শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » অপরাধ ও দুর্নীতি » কমলনগরে বাবা-ছেলের কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদ
কমলনগরে বাবা-ছেলের কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদ
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি;
মেঘনা নদীর ভাঙনে কবলিত একাধিক পরিবারের সাথে জমি বিক্রি করে রেজিস্ট্রী না দিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা অভিযোগ উঠে মো.হানিফ মিয়া বিরুদ্ধে। তিনি ‘ভূমি দস্যু হানিফ’ নামে বেশ পরিচিত। তার ছেলে মো.হারুন মেম্বার নির্বাচিত এবং উপজেলা কৃষকলীগের দায়িত্বে থাকায় তার আধিপত্যে প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। ছেলে হারুন মেম্বার, আওয়ামী লীগ করে তার ভয়ে গত ১০-১২বছর কোন ভুক্তভোগী মুখ খোলেনি। এছাড়াও ছেলে মো.হারুন মেম্বারের বিরুদ্ধে দোকান ঘর দখল, টাকা নিয়ে ভাতা কার্ড করিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নে নদী ভাঙন কবলিত একাধিক পরিবার মো.হানিফ মিয়া নামে ব্যক্তির কাছ থেকে বসতি জমি কিনে প্রতারিত হন। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, বিগত ১০-১২ বছর পূর্বে মেঘনার ভাঙনে বাড়ি-ঘর হারিয়ে নি:স্ব হয়ে চর কাদিরা মো.হানিফ মিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৩৫-৪০ পরিবার জমি ক্রয় করে। জমির টাকা দিয়েও তারা রেজিষ্ট্রী নিতে পাচ্ছে না। মো.হানিফ মিয়া বিভিন্ন তাল-বাহানা দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রী দিচ্ছে না। ছেলের প্রভাব তার প্রতারণার মুল হাতিয়ার।
আলী হোসেন সিকদার জানান, দীর্ঘ ১০বছর আগে মেম্বার হারুনের বাবা মো.হানিফের কাছ থেকে ৬০,০০০টাকা জমি কিনে বাড়ি করেন। কিন্তু তিনি জমির কোন রেজিষ্ট্রী দিচ্ছে না। তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, কবে মরে যান, তবে শেষ বয়সে জমির রেজিষ্ট্রী যাচ্ছেন তিনি। আবুল কালাম জানান, তিনি মো.হানিফের কাছ থেকে ১২০০০০টাকা দিয়ে ১২-১৩বছর আগে জমি কিনেছেন। কিন্তু জমির রেজিস্ট্রী দিচ্ছে না। আসুরা বেগম জানান, তিনি হানিফ মিয়াকে বলেছেন তাকে যেন খারাপ জমি না দেয়। তারপরও খারাপ জমি দিয়েছে। তাকে ১৯০০০০টাকা দিয়েছেন। তিনি স্বামী ছাড়া ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনমতে বেঁচে রয়েছেন। তার সাথে হানিফ মিয়া খুব খারাপ মানুষ। সে তারে খারাপ জমি দিয়েছে, এখন ১২-১৩ গেলেও রেজিষ্ট্রী দিচ্ছে না।
স্থানীয়রা আরও জানান, তার ছেলে আওয়ামী লীগ এবং মেম্বার হওয়ার পর থেকে তার বাবা মো.হানিফ নদী ভাঙা মানুষের সাথে প্রতারণা শুরু করে। তিনি অসহায় মানুষরে ভূয়া দলিল দেখিয়ে চরের খালি চাষের জমি বিক্রি করে ১০-১২ বছর যাবত রেজিষ্ট্রী দিচ্ছে না। মানুষগুলো বাড়ি-ঘর নির্মান করে থাকতেছে। তার ছেলের ভয়ে তাকে(হানিফ মিয়া)কে কিছু বলতে পারছে না। তিনি মানুষের কাছ থেকে জমির টাকা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। প্রায় ৩৫-৪০টা পরিবারের প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি বিক্রি করেন তিনি। জমি রেজিষ্ট্রী নিতে পারেনি অনেকে মারাও গেছে। মো.হানিফ মিয়া পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে তারপরও কাজ হচ্ছে না। মানুষ নিরুপায় দিশেহারা জমিতে বাড়ি-ঘর করেছে, কিন্তু রেজিষ্ট্রী নিতে পারেনি। তারা জমি রেজিষ্ট্রী ও বাবা-ছেলের বিচার চাচ্ছে। বাবা-ছেলের প্রতারণার রাজত্ব বেগে চলছে। তারা বাবা-ছেলে সুযোগে ভূমিহীন ও অসহায়দের বিপদে ফেলতে ফাঁদ পেতে থাকে।
মো. হানিফ মিয়া জমির টাকা নেওয়া কিছু ব্যক্তির তথ্য, আলী হোসেন সিকদার ১২০,০০০, সাহাব উদ্দিন ৬০,০০০, মো.ইসমাইল ১৩,৫০০০, সাফিয়া ১২০,০০০, আয়েশা বেগম ৬০,০০০, জালাল ৬০,০০০, আসুরা ১৯০,০০০, আবুল কালাম ১২০,০০০, তাছনুর ১৬০,০০০টাকা এবং আবুল বাসার, চিডু ব্যাপারী, ছালা উদ্দিন, জালাল আহমেদরাও টাকা জমি কিনে টাকা দেন। এভাবে কলোনীতে বসবাস করা প্রায় ৩৫-৪০ পরিবার কোটি টাকা দিয়েছে প্রমাণ রয়েছে।
এছাড়াও মো.হারুন মেম্বার, আলী হোসেনের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ডে ১১৫০০, সাফিয়া বেগমকে চালের কার্ডে ৪০০০, ইয়ানুর চালের কার্ডে ৭০০০, রানু বেগম বিধবা কার্ডে ৫০০০ টাকা নেন। এভাবে অসংখ্য অসহায় মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দিবে টাকা নেন তিনি।
মেঘনার ভাঙনে কবলিত মো.হারুন জানান, তিনি বাদাতলী বাজারে দেড় ডিসেম জমিতে ২টা দোকানঘর করেন, আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে মো.হারুন মেম্বার ভিটিগুলো দখলে নেন। তিনি স্থানীয় সাহেবের হাট ইউপি সদস্যের দায়িত্বে রয়েছে।
আব্দুল খালেক জানান, তার ২৩৪৬ খতিয়ানে ৯ডিসেম জমিতে ৮টি ভিটে ৪টি দোকান ঘর ছিল, হারুন মেম্বার জোর করে আওয়ামী লীগে প্রভাব ও স্থানীয় মেম্বারে আধিপত্য বিস্তারে ঘরগুলো দখলে নেন। তার সব ভাড়াটিয়া বের করে দেয়। ভুয়া দলিল দেখিয়ে তহশিলে নামজারি বন্ধ রাখতে নোটিশ করেন। ভিটিগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০লাখ টাকা রয়েছে। শাহাব উদ্দিনের ছেলে জানান, হকসাব বাজারে মো.হারুন মেম্বার ৩টি দোকান ঘরের ভিটি বিক্রি করে ৭লাখ ৫০হাজার টাকা, ভিটি গুলো দখল দিচ্ছে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, মো.হারুন মেম্বার গোপনে জেলে কার্ড করিয়ে দিবে ৩০০০টাকা নেন। তার হাত দিয়ে আরও ৬-৭জন থেকে ২৩০০০টাকা করে নেন। আরও কিছু ব্যক্তির একাধিক অভিযোগ রয়েছে হারুন মেম্বারের বিরুদ্ধে।
মো.হারুন মেম্বার জানান, তাদের বাবা-ছেলের মান সম্মান নষ্ট করতে কিছু সুবিধাবাদী মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে। তারা এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নন। তারা অল্প কিছু টাকা নিয়ে কলোনীতে মানুষকে থাকতে দিয়েছেন। মো.হানিফ মিয়া জানান, তার ছেলে মো.হারুন মেম্বার মাদ্রাসায় পড়েছে, সে জামায়াত করে, কিছুদিন আওয়ামী লীগ করেন। তার ছেলের সম্মান ক্ষুন্ন করতে প্রতারণার অভিযোগ করেন।
মো.হারুন মেম্বার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, বর্তমান কৃষক লীগের যুগ্ম-আহবায়কের দায়িত্বে রয়েছে। এবং চর কাদিরা ইউপির ৯নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে চেয়ারম্যান প্যানেল-২ এর দায়িত্বে রয়েছে। মো.হানিফ মিয়া চর কাদিরা মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
উপজেলা থানা তদন্ত কর্মকর্তা মো.কামরুল হাসান, জমি সংকান্ত বিষয়ে এদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।