বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » নদ-নদী | সারাদেশ » মরা খালের ‘প্রাণ’ ফেরানোর দাবি এলাকাবাসীর
মরা খালের ‘প্রাণ’ ফেরানোর দাবি এলাকাবাসীর
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি;
অস্তিত্ব সংকটে মরতে বসেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনা নদী সংযোগ জারিরদোনা খাল। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্বে খালের উপরে বহুতল ভবন, দু’পাশে টিন শেট, আধাপাকা, সেমিপাকা ঘর নির্মান। একসময়ের প্রভাবশালী ৪৪ফুট চওড়া খাল মাত্র কয়েক ফুটে পরিনত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হাজির হাট বাজারে অবস্থিত খালের সংযোগস্থলে দক্ষিণ-উত্তরে প্রায় ১০০ঘরের নির্মান দেখা যায়। এরই মধ্য কিছু বহুতল ভবনও রয়েছে। সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর আগে ৮০জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা হয়। তবে প্রশাসনের খাল দখল উচ্ছেদ এর কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সরেজমিনে আরও দেখা যায়, খালের উপর ময়লা আবর্জনা, টয়লেটের রিং, জরাজীর্ণ ঘর, গাছের গুড়ি, ছোট ছোট কালভার্ট রয়েছে। এতে খালের সংযোগ সরাসরি মৃতে পরিনত হচ্ছে। কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার সীমান্ত এলাকা আলেকজান্ডারের বালুরচর এলাকার জারিরদোনা খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপর থাকা স্লুইস গেটের উত্তর অংশ থেকে সংযোগ খালটি শুরু। এটি উত্তরমুখী হয়ে খায়েরহাটে ইউনিয়ন দিয়ে হাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে বাজারের উত্তর দিক থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে পূর্ব দিকে উপজেলা পরিষদের পাশে গিয়ে শেষ হয়। খালের উত্তর অংশ এবং দক্ষিণ অংশে পূর্বের অবস্থানে থাকলেও হাজিরহাট বাজার সংলগ্ন খালের মাঝখানের অংশটির তেমন কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মনির হোসেন জানান, একসময় মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি এখাল দিয়ে যাতায়াত করতো এবং অতিবৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নেমে যেত। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে খাল সংলগ্ন ফসলি জমিতে খালের পানি দিয়ে কৃষক চাষাবাদ করতেন। মেঘনা নদীর জোয়ারের পানিতে প্রজাতির মাছ নদী-নালা, খেত-খামারে যেত। অথচ খালের সংযোগ মরে দখলে পরিনত হয়েছে। জারির দোনা খালের অস্তিত্ব সংকটে নদীর মাছ এখন আর খালে-বিলে পাওয়া যায় না। গত ১৫-২০ বছর ধরে হাজিরহাট বাজারে থাকা খালপাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় নদীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাজারের অংশের খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। যে খাল দিয়ে এক সময়ে পণ্যবাহী নৌকা চলতো, সে খাল এখন সংকুচিত হয়ে নালায় রূপ নিয়েছে। খালের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উপজেলার হাজিরহাট, চরফলকন, চর জাঙ্গালিয়া, জাজিরাসহ আশপাশের বাসিন্দারা অবৈধ দখলদার, হাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রশাসনকেই দায়ী করা হচ্ছে।
হাজিরহাট বাজারের ইফাজ ফার্মেসীর মালিক স্থানীয় সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম বলেন, খালে ময়লা ফেলার কারণে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়েছে। খালে থাকা ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোথাও আবার পোকা কিলবিল করছে। ফলে স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকির মধ্যে আছে এলাকার লোকজন।বছরের পর বছর ধরে খাল দখল হচ্ছে, কিন্তু কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
বাজার ব্যবসায়ি স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ হাজী মোকাদ্দেস মিয়া বলেন, স্বাধীনতার অন্তত ১০ বছর পরেও এ খাল দিয়ে পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করতো। হাজিরহাট বাজারে সরকারি গুদাম ছিল। গুদামের মালামাল আসতো এ খাল দিয়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলতো, সে খাল এখন নেই বললেই চলে। নদীর জোয়ারের পানির স্রোত ছিল যে খাল দিয়ে, সেই খাল দিয়ে এখন বৃষ্টির পানিও গড়ায় না।
সাক্ এনজিও প্রধান ইউছুফ আলী মিঠু বলেন, খাল উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। বরং তাদের গাফিলতির কারণে দিন দিন অবৈধ দখলদাররা খালকে গিলে খাচ্ছে। দৃশ্যমান এ খালটি বহুতল ভবন এবং স্থাপনার নিচে চাপা পড়ে গেছে। অবৈধ দখলদারদের থেকে এ খালটি উদ্ধার এবং সংস্কার করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি এলাকাবাসীর
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, হাজিরহাটে জারিরদোনা শাখা খালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এ খালের ওপর থাকা অবৈধ ৮০ জন দখলদারদের একটি তালিকা সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে। অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া আছে। খুব শিগগিরই সেখানে অভিযান চালিয়ে খালটি দখলমুক্ত করার কথা জানান তিনি।