মেঘনার ভাঙন রোধে কাজে স্বচ্ছতা কতটুকু..!
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে লক্ষ্মীপুরের (রামগতি-কমলনগর) উপজেলার প্রায় ৩৭ কিলোমিটার পথ মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে কবলিত। মাঝে মধ্যে কিছু ভাঙন রোধে কাজ চলমান দেখা যাচ্ছে। সরকার প্রায় ৩১ শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এতে স্থানীয় ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্যাকেজ আকারে ঠিকাদার নিয়োগ করেন। ১শত প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। তবে গত দেড় বছর গেলেও কাজের নমুনা দৃশ্যমান চোখে পড়েনি। মাত্র কিছুদিন যাবত কিছু ঠিকাদার তার সাধ্যমতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে। কাজের আকার, ধরণ, বালু, জিও ব্যাগ এসব সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা স্থানীয় জনগন বুঝতেছে না। তারা বুঝে ভাঙন থেকে রক্ষা দরকার। জনগনের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ঠিকাদারগণ..। অনেক ঠিকাদার কিছু কাজ করে সরে গেছে। নাম মাত্র কাজ করছে।
গত কয়েক মাস যাবত প্যাকেজের কিছু ঠিকাদার তাদের সুবিধামতে কাজ করছে। তারা কতটুকু কাজ করছে তা শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ড জানে। জিও ব্যাগ, বালু, বস্তা ডাম্পিং এসব দিকগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড তদারকি করছে। এখন প্রশ্ন.. যারা কাজ করছে. কতটুকু সঠিক, কাজের পারমিট ও স্ট্রেটমেন্ট মতে করছে..?। এটা সাধারণ মানুষ বুঝবে না। যতক্ষণ তাদের ম্যানুয়ালি বুঝানো যাবে না। বুঝা-বুঝিতে প্রায় কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে..।
উপজেলার মতির হাট এলাকা থেকে রামগতির বর্ডার পর্যন্ত গুটিকয়েক ঠিকাদার কাজ করছে। তাদের কাজের ধরণ, বাজেট, আকার-আকৃতি কিছুই ধরা যাচ্ছে না।
গত কিছুদিন যাবত মেঘনা নদীতে চিংড়ির পোনা (বাগদা)মাছ ধরছে স্থানীয় জেলেরা। তারা এগুলো ধরতে ছোট ছোট জাল ব্যবহার করছে। ভাঙনের কাছ থেকে মাছগুলো ধরছে। মাছ গুলো ধরতে গেলে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা বস্তার গুলো খোঁচায় ফেটে যাচ্ছে। এতে ডাম্পিং জিও ব্যাগ থেকে বালু সরে যাচ্ছে। যার কারণে বস্তা সরে পাড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। ভাঙন কবলিত এলাকা জিও ব্যাগ শূণ্য হয়ে ভাঙনে পরিনত হয়।
নদীর পাড়ে হেঁটে সরেজমিনে দেখলাম, বাগদা চিংড়ি ধরা স্থান এবং না ধরা স্থানের জিও ব্যাগ ডাম্পিং বস্তা গুলো ফেটে বালু শূন্য দেখাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন..! বাগদা চিংড়ি ধরা জালে কি বস্তা ফেটে যাচ্ছে..? না জিও ব্যাগের বস্তা ও বালু নিম্নমান..? কতটুকু নিশ্চিত.. বাগদা ধরা জালে ডাম্পিং বস্তা ক্ষতির মুখে পড়ছে..! বস্তার মধ্যখানে বালু সরে খালি হচ্ছে। তখন খালি বস্তাটুকু বৃষ্টিতে ভিজে রৌদ্রে শুকাচ্ছে। কিছুদিন পর বস্তার মাঝখান ফেটে বালু সরে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, নদীতে বাগদা চিংড়ি ধরা সম্পূর্ণ অবৈধ। চিংড়ি ধরা জালে নদীর নানাজাতি মাছ নষ্ট করে। ধংস করে মাছের প্রজনন। সরকার প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে। পুঁড়ে পেলছে অবৈধ জাল। তবে বাগদা ধরা জানে কিছুটা হলে জিও ব্যাগ নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, নদীতে বাগদা চিংড়ি ধরে কিছু লোক জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের বিভিন্নস্থানে চিংড়ি পোনা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। নদীতে চিংড়ি পোনা ধরা জেলেরা বাঁধের কিছুটা ক্ষতি করছে। তাদের অবৈধ জালে নানা প্রজাতির মাছ ধংস ও জিও ব্যাগ ছিদ্র হচ্ছে। এমন অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তবে যারা নদীতে ঠিকাদারি কাজ করছে তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জেলেরা প্রশ্ন তুলছে.. কতটুকু স্বচ্ছ কাজ ঠিকাদারগণ করছে..? শুধু কি জালের কারণে বস্তা ফেটে যাচ্ছে..? না নিম্মমানের কাজ হচ্ছে..?
স্থানীয়রা আরও জানান, নদীর পাড়ের মাটি কেঁটে পাহাড় সমান বেড়িবাঁধ দিচ্ছে। যতটুকু জানলাম, নদীর মাটি কাঁটা নিষিদ্ধ। নদীর কাজ করতে হলে মাটি দুর থেকে নিতে হবে। ঠিকাদার অন্যত্র থেকে মাটি এনে বেড়িবাঁধ নির্মান করবে। কিন্তু নদীর পাড় থেকে মাটি কেঁটে বেড়ি বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। জিও ব্যাগে অর্ধেক বালু ভর্তি করা হচ্ছে। ডাম্পিং হচ্ছে মানুষ দ্বারা। যেখানে মেশিন দ্বারা বস্তা ডাম্পিং করতে হয়। ঠিকাদার তার সুবিধা মতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নামে তদারকি করছে। তাদের কাছ থেকে কাজের ধরণের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যেভাবে ঠিকাদারগণ নদী ভাঙনে কাজ করছে। এভাবে চললে নদীতে ভাঙন রোধে কাজ হচ্ছে দেখা যাবে। তবে ভাঙন রক্ষায় কোন ফল আসবে না। ভাঙন চলতে থাকবে এবং ফসলি ভূমি, বসত বাড়ি ভাঙতেই থাকবে।
কাজে সম্পৃক্ত ঠিকাদারদের সাথে আলাপ করে সঠিক কাজের ধরণ ও নমুনা কিছুই পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে আলাপ করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষের দোহায় দিয়ে রেহাই নিচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো.ফারুক আহমেদ কে মেঠোফোন এবং হোয়াটআপে যোগাযোগ করে তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভাঙন রোধে স্থানীয় সংগঠন “কমলনগর-রামগতি বাচাঁও মঞ্চ ” আহবায়ক এড.আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ডাম্পিং করা জিও ব্যাগের উপর নৌকার নোঙর, বাধাঁ জাল, বাগদা চিংড়ির জালে মাছ ধরা বন্ধ, জেলে ও জনতার সিগারেট আগুনের জিও ব্যাগ নষ্ট হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা সেনাবাহিনীর, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েত করে ভাঙন রোধে ঠিকাদারদের কাজের তদারকি করতে আহবান করেন।