মেয়র আরিফসহ বিএনপির ৫ নেতার পদত্যাগ
সিলেট প্রতিনিধি
নেতৃবৃন্দের অগোচরে সিলেট যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিলেট বিএনপির ৫ প্রভাবশালী নেতা পদত্যাগ করেছেন।
ইতিমধ্যে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান এবং সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ।
তাদের স্বাক্ষরিত পদত্যাগ পত্রটি আজই কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে শুক্রবার (১ নভেম্বর) হঠাৎ করে সিলেটে জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ২৯ সদস্যবিশিষ্ট সিলেট জেলা এবং ২৭ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে কমিটি গঠনের পরপরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সিলেটের বিএনপি ঘরানার রাজনীতি। এনিয়ে শুক্রবার রাতে দলের অভিভাবক হিসেবে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করেন যুবদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এরপর মেয়র আরিফের বাসায় আসেন কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী। এসময় যুবদলের পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ঘোষিত কমিটি বাতিল করা হলে গণ পদত্যাগের হুমকি দিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দও তাদের সাথে একাত্ম হয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যাগপত্র লেখা হলে এতে স্বাক্ষর করেন আরিফুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী। ওই সভায় উপস্থিত না থাকলেও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান এবং সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদও এতে স্বাক্ষর করেন।
ওই সভা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সভায় বিএনপির ও যুবদলের অবমূল্যায়িত নেতাকর্মীরা দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে তাদের থামিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেন তারা নিজেরাই দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এমনকি শনিবার তারা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে থাকা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও গণ পদত্যাগ করবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ‘শুক্রবার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে এতে দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের রাজনীতি করা কেউ ঠাঁই পাননি। ঠাঁই পেয়েছেন বিশেষ একজন কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারীরা। এর প্রেক্ষিতে বিএনপির তিন কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ৫ নেতা দলের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে বিকাল ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পদত্যাগপত্র কেন্দ্র বরাবরে পাঠানো হয়নি বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষুদ্র দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। শুক্রবার তারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তখনই আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ আঠারো বছর পর সিলেট যুবদলের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে সুবিধাবাদী নেতারা এমন কমিটি করিয়েছেন। অথচ যারা সরকারের মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে যুবদলের রাজনীতি করেছে, যারা এই দুঃসময়ে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা নেতা হিসেবে তাদের কোন সদুত্তর দিতে পারছি না, এই দলে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। তাই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইতিমধ্যে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে তা বিএনপি মহাসচিব বরাবর পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আঠারো বছর পর গত শুক্রবার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এবং সাবেক বিএনপি নেতা নজিবুর রহমান নজিবকে মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হয়।
এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সিলেট যুবদলের একপক্ষ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।