ইটভাটায় বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা
রাজধানী ঢাকার পাশে অবস্থিত দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে কর্মরত নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দারিদ্র্যতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইট প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ও এক শ্রেণির দালাল সামান্য মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৯ঘন্টায় একজন পুরুষ শ্রমিক ৪শ’ টাকা আয় করলেও নারী শ্রমিকদের গড় আয় ১০ঘন্টায় মাত্র ২শ’ টাকা। এমনটাই দাবি ইটভাটায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জের সাহেবখালী, শিকারীপাড়া, ইছামতি নদীর পাড় সংলগ্ন সাইলকা এলাকা, চালনাই মৃদ্ধাকান্দা, অন্তরপুর, মহব্বতপুর ও দোহার নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা ইসলামপুর খালপাড় অঞ্চলে অবস্থিত অধিকাংশ ইটভাটায় কর্মরত নারী শ্রমিকের মজুরি খুব সামান্য। ১০ ঘণ্টা কাজ করে তারা পাচ্ছে মাত্র দেড় শ টাকা। প্রতিদিন ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেন তারা। সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাদের। প্রতি হাজার ইট দু-চাকার গাড়িতে ঠেলে নিয়ে যায় মাত্র ৯৫ টাকায়। দুজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৩ হাজার ইট বহন করে থাকেন। গড়ে ১ জন নারী শ্রমিক দেড়’শ থেকে ২শ’ টাকা আয় করে থাকেন।
দোহার ইসলামপুর খালপাড় অঞ্চলে অবস্থিত জয়পাড়া ব্রিকে কর্মরত মহিলা মধ্যবয়সী নারী আছমা বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। বর্ষা মৌসুমে ধান পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে খাব কি, তাই এ কাজ করি।
তিনি আরো বলেন, সর্দার আমাদের নিয়ে আসছে ১৫ হাজার অগ্রিম দিয়ে। ৬ মাস কাজ করলে ৩০ হাজার টাকা পাব। এর মধ্যে খাওয়া দাওয়ার খরচ যায় চলে অনেক টাকা।
এই ইটভাটায় কর্মরত পুরুষ শ্রমিক কালাম (ছদ্মনাম) জানান, ৮ ঘন্টা কাজ করে ৪শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা আয় করেন প্রতিদিন। অথচ সালমা খাতুন তার চেয়ে ২ঘন্টা বেশী শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করে মাত্র দেড়শ’ টাকা পাচ্ছেন।
আর এভাবেই প্রভাবশালী ইটভাটা মালিক ও দালালরা প্রতিনিয়ত শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারী ও কিশোরী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকদের কম মজুরিতে কাজ করাচ্ছে তারা।
সরেজমিনে দেখাযায়, শিকারীপাড়া, চালনাই মৃদ্ধাকান্দা, অন্তরপুর, মহব্বতপুর ও কৈলাইল ইছামতি নদী সংলগ্ন সাইলকা এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অসংখ্য নারী শ্রমিক কাজ করছে। যাদের অধিকাংশের বয়স ১০ থেকে ১৬ বছর।
শিকারীপাড়ায় অবস্থিত একটি ইটভাটায় কর্মরত সাহেরা (১৪) (ছদ্মনাম) বলেন, আমারা অনেক মেয়ে এখানের ৬ টি ইটভায় কাজ করি। গরিব মানুষ কি করে খাব। দিনে ১শ’ দেড়’শ টাকা আয় করে ভাত খাই।
শিকারীপাড়া উত্তর বাহ্রা এলাকায় অবস্থিত এন.বি.সি ও শিকারীপাড়া চকে ডি.এন. কৈলাইল ইছামতি নদী সংলগ্ন সাইলকা জে.বি সি ইটভাটায় অসংখ্য নারী শ্রমিক কাজ করছেন সামান্য মুজরিতে,যারা প্রতি হাজার ইট বহন করে মাত্র ৯৫ থেকে ১শ’ টাকায়। এদের মধ্যে মধ্যবয়সী নারীসহ রয়েছে কিশোরী ও শিশু শ্রমিক। আর এসব ইটভাটায় নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। নেই কোন ধর্মীয় ইবাদতের স্থান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে অসংখ্য পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে নেই এসব দরিদ্র্য নারী শ্রমিকদের কোন তথ্য। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইটভাটা মালিকরা নীরবে চালাচ্ছে নারী শোষণ। প্রতিনিয়ত ঠকছেন এসব নারী শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড রিসোর্স ইন স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট এন পরিচালক অধ্যাপক ড. ফারুক আহম্মদ বলেন, নারী শ্রমিকরা আমাদের দেশ ও সমাজের অংশ। তারা যাতে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শাহিদুজ্জামান বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। অনিয়ম হলে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।