গ্রুপিংয়ে পিষ্ট মহিলা দল
কিরণ শেখ-
আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদের গ্রুপিংয়ে পিষ্ট হয়ে পড়েছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। এই গ্রুপিংয়ে কারণে গত ৮ মার্চ থেকে মহিলা দলের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর একারণে সংগঠনটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না। ফলে নতুন কোনো নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না। পক্ষান্তরে যার খেসারত দিতে হচ্ছে বিএনপিকে। মহিলা দলের নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৬ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি এবং সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৯ সালে ৪ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়।
তবে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হতে হলে একজন নারী নেত্রীর কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না! শুধু যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাত ধরতে পারবেন তিনিই মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হবেন। এছাড়া তার আর কোনো রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না বলে মনে করেন সংগঠনটির নেত্রীরা।
২৭ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের কমিটির ঘোষণার আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং বিএনপি ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে যে, চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া উপস্থিত হওয়ার আগেই মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন সুলতানা আহমেদ। আর এসব জায়গায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে গাড়ি থেকে হাত ধরে মঞ্চে নিয়ে যেতেন সুলতানা আহমেদ এবং যাওয়ার সময়ও বেগম জিয়ার হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিতেন তিনি।
এবিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা দলের এক নেত্রী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, নেতাদের উপর রাগ করেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। আর সুলতানা আহমেদ কমিটি হওয়ার পরে আফরোজা আব্বাসকে বুঝিয়েছেন যে, আমি সব বুঝি এবং সব কিছু পারি। এজন্য আফরোজা আব্বাস তার উপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর এই সুযোগ সুলতানা আহমেদ পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন। মূলত সুলতানা আহমেদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। তিনি ম্যাডামের হাত ধরতে পেরেছেন বলেই সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
এদিকে গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা দলের র্যালিতে আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদের গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল হয়। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহিলা দলের সব কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর থেকেই সংগঠনটির কার্যেক্রম স্থগিত রয়েছে।
তবে আজ (৯ সেপ্টেম্বর) মহিলা দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। তাই কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্দেশ দেয় যে, আফরোজা আব্বাস তার ১০ জন অনুসারী এবং সুলতানা আহমেদ তার ১০ জন অনুসারী নিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানবেন। কিন্তু আফরোজা আব্বাস সাবেক ৫ মহিলা দলের এমপিসহ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন কর্মী নিয়ে শহীদ জিয়া সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। আর সুলতানা আহমেদ মাত্র ৪ জন কর্মী নিয়ে যান। পরে সুলতানা আহমেদ তার ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী নিয়ে চদ্রিমা উদ্যানে প্রবেশ করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রবেশর সাথে সাথেই সুলতানা আহমেদ তার কাছে আফরোজা আব্বাসের নামে বদনাম করতে থাকেন। পরে সুলতানাকে ধমক দিয়ে থামান নজরুল ইসলাম খান। বলেন, এতো কথা বলেন কেন? ১০ জন করেই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাবো।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা দলের আরেক নেত্রী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা ভুল ছিল। কারণ তিনি কর্মী ন্ধব নন।
মহিলা দলের কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে সুলতানা আহমেদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এবিষয়ে আমাদের কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। আর বন্ধের বিষয়ে কোনো বিবৃতিও দেয়া হয়নি।
আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। উনি আমাদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী। অর্থ্যাৎ আমার সম্মানিত ভাবি। আর আমাদের মধ্যে কোনো গ্রপিংও নেই।
অন্যদিকে বর্তমানে সুলতানা আহমেদ নামমাত্র মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক। মূলত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। আর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি হেলেন জেরিন খানের স্বাক্ষরেই দেশের সব জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
এবিষয়ে সুলতানা আহমেদ বলেন, এই রকম কিছু নয়। আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আর বিবৃতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে মহিলা দলের নতুন কমিটি করার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা খুব শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করবে বলে সংগঠনটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।