পালিয়ে বিয়ের আইনি জটিলতা ও প্রতিকার
খোলাডেক্স :
দেশের প্রচলিত আইন-আদালত সম্পর্কে যাদের ধারণা কম। এ লেখাটি তাদের কাজে আসতে পারে। লেখাটি উদ্দেশ্য পালিয়ে বিয়ে করতে উৎসাহিত করা নয়, বরং পালিয়ে বিয়ে করার পর আইনি ঝুঁকির বিষয়ে সাবধান করা।
পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে আপনাদের, মুসলিম ছেলে-মেয়েদের অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। যেমন- বিয়ের পরে কোনো সমস্যা হবেকি না..? বিয়েটার বৈধতা হবে কি না…? বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে…? কোর্টে না কি কাজী অফিসে…….?
বিশেষ করে ছেলেরা ভাবে- মেয়ের বাবা যদি নারী নির্যাতনের মামলা করে…? তাহলে কি জেল খাটতে হবে…..? অনেকে ভাবেন- এসব ক্ষেত্রে কোর্ট ম্যারেজ করতে ভাল হবে।
কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের একটু ভুল ধারণা আছে। যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায়। তারা কোর্ট মারেজ করতে যায় বা করতে চায়। অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা। অথবা মাজিস্ট্রেটের সামনে বিয়ে করা। আসলে তা নয়।
কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোনো নোটারী পাবলিকের (সরকারি রেজিস্টার্ড উকিল) কাছে। তিনি আপনাদেরকে (বর-কনে) ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। তার মানে কী দাঁড়ালো?
বিয়ে আপনাদেরকে আগেই করতে হবে। কোথায়? যথারীতি কাজী অফিসে। রেজিস্ট্রি কাবিনমুলে। কাজী অফিসে কাবিন নামায় সই করতে হবে। কাজী সাহেবকে আপনাদের এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাতে হবে বয়স প্রমাণের জন্য। বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে। আর লাগবে দু’জন সাক্ষী। আর ওই কাবিন নামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনি দলিল।
আর নোটারী পাবলিকের কাছে গিয়ে আপনি শুধু ওই দলিলের আরও একটা সম্পূরক আইনি দলিল করে রাখলেন ভবিষ্যতে মামলায় একটু সুবিধা পেতে। তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই। যদি আপনার কাবিন নামা না থাকে। কাবিন নামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবে না। তাহলে বুঝতে হবে কাবিন নামাই সব।
এক পক্ষ হিন্দু বা মুসলিম কিংবা অন্য ধর্মের হলেও, ধর্ম পরিবর্তন না করেই বিয়ে করা সম্ভব। Special Marriage Act-III of 1872 এর আওতায়। এর জন্য কাজীর মত আলাদা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছেন।
বিয়ে হয়ে গেলে অনেক সময় পরে দুই পক্ষের বাবা-মা মেনে নেন,অনেক সময় মেনে নেন না। অনেক সময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন। মামলাগুলো হয় সাধারণত অপহরণপূর্বক ধর্ষণের। এই মামলাগুলোর জামিন বা রিমান্ড শুনানি এবং বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। মামলার ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য এবং আমলযোগ্য, পুলিশ এসব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের অনুমতি ছাড়াই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে।
পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে কিন্তু প্রথমেই জামিন হবে না। আর মানসিকভাবে শক্ত থাকুন, দু’জনেই। মামলা (উক্তরূপ) হওয়ার পর তদন্ত শুরু হবে।জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভিকটিমের (মেয়ের বাবার চোখে মেয়েটি এখানে ভিকটিম)জবানবন্দি দিতে হবে। এটি ২২ ধারার জবানবন্দি, ম্যাজিস্ট্রেট চেম্বারে হয়। কেউ কোনো প্রভাব খাটাতে পারে না।
তবে ছেলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন হলো..
জবানবন্দিতে মেয়েকে অবশ্যই বলতে হবে, ‘আমি স্বেচ্ছায় এ ছেলে ( আসামী)কে বিয়ে করেছি। আমাকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তাহলে মামলায় পুলিশ আর ছেলে বা আসামীদের পক্ষে চার্জশিট দেবে না। আসামিরা অব্যাহতি পেয়ে যাবে।
লেখক: ইশরাত হাসান
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম