সহানুভূতি মানুষের আয়ু বাড়ায়
অনলাইন ডেস্ক
দয়া বা সহানুভূতি মানুষের এমন একটি সহজাত গুণ যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি দীর্ঘায়ু হতে পারেন। এ কথা জানিয়েছেন স্বয়ং বিজ্ঞানীরা।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক কেলি হার্ডিং তার নতুন বই ‘দ্য র্যাবিট এফেক্ট’য়ে বলেন, দয়ালু হবার মাধ্যমে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সর্বোপরি মানুষকে দীর্ঘায়ু করে।
এ সম্পর্কে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বেদারি কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড্যানিয়েল ফেসলার বলছিলেন, ‘আমরা বিষয়টির বৈজ্ঞানিক দিকটি দেখতে চাই। আমরা এর মনস্তত্ত্ব, শরীরবিদ্যা এবং ইতিবাচক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দয়া, সহানুভূতি কিংবা সহমর্মিতার মত বিষয়গুলো নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। গত মাসে প্রবীণ ডেমোক্রেট সদস্য এলিজা কামিংসের মৃত্যুর পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দেয়া ভাষণে এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছিল। ভাষেণে তিনি বলেন, ‘শক্ত মানসিকতার মানুষ হবার জন্য দয়ালু হতে হয়।’
জনপ্রিয় মার্কিন টিভি উপস্থাপক এলেন ডিজেনেরাসও কিছুদিন আগে এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘দয়ালু হওয়া মানে নিজের মতের সঙ্গে যার মিলবে, তার প্রতি দয়ালু হওয়া নয়। দয়ালু মানে সবার প্রতি দয়া বা সহানুভূতিশীল হওয়া।’
বিশেষজ্ঞরা এটা বিশ্লেষণ করে দেখছেন এবং তাদের মতে এটি মানুষের জীবন-মৃত্যুর মতো জরুরি।
ড্যানিয়েল ফেসলারের গবেষণার বিষয় হলো, কীভাবে দয়া ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মানুষকে আরো দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন নির্দয় একটা সময়ে বাস করি। যুক্তরাষ্ট্রে এবং পুরো বিশ্বে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ক্রমাগত সংঘাত বাড়ছে।’
তার মতে, দয়ামায়ার বিষয়টি মূলত একটি ভাবনা, একটি অনুভূতি এবং একটি বিশ্বাস, যা মূলত অপরের ভালোর সঙ্গে সম্পর্কিত। আর নির্দয় হওয়া মানে অসহিষ্ণু মতবাদ, অপরের ভালো সম্পর্কে উদাসীন।
সামাজিক মাধ্যমে ট্রলের শিকার হয়েছেন এমন যে কেউ বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবেন।
ফেসলার মনে করেন, মানুষ এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী আচরণ করে, অন্যের মতামতের মূল্য কম দেয়।
কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য বেদারি ফাউন্ডেশন দুই কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। যে কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করা এবং এ কাজের জন্য নতুন নেতা তৈরি করাই এই ইনস্টিটিউটের প্রধান উদ্দেশ্য। আর সে কাজে বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতার সম্মিলন ঘটনোর চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।
যেমন নৃবিজ্ঞানীরা দেখছেন দয়ার মনোবৃত্তি কিভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
সামাজিক বিজ্ঞানীরা দেখছেন, যারা সাধারণত নির্দয় ব্যবহার করেন, তার পেছনের কারণ কী? অন্যদিকে মনোবিদরা দেখছেন, কিভাবে দয়ালু মনোভাব মানুষের মন ভালো করে বিষন্নতা দূর করে দেয়।
গবেষক ফেসলার মনে করেন, মানসিক চাপে থাকলে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সামাল দেবার ক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে মন ভালো থাকলে মানুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠার মতো কঠিন কাজও সহজে করতে পারে।
আর এ কারণেই বিশ্বে এখন দয়া বা সহানুভূতি দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা