বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » করোনা পরিস্থিতি : মানবিক সেবায় দৃষ্টান্ত রাখছে কমলনগরের চিকিৎসকরা
করোনা পরিস্থিতি : মানবিক সেবায় দৃষ্টান্ত রাখছে কমলনগরের চিকিৎসকরা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসের সারা দেশে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা। করোনা মানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। ঝুঁকি মানে জীবনের সর্বোচ্ছ চেষ্টা তৎপরতা। করোনা একটি ছোঁয়াছে রোগ। এটি মানুষের মানুষের মধ্যে যেকোন ভাবে ছড়াতে পারে। মানে আপনার থেকে সংস্পর্শে অন্যেরও হতে পারে। তার মানে জীবন যুদ্ধে জেনে শুনে যুদ্ধ করা। আর এ যুদ্ধের সামিল লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিসিৎকরা। তারা জীবনের সবটুকু ঢেলে দিচ্ছে করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবাই। তারা রীতিমত দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাত দিন চরাঞ্চলের ঝড়ের মধ্যেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। নিয়মিত হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাও দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু স্বাস্থ্য সেবাই নয়, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফনে মধ্যরাতে ছুঁটে গিয়েছে এমন নজিরও চোখে পড়ার মত। এমন নজির দেখিয়েছেন ডাক্তার রেজাউল করিম রাজিব। তিনি মধ্যে রাতে করোনা উপসর্গের মৃত ব্যক্তির দাফন পযর্ন্ত করেন। করোনা সেবা দিতে গিয়ে একজন ডাক্তার পর্যন্ত আক্রান্ত হন। তারপরও হাল ছাড়েন নি।
কমলনগর উপজেলায় নারী ও শিশু ডাক্তার সহ ৫ জন আক্রান্ত হয়েছে।আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে নিয়মিত খোঁজ-খবর ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এব্যাপারে আক্রান্তদের পরিবারের লোকজন ও সংস্পর্শে যারা আসছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও প্রবাস থেকে যারা আসছে।রীতিমত খোঁজ খবর নিয়ে তাদের হোম কোয়ান্টাইনে থাকতে অভিযান চালাচ্ছেন।
কমলনগরকে সুস্থ রাখতে এভাবেই দিন রাত কাজ করছেন এখানকার চিকিৎসকরা। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বৈঠক ও আগামী দিনগুলোর কর্মপরিকল্পনা নিয়মিত করে যাচ্ছেন তারা।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা.আমিনুল ইসলাম মন্জু, ডা. রেজাউল করিম রাজিব, ডা. আকিল আল ইসলাম, ডা. ওয়ালি উদ্দিন মাসুদ ও ডা. সাকীর উল ইসলাম করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসময় তারা দেখেছেন মৃত ব্যক্তিদের আপনজনদের মধ্যে করোনা ভীতি ও চরম আতঙ্ক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১২জন চিকিৎসক, ৬ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, এছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারী, নার্স, সিএইচসিপি, ওয়ার্ড বয় সবাই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তারা চিকিৎসায় সেবায় খুব তৎপর।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে প্রায় ১৫০ জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে প্রায় ৪৫ জনের রিপোর্ট এসেছে। করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫ জন।
মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল করিম রাজিব বলেন, এখানকার মানুষের মধ্যে নমুনা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভয় ও আতঙ্ক ছিল। তারা হাসাপাতালে আসতে চাইতো না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়েছে। ডাক্তার দেখলে তারা পালিয়ে যেত। যে নারীর করোনা ধরা পড়েছে তার বাড়িতে তিন বার যেতে হয়েছে। এখন কিছুটা সচেতনতা আসছে। অনেকেই এখন হাসপাতালে এসে নমুনা দিচ্ছে। কমলনগরে নারী ও শিশু ডাক্তার সহ যে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে কোন উপসর্গ ছিল না। তাদের বাড়ি গিয়ে নমুনা আনা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসেন। তবে মানুষেকে আরো সচেতন হতে হবে। করোনা রোধে সচেতনা প্রধান বিষয়।
তিনি আরও জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও স্যাম্পর সংগ্রহ করতে ডাক্তার, নার্সদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কারন সবাই এক সাথে কাজ করলে যেকোন সময় করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে এক জন ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছে। সবাইকে দিয়ে একসাথে কাজ করাতে গেলে বিপরিত হতে পারে। এতে করে চিকিৎসা সেবায় বিপত্তি ঘটতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, করোনার এমন পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে আগের মতই সব চিকিৎসা সেবা অব্যাহত আছে। প্রতিটি ডাক্তার রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করছে।রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে অনেক ধরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেখা যায় অনেক দুর হেঁটে গিয়ে রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। রোগী পালিয়ে গেছে। তাই স্যাম্পর সংগ্রহ করতে ও সচেতনতা বাড়াতে জোর দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরে বলেন, ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজনের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত আছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সংবাদিকরা সহযোগীতা করছেন। করোনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা সর্তক আছি। আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা চলছে। তবে এখানকার অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার অনুপযোগী। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে একটি গাড়ি খুবই প্রয়োজন।
খোলাডাক / এসএস/