ভাঙনের মুখে আ স ম রবের জেএসডি
খোলাডেক্স : রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির পর এবার ভাঙনের মুখে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। স্বাধীনতার পরপরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপরীতে গড়ে ওঠা শক্তিশালী এই দলটি নানা সময়ে ভেঙেছে।
ভাঙাগড়ার নানামুখী খেলাধুলার পরও দেশের রাজনীতিতে তিনটি অংশে বিভক্ত হয়ে বিরাজ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এদের একটি অংশ হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
বছর দুই হয় এই দলটি থেকে বের হয়ে আরেকটি অংশ তৈরি করেন বাংলাদেশ জাসদ নামে পৃথক রাজনৈতিক দল। দল ভাঙলেও দু’পক্ষই আছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে।
এর বাইরে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি নামে দলটির আরেক অংশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে মিলে সরকারবিরোধী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে। আর এই জোট গঠনের দেড় বছরের মাথায় এসে ভাঙনের মুখে পড়েছে দলটি।
জানা গেছে, মূলত দলীয় নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দেয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেই জেএসডির শীর্ষ নেতাদের দুই অংশ দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছেন। একদিকে দলটির সভাপতি আসম আবদুর রব।
অন্যদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দু’পক্ষই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (সম্মেলন) পাল্টা কাউন্সিল (সম্মেলন) আহবান করেছেন।
এরই মধ্যে সমঝোতার একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে। এখন অপেক্ষা দলটির আরও একটি ব্রাকেটবন্দি হওয়ার।
সূত্র জানায়, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেএসডির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (সম্মেলন) আহ্বান করা হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই মতভেদ চলছিল দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের গণতান্ত্রিকভাবে সবকিছু করার তাগিদসহ বেশকিছু শর্তারোপ করেন।
আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বাধীন অংশটি সংগঠনে ব্যক্তি ও পরিবারতন্ত্র, কোটারিতন্ত্র ও রাজনৈতিক আদর্শের বিচ্যুতির অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তারা আসম আবদুর রবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিলকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ এই অংশ আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনসহ দলের শীর্ষস্থানীয় ৮ নেতা এক বিবৃতি দেন।
এতে তারা বলেছেন, ‘জেএসডি ঘোষিত ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিল-২০১৯ সম্পূর্ণ অবৈধ। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে কোনো গঠনতন্ত্র উপস্থাপিত ও অনুমোদন হয়নি। জাতীয় পরিষদের সভা ডেকে পরে সব ঠিক করে নেয়া হবে বলার পর চার বছর পার করে দেয়া হয়েছে। অথচ আজও তা করা হয়নি। এর মধ্যে আগের গঠনতন্ত্রকেও লঙ্ঘন করে ৭ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়, যা অনুমোদিত নয় ও সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। এ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি ও দলের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক এমপি এমএ গোফরানকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বহিষ্কার ঘোষণাও অবৈধ। কাজেই এ কাউন্সিল অগণতান্ত্রিকভাবে ব্যক্তি বিশেষের অবৈধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এভাবে চলতে থাকলে দ্বিতীয় রাজনৈতিক ধারার ভিত্তিতে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার দাবির রাজনীতির কবর হবে। অথচ আজ সর্বস্তরে জনগণের অংশীদারিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রশাসন গড়ে তোলা সময়ের দাবি। কয়েক মাস ধরে দলের একটি অংশ স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাতকে গভীর থেকে গভীরতর করে চলছে। তাই দেশে স্বাধীন দেশের উপযোগী রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রশাসন গড়ে তোলার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত ও কনভেনশনে দলের গঠনতন্ত্র ঘোষণা পত্রসহ পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। দলকে ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, কোটারিতন্ত্র ও রাজনৈতিক বিচ্যুতি থেকে মুক্ত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্রচর্চা।
বিবৃতিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি এমএ গোফরান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আতাউল করিম ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া খোন্দকার, দেলওয়ার হোসেন, মোশাররফ হোসেন এবং শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে ‘কয়েক মাস ধরে দলের একটি অংশ স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাতকে গভীর থেকে গভীরতর করে চলছে।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি বিএনপিকে বোঝানো হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে আবদুল মালেক রতন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত। তাদের সঙ্গে জোট গঠন বা সম্পর্ক উন্নয়নকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’
জেএসডি কি ভাঙনের মুখে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি তাদের ডাকা কাউন্সিল মেনে না নিলে দল ভাঙতেও পারে। ভাঙাটাই স্বাভাবিক।’ দল ভাঙার মূল অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দল চলবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠনতন্ত্র মেনে। সেখানে কোনো ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত থাকবে না। দল চলবে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে।’
সূত্র জানায়, এ অচলাবস্থা মেটাতে একটি সমঝোতারও উদ্যোগ নেয়া হয়। জেএসডিকে অখণ্ড রাখতে দলটির সভাপতি আসম আবদুর রবের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী ও দলটির সহসভাপতি তানিয়া রব বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’র একটি উদ্যোগ নেন।
কিন্তু এতে সাড়া দেননি তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অবশ্য এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতি আসম আবদুর রব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।