পূজামণ্ডপে বিষাদের ছায়া আজ বিসর্জন
পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষদিন আজ। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব। অশ্রুসজল নয়নে সোমবার ভক্তরা দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গার চরণে অঞ্জলি দিয়েছেন। দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে ছিল কেবলই বিষাদের ছায়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন রামকৃষ্ণ মিশন ও রামকৃষ্ণ মঠ এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন। এদিন শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্তরা নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করেন। কীর্তন-শ্যামা সঙ্গীতের মধুর সুর আর ভক্তদের কলকাকলিতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ।
পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার এলাকায় ভিড় ছিল অনেক। গুলশান-বনানী, কলাবাগান, ঢাকেশ্বরী, রমনা কালীমন্দিরেও দল বেঁধে ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা বয়সী মানুষ। মানুষের ভিড়ে মণ্ডপগুলো পরিণত হয়েছিল মিলনমেলায়।
মাকে বিদায়ের আয়োজনে বিষণ্ণ মন নিয়েই উৎসবে মেতেছিলেন ভক্তরা। দিনভর চলেছে চণ্ডীপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। অনুষ্ঠিত হয় দেবীর মহানবমী পূজা। শাস্ত্রে আছে, নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর শ্রীরামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়।
শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকেন দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়।
১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি। এরপরই ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। সন্ধ্যায় মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আজ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। বিকাল ৩টায় বিজয়া শোভাযাত্রা হবে।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন এবং স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। যার ফল হচ্ছে রোগ-শোক, হানাহানি-মারামারি বাড়বে।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্র্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ : অনেকটা আতঙ্কহীন ও যানজটমুক্ত পরিবেশে এবারের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের পরিবেশ অব্যাহত থাকলে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অধিকতর উন্নয়ন ঘটবে।
গুলশান বনানী পূজা ফাউন্ডেশন : চার ধর্মের চারজন মানুষের উন্মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে সোমবার ব্যতিক্রমী এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গুলশান বনানী পূজা ফাউন্ডেশন মঞ্চে। আলোচকরা নিজ নিজ ধর্মের আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির বিষয় তুলে ধরেন। বিশ্লেষণধর্মী চমৎকার আলোচনায় বিমোহিত হন শ্রোতারা।
বক্তব্য রাখেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মাওলানা জিয়াউল হাসান, রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায়েত পূজারী স্বামী হরি প্রমাণন্দ ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আনোয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সভাপতিত্ব করেন সুবল সাহা।
এর আগে প্রতিদিনের সান্ধ্য আরতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন ও কলাবাগান পূজামণ্ডপেও ছিল নানা আয়োজন।