তারেক রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির জেলা ও অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন নিয়ে তারেক রহমানের ওপরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে এ বিষয়ে কেউ সরাসরি কথা না বললেও নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দল থেকে পদত্যাগ করছেন। পদত্যাগের মাধ্যমে মূলত বিএনপি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কমিটি গঠন করার আগে দলের হাইকমান্ড জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই আলোচনা ভিত্তিতেই জেলা কমিটিগুলো গঠন করা হতো। কিন্তু বর্তমান সেটা করা হচ্ছে না। আর সেটা না করে তারেক রহমান একক ক্ষমতায় এই কমিটিগুলো ঘোষণা করছেন। যা দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সুবিধাবাদীরা পদ-পদবী পাচ্ছে।
এর প্রতিবাদ হিসেবেই সিলেট ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির ৫ প্রভাবশালী নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন: বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান এবং সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ। তাদের স্বাক্ষরিত পদত্যাগ পত্রটি আজই কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত শুক্রবার সিলেটে জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ২৯ সদস্য বিশিষ্ট সিলেট জেলা এবং ২৭ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
এদিকে কমিটি গঠনের পরপরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সিলেটের বিএনপি ঘরানার রাজনীতি। এনিয়ে শুক্রবার রাতে দলের অভিভাবক হিসেবে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করেন যুবদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এরপর মেয়র আরিফের বাসায় আসেন কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী।
এসময় যুবদলের পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ঘোষিত কমিটি বাতিল না করা হলে গণপদত্যাগের হুমকি দিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দও তাদের সাথে একাত্ম হয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যাগপত্র লেখা হলে এতে স্বাক্ষর করেন তারা।
তবে এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষুদ্র দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। শুক্রবার তারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তখনই আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর পর সিলেট যুবদলের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে সুবিধাবাদী নেতারা এমন কমিটি করিয়েছেন। অথচ যারা সরকারের মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে যুবদলের রাজনীতি করেছে, যারা এই দুঃসময়ে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা নেতা হিসেবে তাদের কোন সদুত্তর দিতে পারছি না, এই দলে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। তাই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইতিমধ্যে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে তা বিএনপি মহাসচিব বরাবর পাঠানো হবে।
অপরদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য ইতিমধ্যে ৫টি কমিটি জমা দিয়েছে। এরমধ্যে থেকে তারেক রহমান একটি কমিটি অনুমোদন দেবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাবি ছাত্রদলের কোন নেতা যোগ্য আর কোন নেতা অযোগ্য, সেটা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানেন না। কারণ এই সংগঠনের সঙ্গে উনার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর ছাত্রদলের একটি সিন্ডিকেট এই সুযোগকে ব্যবহার করছে। এজন্য তারেক রহমানেরও দোষ আছে। কারণ উনি চাইলেই ছাত্রদলের সাবেক নেতারা ঢাবির কমিটি গঠনে সহযোগিতা করতে পারতেন। আর এটা করলে যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হতো না।