বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » ফিচার » ফেসবুকে ছবি দেখে সেই পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সামাজিক সংগঠন বাঁচাও মঞ্চ
ফেসবুকে ছবি দেখে সেই পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সামাজিক সংগঠন বাঁচাও মঞ্চ
আমজাদ হোসেন আমু : পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের আসমানী কবিতার বর্ণনা সদৃশ্য এক পরিবারের ছবি ফেসবুকে দেখে কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছে কমলনগর-রামগতি বাচাঁও মঞ্চ নামে এক সামাজিক সংগঠন।
বুধবার (২২এপ্রিল) সকালে ওই সংগঠনের আহবায়ক ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি আব্দুস সাত্তার পালোয়ানের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন সদস্য মোঃ শাকিল ও সুমন। এ আসমানী পরিবারের বাস লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের চর জগবন্ধু গ্রামে।
বর্তমানে চলছে মেঘনা নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আর ডাঙায় করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধের লকডাউন। ফলে প্রায় অর্ধহার আর অনাহারে দিনাতিপাত করছে নদী পাড়ের মৎস্যজীবি মানুষেরা। এমন একটি চিত্র উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুকে। কমলনগরের স্থানীয় সাংবাদিক আমজাদ হোসেন আমু মঙ্গলবার(২১ এপ্রিল) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে নদীপাড়ের এক পরিবারের একটি করুণ ছবি তার ওয়ালে পোস্ট করেন।
ছবিতে দেখা যায়, মেঘনানদীর পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা এ ঝুপঁড়ির সামনে শিশুকোলে দাড়িঁয়ে আছে এক কিশোরী। পাশেই একটি বিছানার কোণে বসে হাসঁছে এ বৃদ্ধ নারী।
সাংবাদিক আমজাদ হোসেন আমু ছবির টাইটেলে লেখেন, “নদীপাড়ের চেয়ারম্যানরা এদের দিকে একটু তাকাবেন”। ফেসবুকে এ ছবিটি দেখে অনেকেই ওই পরিবারের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে, কমলনগর-রামগতি বাচাঁও মঞ্চের আহবায়ক সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি আব্দুস সাত্তার পালোয়ান পরিবারটি খবর নিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে পৌঁছে দেন কিছু খাদ্য সামগ্রী ।
এসময় পরিবারের প্রধান তাছনুর বেগম জানান, মেঘনা নদী তার বাড়ী ভেঙেছে তিন বার। বারবার ভাঙার কারনে তারা নিরুপায় হয়ে এখন নদীর কোলেই বসবাস করছেন।
এখন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ আর ডাঙায় বন্ধ কাজ। কিন্ত এতদিনেও পায়নি সরকারী কোন সহায়তা। তাদের খবরও কেউ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে ওই আসমানী পরিবার চাল বা খাদ্য সহায়তা পেয়েছে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে, চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এ প্রতিবেদককে জানান, তারা পেয়েছে।
বৃদ্ধ তাছনুরদের পাশের সকল ঝুপঁড়ির বাসিন্দাদের একই অভিযোগ তাদের খবর নেয়নি কেউ। তাছনুরের পাশে দাড়িঁয়ে থাকা কিশোরী মা রোজিনা বেগম জানান, তার কোলের শিশুটির বয়স ৪৭ দিন। করোনাকালেই তার জন্ম। তবুও নাম রেখেছেন, মোঃ আবির।
আবিরের জন্ম নদীপাড়ের এ ডেরা ঘরে। জন্মের পর আবিরকে নিয়ে এখানেই বসবাস। ঝড় বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত আবিরও ভিজে। এতদিন বৃষ্টি না হলেও এখন প্রতিদিনই কালবৈশাখী হচ্ছে। অনেক সময় আবিরকে কোলে নিয়ে কয়েক ঘন্টা পানিতেই থাকতে হয়। শুধু আবিরই না পরিবারের মোট সাত সদস্যকে এখানে থাকতে হয়।
উপার্জনে এখন কেউ নেই। যখন যা পাই তাই খেয়ে থাকি। প্রায় অর্ধহার আর অনাহারে দিনাতিপাত করছি। তিনি জানান, প্রতিদিন অন্তত ৪ কেজি চাউল হলেই তাদের চলে।
শেষে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন আমরা কি চাইবো ঘর না ত্রাণ ? কার কাছে চাইবো ?
কমলনগর-রামগতি বাচাঁও মঞ্চের আহবায়ক এড.আব্দুস সাত্তার জানান, ফেসবুুকে ছবিটি দেখে খুবই খারাপ লাগলো। খুব অসহায় জীবন যাপন করছে এ পরিবার। তাই নিজের পক্ষে যা সম্ভব সামান্য সহযোগিতা করলাম।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, মেঘনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড পুরোপরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে ৪, ৫, ৭ এবং ৮ নং ওয়ার্ডের সামান্য কিছু অংশ বাকি রয়েছে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, ৩ হাজার কেজি এবং ৪ হাজার কেজি হারে ২ বার খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। বুধবার (২২ এপ্রিল) আবার ৫ হাজার কেজি চাউল উত্তোলন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সেগুলো বিতরণ করা হবে।
এছাড়া নদী ভাঙ্গার আগে এ ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার জেলে পরিবার ছিল। যাদের মধ্যে ২২শ জেলে কার্ডধারী হিসেবে এখনো সহায়তা উত্তোলন করছে বলে জানান, চেয়ারম্যান।
খোলাডাক / ডেস্ক/ টিপু