লাদেনকে ধরিয়ে দেয়া সেই ডাক্তার
অনলাইন ডেস্ক
আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করেছিলেন পাকিস্তানের চিকিৎসক শাকিল আফ্রিদি। কিন্তু তিনি এখন কারাদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এই প্রথমবারের মত ডা. শাকিল আফ্রিদির মামলার আদালতে শুনানি হলো। তবে মামলা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মামলা মুলতুবি করা হয়েছে।
২০১১ সালে পৃথিবীর মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো অভিযুক্ত করা হয়নি।
ড. আফ্রিদিকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় পাকিস্তানে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ডলার - পেশোয়ার হাই কোর্টের দেয়া কারাদণ্ড অনুযায়ী ড. আফ্রিদির প্রতি বছর কারাভোগের জন্য ১ মিলিয়ন ডলার করে - পরিমাণ অর্থ সাহায্য কমিয়ে দেয়।
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ‘দুই মিনিটে’ ডা. আফ্রিদিকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে ডা. আফ্রিদিকে বীর মনে করা হলেও পাকিস্তানিদের কাছে তিনি বিশ্বাসঘাতক।
তার কারণে বাধা ছাড়াই মার্কিন নেভি সিলরা পাকিস্তানের ভেতর প্রবেশ করে টুইন টাওয়ারে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে হত্যা করে তার মৃতদেহ নিয়ে পাকিস্তানের বাইরে চলে যেতে সক্ষম হয়। আর তারপরই কিছুটা অস্বস্তিকর একটি প্রশ্নে উঠে আসে - পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরে ওসামা বিন লাদেনের অবস্থানের বিষয়টি আগে থেকে জানতো কি না।
কে এই শাকিল আফ্রিদি
ডা. আফ্রিদি খাইবারের উপজাতি অঞ্চলের শীর্ষ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত বেশকিছু টিকাদান কর্মসূচির তত্ত্বাবধান করেছেন।
সরকারি কর্মচারী হিসেবে অ্যাবোটাবাদ শহরে একটি হেপাটাইটিস বি কর্মসূচী পরিচালনা করছিলেন তিনি। এই অ্যাবোটাবাদেই অনেকটা সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় ওসামা বিন লাদেন বসবাস করছিলেন।
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের পরিকল্পনা ছিল অ্যাবোটাবাদের ওই বাসার কোনো একজন শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে যাচাই করা যে ঐ শিশুদের কেউ ওসামা বিন লাদেনের আত্মীয় কিনা।
ধারণা করা হয়, ডা. আফ্রিদির একজন কর্মী সেই বাসায় গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু ঐ নমুনা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার অভিযানে কতটা সহায়ক ছিল তা জানা যায় না।
ওসামা বিন লাদেন মারা যাওয়ার ২০ দিন পর ২০১১ সালের ২৩শে মে ডা. আফ্রিদিকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। সেসময় তার বয়স চল্লিশের কোঠায়।
তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। ১৯৯০ সালে তিনি খাইবার মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন এবং তিনি খুবই সাধারণ পরিবারের সন্তান। তাকে গ্রেফতার করার পর থেকে জঙ্গি হামলা হওয়ার আশঙ্কায় তার পরিবার আত্মগোপনে রয়েছে।
আত্মগোপনে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী অ্যাবোটাবাদের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে - ২টি ছেলে এবং একটি মেয়ে, যাদের দুইজন বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, ডা. আফ্রিদি তাদের হয়ে কাজ করেছেন।
পাকিস্তানের এক তদন্ত অনুযায়ী, সিআইএ যখন তাকে নিয়োগ দেয় তখন তিনি জানতেন না যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য কী।
কোন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে?
প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলেও, ২০১২ সালের মে মাসে যখন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, তখন নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-এ-ইসলামকে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি আদালত তাকে শুরুতে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিলেও পরে আবেদন সাপেক্ষে তা কমিয়ে ২৩ বছর করা হয়।
২০১২ সালে জেল থেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে তিনি বলেন যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী তাকে অপহরণ ও নির্যাতন করেছে। একবছর পর তার আইনজীবীদের কাছে হাতে লেখা একটি চিঠি পাঠাতে সক্ষম হন তিনি - যেখানে তিনি দাবি করেন যে তিনি বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন।
কেন এখন তার মামলা আদালতে গড়ালো?
এখন পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলের সীমান্ত অপরাধ বিধি অনুসারে, যেটি আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অধীনে থাকা আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোতে গত বছর পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
সেসব এলাকার উপজাতিদের পরিচালিত আদালত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে, স্থানীয় উপজাতিদের কাউন্সিলের সহায়তায় পরিচালিত হতো এবং তারা যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া মেনে চলতে বাধ্য ছিল না।
কিন্তু গত বছর খাইবার পাখতুনওয়ালার সাথে উপজাতি এলাকাগুলো একত্রিত হয়ে গেলে উপজাতিদের আদালতের মামলাগুলোও পাকিস্তানের আদালতের অধীনে আসে। পরবর্তী শুনানিতে ডা. আফ্রিদির কারাদণ্ডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হতে পারে অথবা বাড়তেও পারে।
গত বছরে পেশোয়ারের একটি কারাগার থেকে পাঞ্জাবের একটি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। তারপর থেকেই এমন আলোচনা তৈরি হয়েছে যে তাকে মুক্তি দেয়া হতে পারে।
জল্পনা রয়েছে অভিযুক্ত আল কায়েদা সদস্য আফিয়া সিদ্দিকি, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কারাভোগ করছেন, তার সাথে বন্দি বিনিময় করা হতে পারে ডা. আফ্রিদিকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা