বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » » কারো হাত উড়ে গেছে, কারো পা
কারো হাত উড়ে গেছে, কারো পা
নিজস্ব প্রতিবেদক
কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। চেহারা ঝলছে গেছে। ছোপ ছোপ কালচে তাজা রক্ত রাস্তায় গড়াচ্ছে। বিভৎস এ দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরোণের পর সরেজমিনে ঘুরে। এ ঘটনায় পাঁচ শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৮ জন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর।
নিহতরা হলেন- রমজান (৮), নূপুর (৭), শাহীন (৯), ফারজানা (৬) এবং অজ্ঞাত আরো দুইজন।
আহতরা হলেন- মিম (৮), সিয়াম (১১), মোস্তাকিন (৮), অজুফা (৭), তানিয়া (৭), জামিলা (৮), সোহেল (২৫), জুয়েল (২৯), জান্নাত (২৫), নেহা (৮), অর্নব (১০), জনি (৯), মোরসালিন (১০), অজ্ঞাত আরো পাঁচজন।
আহত সাত শিশুসহ ১৪ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। বাকিদের অন্যান্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেলে মনিপুর স্কুলের রূপনগর শাখার বিপরীত দিকে ১১ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে বলে রুপনগর থানার পরিদর্শক অপারেশন মোকাম্মেল হক জানান।
তিনি বলেন, এক বেলুন বিক্রেতার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো অনেকে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, এক নারী ও তিন শিশুসহ চারজনকে মৃত অবস্থায় এই হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হয়। এ চারজনের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। যে দু’জন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা বিপদমুক্ত।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। আহত ও নিহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
আনিসুর রহমান নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রূপনগর আবাসিক এলাকার শেষ সীমানায় সাইকেলে করে বেলুন ফোলানোর সিলিন্ডার নিয়ে একজন বেলুন বিক্রি করছিলেন। এসময় অনেক শিশু ও নারী আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে তাদের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনায় এক নারীর ডান হাত উড়ে যায়। এছাড়া বেলুন বিক্রেতাসহ আরো তিনজন গুরুতর আহত হন।
ফায়ারসার্ভিস সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সেখানে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন হোসেন। তিনি রূপনগরের ১১ নম্বর সড়কের ফজর আলী মাদবরের ছেলে। কামরুল মাদবরের বস্তির সামনে বসে ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলেন তিনি। জানতে চাইলে হোসেন বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টা বা পৌনে ৪টা হবে। ভ্যানে করে বেলুন নিয়ে আসে এক লোক। মাঝেমাঝে সে আসে। আমার ঝালমুড়ির পাশে এসে দাঁড়ায়, আমি তাকে সরিয়ে দেই। বলছি দূরে দাঁড়াও। এরপর সে ১১ নম্বর সড়কের মুখে লোহার গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। এসময় কয়েকটা বাচ্চা এসে তাকে ঘিরে ধরে। এর ৫/৬ মিনিট পরেই বিকট শব্দ। সব অন্ধকার হয়ে গেল। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ছাইয়ের মতো ধোঁয়া। আমি দৌড়ে উত্তর দিকে যাই। পরিষ্কার হতে প্রায় ৩/৪ মিনিট লাগে। শিশুদের চিৎকার শুনতে পাই। ধোঁয়া শেষ হলে এসে দেখতে পাই, লোহার গেটের সামনে রক্ত। শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ লাফাচ্ছে। আমি চিৎকার দিয়ে মানুষ ডাকি। এরপর ১৫/২০ মিনিট পর দেখি পুলিশ আসে। তারপর ফায়ার সার্ভিস। তারা এসে লাশ তুলে নিয়ে গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর বেলুনওয়ালা ভ্যানের কাছ থেকে ছিটকে প্রায় ২০ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাশের টিনসেড ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিদা বেগম নামে এক নারী দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই বসে পিঠা বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, আমি ঘরে আসছি, এরমধ্যে ঠাস করে শব্দ। সব ধোঁয়া হয়ে যায়। আমার ছেলে আমাকে ডাকতে থাকে। আমি অন্ধকারে বের হতে পারছিলাম না। এরপর আমি নেমে দেখি রাস্তায় বাচ্চাদের লাশ পড়ে আছে। কেউ আহত হয়ে পড়ে আছে। আমার ভাগ্নে বউ জান্নাত পড়ে আছে, সে ধড়ফড় করতেছে। তার হাত ছিঁড়ে গেছে। আমি গিয়ে ধরলাম। এরপর আরও লোক আসে