জেলেদের জীবন বদলে দিয়েছে ‘সৌরবাতি’
জুনাইদ আল হাবিব :
জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত জেলে পাড়ার জেলে সম্প্রদায় গোষ্ঠি। নদীতে মাছ শিকার তাদের একমাত্র উপার্জনের লক্ষ। নদীতে মাছ শিকারে তাদের দিন শেষে রাতে অন্ধকারে আলোর একমাত্র উপায় ছিল হারিকেন, কুপি,বোম্বা বাতিসহ অনেক ধরণের হাতে তৈরি ব্যবস্থা। সেখানে প্রযুক্তি তাদের এনে দিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যতিক্রম প্রদ্ধতি ব্যবস্থা। নতুন প্রযুক্তি হচ্চে সৌরবাতি। সৌরবাতি জেলেদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই জেলেরাও।
এক সময় প্রান্তিক জনপদের মানুষের জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। প্রযুক্তি মানেই শহুরে বিষয়- ধারণা ছিল এমন। সেই ধারণা ধীরে হলেও পাল্টাচ্ছে।
উপকূলের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ নদীতে মাছ শিকারে যেত কুপি বাতির আলো জ্বালিয়ে। বাতাসে যেন বাতি নিভে না যায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা করত তারা। স্থানীয় ভাষায় এ পদ্ধতিতে আলো জ্বালানোকে বোম্বা বাতি বলা হয়। কিন্তু তাতেও জেলেরা স্বাচ্ছন্দ্যে রাতের বেলা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারত না। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। জেলেদের এমন অনেক সমস্যা সহজ হয়ে এসেছে প্রযুক্তির কল্যাণে।
জেলেদের হাতের নাগালে আসায় তারাও প্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিকেলের ক্লান্ত রোদ বিদায়ের পর সন্ধ্যার আকাশে আঁধার নেমে আসে। তখনই মিটিমিটি আলোয় জ্বলে ওঠে ভাসমান নৌকায় সৌর বিদ্যু-বাতি। সৌর শক্তির চিকচিকে আলোয় ভরপুর থাকে নৌকার প্রতিটি কোণ। রাতে ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুতি নেয়া, জাল মেরামত করা, নদীতে জাল ফেলা, জাল উঠানো, ইলিশ সংগ্রহ, রান্নার কাজ- সব কিছুতেই জেলেদের সঙ্গী সৌর আলো।
নদীপাড়ে গেলে প্রায়ই শোনা যায়- মধুর সুরে শিল্পী গান গাইছেন। নৌকা থেকেই শিল্পীদের সে গানের আওয়াজ ভেসে আসে। মূলত, সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জেলেরা এখন সাউন্ড বক্সে গানও শুনছেন। শুধু নিজেরাই শুনছেন না, উচ্চ শব্দে অন্যদেরও শোনাচ্ছেন। একদিকে নিজেদের বিনোদনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে অন্যদেরও। শুধু তাই নয়, এক সময় মুঠোফোনে চার্জ দেবার জন্য পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের জন্য দোকানে দোকানে ছুটতে হতো। সে ঝামেলাও সৌর প্রযুক্তি মিটিয়েছে। এই মুঠোফোনের মাধ্যমেই তারা যুক্ত হচ্ছেন অনলাইনে।
মোটকথা বলতে গেলে প্রযুক্তি যেন পুরো পৃথিবী জেলেদের হাতে এনে দিয়েছে। সৌর বিদ্যুতের এমন সংযোগের জন্য গ্রামীণ শক্তি, উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন এবং রিমসো সোলার সংস্থাকে কাজ করতে দেখা যায়। স্থানীয় বাজারগুলোতে সংস্থাগুলোর ডিলাররা কাজ করেন। যে কোন সমস্যায় দ্রুত সমাধানের পথও বের করে দিচ্ছেন ওই ডিলাররা। এতে সৌর শক্তি ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে৷
শুধু যে উচ্চবিত্তের মানুষ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলাসী জীবন কাটাবে, এমন নয়। প্রয়োজনের তাগিদে সৌর শক্তি ব্যবহার হলেও জেলেরা ঝুঁকছেন বিলাসী জীবনে। বৈদ্যুতিক পাখায় গায়ে বাতাস লাগিয়ে প্রশান্তি পাওয়া কিংবা রঙিন ঝিলিক বাতি জ্বালানোর শখও মেটাচ্ছেন তারা। নদীর পাড়ে গেলে নৌকার দিকে চোখ ফেরালে নানা রঙের ঝলমলে আলো চোখে পড়ে। এতে অবাক হতে পারেন। তবে বুঝবেন, জেলেরাও আনন্দে আছে। তারাও মনের সাধ মেটাচ্ছেন হয়তো ওই রঙিন আলোয়।
উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট মেঘনাতীর। এখানে আছে বড় একটি ইলিশ ঘাট। যেখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেদের আসা-যাওয়া। মেঘনাতীরের আকাশে যখন সন্ধ্যা নেমেছে, তখন নৌকার আলোর রেখা ছড়িয়ে পড়ছে নদীর স্বচ্ছ জলে। আর জেলেরা তখন রাতের প্রয়োজনীয় সব কাজ সারছেন সৌর শক্তির আলোয়। এসময় বেশ কয়েকজন জেলের সাথে গল্প হয়। তারা বলছিলেন, এখন আর বাতাসে বাতি নিভে যাওয়ার ভয় নেই। মাছ ধরি, আর ভালোভাবে জীবন কাটাই। আমাদের আয় রোজগারেও অনেক সুবিধা হচ্ছে। এখন আর দুশ্চিন্তায় অন্ধকারে পড়ে থাকতে হয় না আমাদের। ঝড়-তুফানের মধ্যে আমরা আমাদের কাজ করে যেতে পারি। এতেই শান্তি।
খোলাডাক / জেএইচ