আমরা দুই ভাই সাত বোন
আমার জন্ম পাবনার চাটমোহর গ্রামে, ১৯৭৪ সালের ১৫ নভেম্বর। যুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, যে কারণে সে সময় সাংসারিক নানা টানাপড়েন চলছিল। গ্রামের মানুষ মনে করত— যুদ্ধ শেষ হয়নি, আবার যেকোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করতে পারে। দুশ্চিন্তার মধ্যেই ছিল সবাই। এগুলো আমার মায়ের কাছে শোনা।
আমার জন্ম বাড়িতেই হয়, দিনের বেলা। অসম্ভব সুন্দর ছিলাম ছোটবেলায়। আমার মা-বাবাকে প্রতিবেশীরা বলত, আমি নাকি তাদের বাচ্চা না, অন্য জায়গা থেকে নিয়ে এসেছে। বয়স অনুযায়ী আমার ওজন, গায়ের রং—সব কিছুই প্রতিবেশীদের অবাক করে দিয়েছে। একটা বয়সে আমাকে সবাই বলত ‘ফরেন বেবি’। সবাই কোলে কোলে রাখত। আমরা সাত বোন। বাবা সাত কন্যার পিতা, তবু আমি ছিলাম তাঁর কাছে স্পেশাল। আব্বাই আমাকে বেশি যত্ন করেছেন।
চাচাকে আমি ডাকি ছোট আব্বা, তিনিই রেখেছিলেন ‘শাহনাজ খুশি’ নাম। আমি নাকি সব সময়ই হাসতাম, কান্না করতাম না—এ কারণেই খুশি নাম। আমার বড় বোনের নাম হাসি, খুশি নাম রাখার পেছনে এটাও একটা কারণ। আমরা দুই ভাই, সাত বোন। বোনদের মধ্যে আমি পঞ্চম। ভাই দুজনই বড়। এক ভাই নাট্যকার হাফিজ রেদু, অন্যজন গ্রামেই থাকেন।
যুদ্ধের পর আমাদের পরিবারের একমাত্র আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছিলাম আমি। বাবার ব্যবসাপাতি, গোলা ভরা ধান—সব কিছু বোমা মেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গিয়েছিল পাকিস্তানিরা। আমাদের কাঠের দোতলা বাড়ি ছিল, বিশাল বাগান ছিল—সবই বিধ্বস্ত হয়েছিল।
অনুলিখন : ইসমাত মুমু