কেন্দ্রের চিঠিতে বিএনপিতে ক্ষোভ
আমজাদ হোসেন আমু, ভী-ডেস্ক :
লক্ষ্মীপুর-৪(রামগতি-কমলনগর)আসনের আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি চিঠি পান তৃণমুল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতেই তৃণমুল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক) এ চিঠি নিয়ে বেশ সরব আলোচনা-সালোচনার ঝড় উঠে।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, বিগত ১৫-১৬বছর আওয়ামী সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। একাধিক মামলায় জেল খেটেছে, বাড়ি-ঘর হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। দু:সময়ে কেউ খোঁজ রাখেনি। সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান সবসময় খোঁজ নিয়েছে, অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। যখন হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, এখন সু-দিনের কোকিলররা ধরা দিচ্ছে। এসব কোকিলদের ডাকে সাড়া দিবে না তৃণমুল বিএনপি। একটি চিঠি নিয়ে কিছু লোক বেশ সরব হচ্ছে, তারা এতদিন কোথায় ছিলেন..? এসব চিঠি তৃণমুল বিএনপির কর্মীরা মানবে না।
রামগতি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘ ১৬-১৭বছরে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হামলা-মামলায় জর্জরিত শত শত নেতা-কর্মী। প্রতি সপ্তাহে ৪-৫টা মামলার হাজিরা দিতে হয়েছে। কোর্টের বারিন্দায় হাটতে-বসতে কোঁমড়-পা ধরে যেত। তৃনমুল বিএনপির নেতা-কর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল সাবেক সংসদ এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান। তিনি ২০০১সাল থেকে অদ্য পর্যন্ত হামলা-মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের আগলে রেখেছেন। তার ঋণ বিএনপির নেতা-কর্মীরা শোধ করতে পারবে না। গত কিছুদিন যাবত একটা চিঠির কথা শুনতেছি বা দেখছি। তবে এধরণের চিঠি সাধারণ ও হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি মানতে নারাজ।
তিনি আরও জানান, গত ১৭বছর এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান সংসদ সদস্য ছিলেন না। তারপরও তিনি রামগতি-কমলনগরের মানুষের সুখে-দু:খে পাশে ছিলেন। তার নেতৃত্বে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সজাগ ও শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম কাদের জানান, আওয়ামী হাসিনা সরকারের আমল ছিল হামলা-মামলার আতুরঘর। কমলনগরে ৭১মামলা হয়েছে, অসংখ্যক নেতা-কর্মীর বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে। বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেনি। এসময়ে সংসদ সদস্য না হয়েও এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান নেতা-কর্মীদের আর্থিক-মানসিক সার্পোট দিয়েছেন। তিনি না থাকলে তৃনমুলে বিএনপির দুর্দশা সৃষ্টি হত। হাসিনার পতনের পর অনেকে সরব হচ্ছে, তারা এতোদিন কোথায় ছিলেন..? তাদের এসব চিঠি বিএনপি মানবে না।
উপজেলা বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানান, রামগতিতে ২৯মামলায় ৪৫০০ আসামী, কমলনগরে ৭১মামলায় প্রায় ৭৫০০ আসামী করা হয়েছে। মামলাগুলোর মিথ্যা বানোয়াট। সবগুলোর মামলা খালাস করতে জোর দাবি জানান তৃনমুল বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রের চিঠি নিয়ে তৃণমুল বিএনপির কিছু কর্মী ফেইসবুক ওয়ালে স্ট্যাটার্স ও কমেন্টেস করেন- ফিরোজ আলম লিখেন- “একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অনেকে আসন ভাগ করে ফেলছেন যা ভিত্তিহীন! কাউকে সহযোগিতা করার কথা বলা আর আসন ভাগ করা এক নয়”। আকতার মাহমুদ লিখেন-”বিগত ১৭ বছরে যেখানে আন্দোলন সংগ্রাম সেখানে ই আমরা রাজপথে ছিলাম আপনার নেতৃত্বে, সু-সময় আর দুঃসময় বুজিনা আমরা আছিতো আছিই, আপনি ছিলেন-আপনি আছেন-আপনি থাকবেন”। রাকিবুল হাসান লিখেন- কোন ধরনে বিভ্রান্তি তে কেউ কান দিবেন না,ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনো অনেক পথচলা বাকি। সাবেক সংসদ এবিএম আশরাফ উদদীন নিজান (রামগতি ও কমলনগর) বিএনপির অবিভাবক। ওনার নির্দেশ ক্রমে আমরা ঐক্য বদ্ধ থাকব। দীর্ঘ ১৭ বছরের যুদ্ধে যিনি বট বৃক্ষের মত সকল নেতা কর্মীদের আগলে রেখেছেন, ওনার হাতেই বিএনপি পরিবার নিরাপদ। আব্দুল মান্নান লিখেন- যারা টেংরা মাছের মতো লাফালাফি করতেছেন তারা লাফালাফি বন্ধ করেন! আমার নেতা আশ্রাফ উদ্দিন নিজান সাহেব ভালো মনের মানুষ তাই এখনো রাতে ঘুমাতে পারছেন(সাবধান)। এভাবে অসংখ্য আইডিতে ক্ষোভ ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
জানা যায়, ২০১৮সালে জাতীয়তাবাদী দল সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদদিন নিজানকে বাদ দিয়ে জোটভুক্ত নেতা আ স ম আব্দুর রবকে ধানের শীষ প্রতিকে নমিনেশন দেয়। এতে বিএনপির বেশিভাগ নেতা-কর্মী ভোট যদ্ধে অংশ নেননি। তখন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মেজর(অব)আব্দুল মান্নান জয়ী হন। এবারও যদি বিএনপির হাই কমান্ড নমিনেশন জোটভুক্ত নেতাদের দেয়, তাহলে তৃনমুল বিএনপি দল থেকে আস্থা হারাবে। তারা সরাসরি বিএনপির নমীনেশন নেতা বা মনোনয়ন থেকে সরে গিয়ে হতাশায় বিপর্যস্ত হবেন। তাদের দাবি, সরাসরি দলভুক্ত নেতাকে মনোনয়ন দিলে আসন নিশ্চিত জয়ী হবে।
চিঠি সূত্রে জানান, গত ২২অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপির প্যাডে যগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদককে প্রেরণ করা হয়। এতে লেখা ছিল, লক্ষ্মীপুর-৪(রামগতি-কমলনগর)সংসদীয় আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল জাসদ(জেএসডি)র সভাপতি আ স ম আব্দুর রবকে তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্দেশ প্রদান করেন।
জাসদের সভাপতি আব্দুল মোতালেব জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপি জোট নেতাদের আসন নিশ্চিত করেছে মর্মে চিঠি দিয়েছে। তবে চিঠিতে উল্লেখ্য রয়েছে জাসদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিএনপির নেতা-কমীদের সার্বিক সহযোগিতা করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান জানান, কেন্দ্রের চিঠিতে নির্বাচন বা ভোট কেন্দ্রীয় কোন শব্দ বা বাক্য লেখা নেই। চিঠিতে জোটভুক্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল জাসদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-৪( রামগতি-কমলনগর) বিএনপির খাটি, এখানে বিগত ২০০১সাল থেকে গত ২৪বছর নেতা-কর্মীদের সাথে ছিলাম, তাদের পাশে থেকে হামলা-মামলায় সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করেছি। দল এবং জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে এমন প্রত্যাশা করছি।
এবিএম আশরাফ উদদিন নিজান, সাবেক চেয়ারম্যান মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সহ- শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক কেন্দ্রীয় বিএনপি, সাবেক দু’বারের সংসদ সদস্য লক্ষ্মীপুর-৪।