নৌকা মেরামতে ব্যস্ত শাহে আলম মাঝি
আমজাদ হোসেন আমু, বিশেষ প্রতিবেদক ;
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর পাড়ে নৌকা মেরামতের কাজ করছে শাহে আলম মাঝি, জাহাঙ্গীর মেস্ত্রী ও নবীর মেস্ত্রী। পুরাতন নৌকায় নতুন কাঠ, ইন্জিন লাগাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরাতন জীর্ণশীর্ণ কাঠের নৌকা মেরামত করছে ৩-৪জন মেস্ত্রী। কেউ কাঠ লাগাচ্ছে, কেউ পেরেক মারছে, কেউ ইন্জিনে কাজ করছে। পুরাতন নৌকা মেরামতো খুবই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। উপজেলার মাতাব্বর হাট মাছঘাটে নৌকা মেরামতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। নদীর সরু খালের মধ্য এলোমেলো নৌকা রয়েছে, জেলে-মাঝিরা জাল বুনা, রান্না, খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত এবং নদীতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নৌকার মালিক শাহে আলম মাঝি জানান, দু’বছর আগে জীর্ণশীর্ণ এই নৌকাটা কিনেন। অনেকদিন পড়ে ছিল, মাঝে-মধ্যে নদীতে মাছ ধরতেন। এবার বর্ষা শেষ হওয়ার কারণে চিন্তা করেন, পুরাতন কাঠগুলো ভেঙে গেছে, পানি উঠে, নৌকাটা মেরামত করা দরকার, তাই গাছ কিনেন, মেস্ত্রী ধরেন, নৌকাটি নতুন-পুরাতন মেরামত করতে প্রায় ৬০-৭০হাজার টাকা খরচ পড়েছে। ৯-১০দিন সময় লেগেছে। গাছ এবং নিজে শ্রম দেয়ার কারণে খরচ কম পড়েছে। এরকম একটা নৌকা তৈরি করতে দেড়-দুই লাখ টাকা খরচ পড়ে। নৌকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ফুট। ১৪ঘোড়া ইন্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। মোটামুটি নৌকা মেরামত শেষ পর্যায়ে, কাজ শেষ হলে ৪-৫বছর আর মেরামত লাগবে না।
শাহে আলম মাঝি আরও জানান, তার বড় আরও একটা নৌকা রয়েছে। নদীতে মাছ ধরে, মাঝে-মধ্যে গহীন সাগরেও যান। মাঝারী নৌকাতে ৬-৭জন জেলে-মাঝি থাকে। আর বড় নৌকা হলে ১০-১২জন থাকে। সবগুলো জেলে দাদনে চলে, কারও ১০হাজার, কারো ২০হাজার, এভাবে ১লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন দিয়ে মাঝি-জেলে রাখতে হয়। কিছু সময় খুব কষ্ট লাগে দাদনের টাকা নিয়ে যখন চলে যান মাঝি-জেলেরা।
তিনি আরও জানান, নৌকা নিয়ে নদীতে বের হলে আয় না হলেও ব্যয় কিন্তু হয়। নদীতে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরি। জীবন যুদ্ধে খুবই অসহায়, যখন গভীর নদীতে অন্ধকারে থাকি, তখন পৃথিবীটা তুচ্ছ লাগে, জীবন ঝুঁকি, পরিবার-পরিজন অসহায় থাকে। মাছ না পেলে খুবই দু:খ-কষ্ট লাগে। প্রতিদিনের মাছের আয়ের কোন হিসাব থাকে না। যতটুকু মাছ পায় তাতে কোনমতে জীবন চলে যায়। তবে মৌসুমে দাদনের টাকা অনুযায়ী আয় না হলে লোকসানে পড়তে হয়। নদীর ব্যবসা লাভ-লোকসানে করতে হয়।
শাহে আলম মাঝির বয়স ৫৫বছর, তার বাবা আব্দুস শহিদ পাটোয়ারী। তিনিও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চালাতেন। বাবার হাত ধরে তিনিও নদীর ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার ৩ছেলে, তারাও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চালান, ২মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। নতুন বাড়ি করেছে, যার নাম- শাহে আলম মাঝি বাড়ি।
কথা বলেন মো.জাহাঙ্গীর মেস্ত্রী, তিনি কাঠ মেস্ত্রীর কাজ করেন, নৌকা, বাড়ি, ঘরসহ যাবতীয় কাঠের কাজ করেন। নৌকা মেরামত তার প্রধান কাজ, প্রতিদিনের তার মজুরী ৮শ টাকা। একটি নতুন নৌকা বানাতে ২০-২২দিনে ৩০-৩৫জন মেস্ত্রী ব্যবহার করেন। মোটামুটি ২৫-৩০হাজার টাকার মধ্যে সাড়ে আটারো হাত লম্বা একটি নৌকা বানানো সম্ভব হয় বলেন জানান।