শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » » ডাক্তারদের অবহেলায় আমার স্বামী মরল - ওসি রোকসানা
ডাক্তারদের অবহেলায় আমার স্বামী মরল - ওসি রোকসানা
বিশেষ প্রতিবেদন : এই শুনছ: তোমার মেয়ে নিয়ে এখন কি করবো। তুমি ছাড়া তোমার মেয়ে একা একা খায় না। অথচ এই ডাক্তাররা কোনো ট্রিটমেন্ট দিলো না। পুলিশ এত সেবা দিচ্ছে, অথচ পুলিশ পরিবার আজ সেবা পাচ্ছে না- গতকাল বৃহস্পতিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া স্বামীর লাশের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে এ অভিযোগ করলেন নড়াইলের নড়াগাতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রোকসানা খাতুন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় তার স্বামী রেলকর্মী আহসানুল ইসলামের (৪৮) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সে সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমি এত লোকের সেবা করে বেড়াচ্ছি। অথচ শুধু ডাক্তারের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেল। আমার সন্তানরা এতিম হলো।’
গুরুতর অবস্থার রোগীর অক্সিজেন না দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা (চিকিৎসক/নার্স) কিছুই করেনি। তারা ওয়ার্ডে রেখে চলে গেছে। না কোনো ডাক্তার না কোনো আয়া। আমার দুনিয়াডা অন্ধকার করে দিলো…ডাক্তারদের অবহেলা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা। সে হাসাপাতালে আসতে ভয় পায়। বলছিলো, সবাই আমাকে করোনা রোগী ভাববে। আমি বলেছি করোনা রোগী ভাবে ভাবুক, তুমি যাও। কয়, ডাক্তাররা আমারে কোথায় ফেলায় রাখবেনে। আমি কই, না ডাক্তাররা ফেলায় রাখবে না। কয়. তুমি ফোন করো ফোন করো। আমি বলে দিছি, তারপরও কোনো ডাক্তার আসেনি। একটি ইমার্জেন্সি রোগীকে আইসিইউতে না নিয়ে কিভাবে ওয়ার্ডে ফেলায় রাখে। ডাক্তার আইছে পরে। এসে দেখাচ্ছে যে, আমরা অক্সিজেন দিছি এ দিছি সে দিছি। কিচ্ছু না। কিভাবে একটা মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারে। ও আমাকে ফোন করে বলেছে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমারে বেডে রেখে দেছে। আমি বললাম, আইসিইউতে দিতে বলো। বলতেছে ডাক্তার নাই, ডাক্তার নাই।’
ওসি রোকসানা খাতুন জানান, তার স্বামী আহসানুল ইসলাম বাংলাদেশে রেলওয়েতে বেনাপোলে পি ম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করে তার বুকে ব্যথা ও দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। সে সময় তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার ওসিকে ফোন দিয়ে তার স্বামীকে হাসপাতালে পাঠান। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ তাকে ভর্তি নিয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিটে পাঠায়। সে সময় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক তার ওষুধ লিখে পায়ের কাছে স্লিপ রেখে চলে যান। শ্বাসকষ্ট হলেও স্বামী আহসানুল ইলমামকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি।
রোকসানা খাতুন আরো জানান, পরে ফোন দিলে তার স্বামী ফোন রিসিভ করেননি। সে সময় পাশের বেডের রোগীর স্বজনরা ফোন ধরেন। এরপর তারা চিকিৎসার অবহেলার কথা জানান এবং বলেন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। তারা এটাও বলেন- ওষুধ আনতে হবে। এ সময় পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের তিনি ওষুধ কিনে আনতেও অনুরোধ করেন। পরে তিনি স্বামীর মৃত্যুর খবর পান।
তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কার্ডিয়াক অ্যাটাকে মারা যাওয়া ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা হয়নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীলিপ কুমার রায় বলেন, ‘করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তির পর চিকিৎসক তাকে দেখে চিকিৎসাপত্র দেন। হাসপাতাল থেকে যা সরবরাহ করার তা রোগীকে দেওয়া হয়। কিন্তু বাইরে থেকে ওষুধ আনতে হবে, রোগীর পাশে তার কোনো লোক না থাকায় সেটা আনা হয়নি। তাছাড়া রোগী মাত্র ১০ মিনিট সময় দিয়েছে। ফলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
অক্সিজেন কেন দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অক্সিজেন দেওয়ার দায়িত্ব নার্সের। কেন তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি তা এখনও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে জানাননি।
খোলাডাক /কালেকশন