১৮ বছরের নিচে বিয়ে বৈধ!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি আরবে ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটিতে প্রথমবারের মতো বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হলো। গত সোমবার সৌদি বিচারমন্ত্রী ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. ওয়ালিদ বিন মুহাম্মদ আল-সামানির জারি করা এক পরিপত্রে এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে শর্তে সাপেক্ষে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে বৈধ হবে বলেও এতে বলা হয়েছে।
সৌদি আরবের সব আদালত ও বিবাহবিষয়ক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই পরিপত্র জারি করে তাদের আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে আরো বলা হয়, মন্ত্রী সব আদালত ও কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে এসংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে উঠলে তাতে ‘শিশু সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ সংক্রান্ত কোনো অনুরোধ (১৮ বছরের নিচের হলে) তা বিশেষ আদালতে পাঠাতে হবে এবং তা-ও শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে ১৮ বছরের নিচে যদি কেউ বিয়ে করে, তাহলে তা যেন তার জন্য ক্ষতিকারক না হয়। এ আইন ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
বিচারমন্ত্রী শিশু সুরক্ষা আইনের ১৬/৩ অনুচ্ছেদের নির্বাহী বিধিমালার অধীনে এই পরিপত্র জারি করেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘বিবাহ চুক্তি সম্পাদনের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিশ্চিত করতে হবে যে ১৮ বছরের নিচে ছেলে বা মেয়ে যাকে বিয়ে দেয়া হবে তার যেন ক্ষতি না হয়; যাতে ওই নারী-পুরুষের সর্বোচ্চ স্বার্থ অর্জিত হয়।’
পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, যেসব ঘটক এই বিধান লঙ্ঘন করবেন, তাকে এর জবাবদিহি করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ করে শিশু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে সৌদি আরবের সরকার। সৌদি শুরা কাউন্সিল সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে এই আইন তৈরি হয়েছিল। এতে ১৫ বছর বা এর নিচের বয়সীদের বিয়েকে বাল্যবিয়ে হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
তখন শুরা কাউন্সিলের সদস্য ড. হোদা আল হিলাইসি বলেছিলেন, ‘কোনোভাবেই ১১-১২ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে আপনি মেনে নিতে পারেন না। কারণ তখন বিয়ে কী জিনিস তা সে বোঝে না এবং একটি শিশু বহনের জন্যও তার শরীর উপযুক্ত হয় না। এটা স্বাস্থ্যগত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।’ এই আইনের এক বছরের মাথায় দেশটিতে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হলো।
এই পরিপত্র জারির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে সৌদি আরবের মতামত লেখক (অপিনিয়ন রাইটার) মাহা আল ওয়াবেল টুইটারে বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের (বিয়ের) কাহিনিগুলো খুবই বেদনাদায়ক। এতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভেঙে পড়ে। এমনকি এর চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়।’
সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ নয়
সোমবার সৌদি আরবের এই আইন প্রণয়নের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশটিতে পুরোপুরিভাবে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নিষিদ্ধ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দেশটিতে বাল্যবিয়ে বন্ধের এটি আরেকটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। দুই পক্ষের সর্বোচ্চ স্বার্থের কথা বলে শর্ত সাপেক্ষে ১৮ বছরের নিচে বিয়ের বিধানও রাখা হয়েছে এতে। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ আদালতের আনুমতি নিতে হবে, যা এক ধরনের অগ্রগতি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক এনজিও ‘গার্লস নট ব্রাইড’ বলেছে, সৌদি আরবে এখনো কন্যাশিশুরা বিয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে, যদি তাদের মা-বাবা জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চান তাহলে তা সম্ভব। সূত্র: আরবনিউজ ও দ্য উইক।