নাল হাওলাদার) নামে দীর্ঘদিনের পুরানো সড়কটি বেদখলে থাকায় তা উদ্ধার করেন। এবং মাটি বরাট করতে নির্দেশ দেয়। মাটি বরাট কার্যক্রম চলছে।
উপজেলার হাজির হাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর যাবত এ গ্রামীন সড়কটি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় একলোক ও তার পরিবার। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর চলাচলে বাধা প্রতিবন্ধকতায় পড়া মানুষগুলো তার নিকট বিষয়টি জানায়। পরে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে এটি ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দ দিয়ে সড়কটি মানুষের জন্য নির্মান করেন। পরোক্ষণে পারিবারিক দ্বন্ধে স্থানীয় একটি পরিবার সড়কটি বন্ধ করে গর্ত ও গাছ রোপন করে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে সরেজমিনে গিয়ে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় স্থানীয় আমিন(জমি-পরিমাপক) দিয়ে বৈঠকে ব্যাক্তিমালিকানা জমির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই ও পর্যালোচনা করে সড়কটির জমি পরিমাপ করা হয়। এতে দেখা দেখা যায় ব্যাক্তিমালিকীয় জমির পরিমান মাঠ পর্যায়ে সঠিক রয়েছে। সড়কটির ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দের জমি হিসেবে ১২ ফুট পাওয়া যায়। যাহা কারো ব্যাক্তিগত ভূমি নহে। এটি সম্পূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ সড়কের ভূমি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন পর সড়কটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সড়কে ইউনিয়ন পরিষদ মাটি বরাট করে মানুষের চলাচলের উপযোগি করবে। সরকারি বা ইউনিয়ন পরিষদ এ গ্রামীন (জয়নাল হাওলাদার) সড়কটির মালিক হিসেবে দাবিদার রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় পুরুষ ও সংরক্ষতি মহিলা মেম্বারদের বলা হয়েছে সড়কটিতে মাটি বরাট করে দিতে। যাতে করে স্থাণীয় লোকজন চলাচলে সমস্যা না হয়। যেকোন সময় পূর্ণরুদ্ধার (জয়নাল হাওলাদার) সড়কটির আইডি করা হবে। যাতে সরকারি বা পরিষদের কোন বরাদ্ধের সমস্যা না হয়।
থানা এএসআই মো.হানিফ বলেন, পথ বন্ধের অভিযোগটি ওসি স্যার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোর্স নিয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে তদন্ত করে বৈঠক করি। এবং স্থানীয় ভাবে আমিন (জমিপরিমাপক) দিয়ে সড়কটির পথ বের করা হয়। এটি ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত সড়ক। এবং পরিষেশে ওসি স্যার ও তদন্ত স্যার পথ বা গ্রামীন সড়কটি পূর্নরুদ্ধারে কাজে সহযোগিতা করেন।
থানা তদন্ত কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র লাল বলেন, কারো চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না। এটি রাষ্ট্র বিরোধী কাজ। ব্যাক্তিমালিকানা ভূমি হলেও মানুষ চলাচলের পথ দিতে হবে। কাগজপত্র দেখে বুঝতে পারলাম এ সড়কটি দীর্ঘ দিনের পুরানো ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দের সড়ক। যার কারণে সড়কটি পর্ণরুদ্ধারে সমস্যা হয়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যান বৈঠকের মাধ্যমে জমি পরিমাপক দিয়ে মেপে সড়কের ভূমি বের করেন। এবং মানুষের চলাচলের জন্য মেম্বারদের মাটি বরাট করতে নির্দেশ দেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মোসলেহ উদ্দীন বলেন, সড়ক বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগটি পাওয়ার পর খোঁজ-খবর নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোর্স পাঠিয়ে পথ পূর্নরুদ্ধার করতে বলা হয়। এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সড়কটি পূর্নরুদ্ধার করা হয়। যিনি সড়কটি বন্ধ করে রেখেছে। তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত কারণে বেআইনি ভাবে সড়কটি বন্ধ করে রাখে। যা পরে প্রমানিত হয়। এটি ইউনিয়ন পরিষদের সড়ক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সড়ক অবরোধ বা বন্ধের বিষয়টি জেনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে সড়কটি যেন দ্রুত পূর্নরুদ্ধার করা হয়। সড়কটি পূর্ণরুদ্ধার হয়েছে শুনে খুব খুশি হলাম। মানুষ চলাচলের পথ কখনো কেউ বন্দ করে রাখতে পারে না। এটি সম্পূর্ন বেআইনি কাজ। সড়কটি পূর্নরুদ্ধারে থানা প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অন্যদের ভূমিকা ছিল। যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার।