কিডনিতে পাথর, জেনে নিন কারণ ও প্রতিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক -
আমাদের এখনকার স্বাভাবিক জীবনে নভেল করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। আর এর মধ্যেই অফিস, পড়াশোনা বা বাজার সবই শুরু হয়েছে। তবে আপনি জানেন কি? করোনার এই সময়ে ভুলভাবে জীবন যাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, খাওয়া-দাওয়া ও পানি পানে অনিয়মের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে আপনার কিডনির ওপর।
তাই আসুন জেনে নিন- কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার….
সাধারণত কিডনির সমস্যা হচ্ছে কি না তা বুঝতে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ ঠিক আছে কি না, কোমর বা তলপেটে কোনো ব্যথা হচ্ছে কি না, মূত্রত্যাগের সময় কোনো জ্বালা বা সমস্যা হচ্ছে কি না, এগুলোর দিকেই খেয়াল রাখেন অনেকেই।
সাধারণত, কিডনির যত্নের বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবার অবকাশও রাখেন না অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু কিডনির নানা সমস্যা বিশেষ করে রেনাল স্টোনে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আধুনিক জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি রেনাল স্টোনের অন্যতম কারণ।
তবে, কিডনিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না বা অজান্তেই পাথর জমছে কি না তা টের পেতে গেলে এটুকু সাবধানতাই যথেষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনিতে পাথর জমলে কোমরের পিছন দিক থেকে তলপেট পর্যন্ত তীব্র ব্যথা হতে পারে। আর এটাকে বিদায় করতে না পারলে ঘোর বিপদে পড়তে হবে আপনাকে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, বারবার মূত্রনালি সংক্রমণ কিংবা তলপেটে ব্যথা হলে বুঝতে হবে পাথর বসে আছে কিডনিতে। তবে বেশিরভাগ সময়ে স্টোনের উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গই থাকে না। অনেক সময় স্টোন নিঃশব্দ ঘাতকের মতো চুপচাপ বসে থাকতে পারে। যদি কিডনি থেকে বেরিয়ে পড়ে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালিতে গিয়ে আটকে যায়, তবে চট করে ধরে ফেলা যায় এই গুপ্ত শত্রুকে।
এনসিবিআই বা ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের জীবনের কোনও না কোনও সময় কিডনিতে পাথর হয়। এদের মধ্যে ৫০% ক্ষেত্রে অসুখটা গ্রাহ্য না করায় কিডনি খারাপ হয়ে যায়। তাই প্রস্রাব সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলে বার বার বাথরুমে যেতে হয়। আবার প্রস্রাব চাপার চেষ্টা করলে ব্যথা ও অস্বস্তি শুরু হয়। প্রস্রাব শুরু করার সময় প্রচণ্ড ব্যথা করে। কখনও কখনও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও বের হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে দুর্বল লাগে। আবার অনেক সময় খাবারে অরুচি হয়।
আর এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে আমরা আবার অনেকে ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলি। যার ফলে বিপদে পড়ার আরও বেশি ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসক যদি কিডনি স্টোনের আশঙ্কা করেন তবে অ্যাবডোমিনাল এক্সরে ও প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান করতে হবে। এছাড়া রক্তের কয়েকটি রুটিন পরীক্ষাও করাতে হতে পারে।
অসুখ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিডনি স্টোনের আকার যদি খুব ছোট হয় তবে অনেক সময় পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাবের সঙ্গে রেব হয়ে যেতে পারে আবার নাও পারে।
লিথোট্রিপসি নামে এক বিশেষ পদ্ধতিতে কোনও রকম কাটাছেঁড়া ছাড়াই শক ওয়েভের সাহায্যে কিডনি স্টোন গুঁড়ো করে দেয়া হয়। এরপর প্রচুর পানি ও কমলালেবুর রস খেলে ইউরিন দিয়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া স্টোন বাইরে বেরিয়ে যায়। ১ সেন্টিমিটার থেকে বড় স্টোন যদি পেলভিক অঞ্চলে থাকে সেক্ষেত্রে পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমির সাহায্যে ছোট্ট একটা ছিদ্রের সাহায্যে স্টোন বের করে দেয়া হয়। পিসিএনএল করে স্টোন বের করে দেয়া সব থেকে কার্যকর চিকিৎসা।
যাদের কিডনিতে ২ সেন্টিমিটার আকৃতির স্টোন আছে এবং এর থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে সেক্ষেত্রে ছোট্ট একটি সার্জারির সাহায্যে পাথর বের করাই সঠিক চিকিৎসা। কোমরের পিছনে ছোট ছিদ্র করে টেলিস্কোপ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে পাথর বের করে দেয়া হয়। দিন দুয়েক হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। বাড়িতে ফিরে কয়েক দিনের বিশ্রামের পর স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় সহজেই। করোনা ভাইরাসের ভয়ে কোনও শারীরিক অসুবিধা ফেলে না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।