বিদ্যুৎ সংকটে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি-
টানা বিদ্যুৎ সংকট বা লোডশেডিং জনজীবন অতিষ্ঠ্য ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক ও চলমান এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার্থীরা। প্রায় ২হাজার পরীক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। এরা গ্রামীন এলাকা ও বাসা-বাড়িতে পড়া-লেখা করতে পারছে না। প্রযুক্তির যুগে পড়া-লেখায় বিদ্যুতের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে লেখা-পড়ায় মন দিতে পারছে না তারা।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানান, রামগতিতে চলমান মাধ্যমিক কলেজ শাখায় ১০৩৩জন ও আলিম মাদ্রাসায় ২১৫জন পরীক্ষার্থী এবং কমলনগরে মাধ্যমিক কলেজ শাখায় ৭১৫জন ও আলিম মাদ্রাসায় ১৪৪জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
স্থানীয় জৈনক শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক দিনে ২৪ঘন্টায় মাত্র ৩-৪ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এতে পড়া-লেখায় মারাত্মক সমস্যা ও জটিলতা বাড়ছে। পড়ার টেবিলে বসা যাচ্ছে না। প্রচুর গরম ও খরতাপ। গায়ে কোন পোশাক রাখা যাচ্ছে না। বই-খাতা ঘামে ভিজে যাচ্ছে। অন্ধকারে পড়া বা লেখা যাচ্ছে না। রাত এবং দিনের চিত্র একই রকম। বিদ্যুৎ মাঝে-মধ্যে দেখা যায়। তবে জ্বলছে আর নিভছে। অতিরিক্ত লোডশেডিং চলছে। পরীক্ষার পড়া পড়তে পারছি না।
স্থানীয় গ্রাহকরা জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং গনগন হচ্ছে। গত কয়েক দিনে রাত-দিন ৩-৪ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ফ্রিজে কিছু রাখা যাচ্ছে না। বাচ্চারা পড়া-লেখায় টেবিলে বসতে পারছে না। গত কয়েক মাসে টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ্য দেশের মানুষ। তাপদাহে বিদ্যুৎ সংকট বা লোডশেডিং কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। মাত্র কয়েক ঘন্টার বিদ্যুৎ সংযোগে জনজীবনে নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে।
শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুৎ থাকে না। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ ছাত্র-ছাত্রীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে গরমে লেখা পড়া করছে। বিদ্যুৎ থাকেই না। এভাবে চললে সব-শ্রেণি পেশার মানুষ বিপদগ্রস্ত হবে।
রামগতি-কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে উপছে পড়া রোগীদের বেহাল দশা দৃশ্যমান হয়। দেখা যায়, বিদ্যুৎ সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিশু, বৃদ্ধ, বয়স্ক রোগীরা। ডাক্তার-নার্সরা বিদ্যুৎ সংকটে চিকিৎসা সেবায় রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি চালাতে পারছে না। বিদ্যুৎ বিপাকে রোগীরা জটিল সমীকরণে পরছে।
জৈনক রোগীরা জানান, হাসপাতালে বিদ্যুৎ থাকে না। কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। বিদ্যুৎ সংকটে হাসপাতালে থাকা খুবই মুশকিল। রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি চলে না। অনেক বেগ পোড়াতে হয়। শিশু রোগীদের নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা জনিত রোগের জন্য গ্যাস, নেবুলাইজার, অক্সিজেন দেয়া যাচ্ছে না। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ধুকে ধুকে কষ্ট পাচ্ছে রোগীরা।
রামগতি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশিস মজুমদার জানান, বিদ্যুৎ সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম স্থির হচ্ছে। নেবুলাইজার, অক্সিজেন, সার্জারি, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি সব কিছুতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। হাসপাতালে ২৪ঘন্টা বিদ্যুৎ প্রযোজন। তবে বিদ্যুৎ সংকট বা লোডশেডিং খুবই সমস্যায় পেলছে। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে মাসিক মিটিং কথা বলেও লাভ হচ্ছে না।
সামাজিক যোগাযোগ ফেইজবুকে বিদ্যুৎ লোডশেডিং নিয়ে নানারকম বাজে মন্তব্য দেখা যাচ্ছে। গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা অফিস ঘেরাও দিবে হুমকি দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটে হাসপাতাল, মিল, কারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এনজিও কার্যক্রম অচল হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটে চলমান কাজ স্থির হচ্ছে। ওয়াকসর্প ব্যবসায়ী মো.বেলাল মেস্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ সংকটে প্রতিদিন লোকসান দিয়ে জেনারেটর জ্বালিয়ে কাজ করছি। এতে প্রচুর তৈল খরচ হচ্ছে। কাজে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি দেখাচ্ছে। এভাবে বিদ্যুৎ সংকট বা লোডশেডিং হলে ব্যবসা টিকানো যাবে না।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানান, কমলনগরে ৫৬হাজার গ্রাহক রয়েছে। প্রতি গ্রাহক বা মিটার বরাদ্দ ১০মেগাওয়াট থাকলে পাচ্ছে মাত্র ৩মেগাওয়াট। যা তুলনায় একেবারেই কম। চাহিদা মতে ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে। রামগতিতে ৬৫হাজার গ্রাহক রয়েছে। মিটার প্রতি ১৪মেগাওয়াট বরাদ্দ থাকলেও পাচ্ছে ৩-৪মেগাওয়াট।
কমলনগর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কর্মকর্তা (ডিজিএম) নিতেশ শাহা জানান, অতিরিক্ত তাপদাহে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। গ্রাহকরা বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ খরচ অতিরিক্ত করছে। এসি, ফ্যান ও এয়ারকুলা জ্বালিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রন করছে। বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রতি প্রযোজন ১০মেগাওয়াট, সেখানে পাচ্ছে মাত্র ৩মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। যার কারণে গ্রাহক সেবায় বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে কাজ চলছে। খুব শ্রীর্ঘ সমাধান হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রন্জন দাস জানান, বিদ্যুৎ সংকট জাতীয় ভাবে হচ্ছে। প্রতি মিটারে ১০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার, অথচ পাচ্ছে মাত্র ৩মেগাওয়াট। তাহলে তো বিদ্যুৎ সংকট থাকবেই। তারপরও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে লোডশেডিং কমাতে চেষ্টা চলছে।