শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » অপরাধ ও দুর্নীতি » লক্ষ্মীপুরে রোগী যখন ডাক্তারের কব্জায়, চুক্তির বাজে ব্যবহারে রোগী নিরুপায়
লক্ষ্মীপুরে রোগী যখন ডাক্তারের কব্জায়, চুক্তির বাজে ব্যবহারে রোগী নিরুপায়
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমওডিসি ডা:নার্গিস পারভীন কর্তৃক রোগীর সহিত অপেশাদার ও অসৌজন্যমুলক আচরন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ইব্রাহিম নামে ভুক্তভোগী।
অভিযোগে তিনি বলেন, তার স্ত্রী (ভিকটিম) গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ নার্গিস পারভীনের নিকট চিকিৎসা করাতে যায়। ডা. রোগীর অবস্থা বুঝে বিভিন্ন ধরণের বাণিজ্যিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখেন। তার নিজস্ব চেম্বার গাইনী কেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন টেষ্টগুলো করাতে প্রায় ৭হাজার টাকা দাবি করেন। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাত্র ১ হাজার ৪শত টাকা দিয়ে করানো হয়। পরে ডা.নার্গিস পারভীনের কাছে এগুলো দেখাতে পূর্নরায় ভিজিট জমা দেই। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি রোগীর টেষ্টগুলো সহ ফাইলটি নেই।
বিষয়টি জানাজানির পর ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যক্তিগত সেলিম রেজা নামে ব্যক্তি হঠাৎ বাজে ব্যবহার ও অর্তিকিত হামলার চেষ্টা করেন তাদের সাথে। তবে অন্যান্য রোগী থাকায় ঝামেলা এড়িয়ে যান তারা। কিছুক্ষণ পরে পূর্নরায় তাকে ও তার স্ত্রী(রোগী)কে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে ডাক্তার এবং অভিযোগকারীগণ। দীর্ঘ সময় পরে তার চেম্বারে গেলে ডাক্তার টেষ্টের ফাইলটি রোগীর মুখের উপর ছুড়ে ফেলে। ডা.নার্গিস পারভিনের এহেন, অস্বাভাবিক আচারণে রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং আবারও রোগীকে কিছু টেষ্ট করাতে বলা হয়। এখানে ডাক্তারে নির্দিষ্ট সেন্টারে পরীক্ষা গুলো না করানোর কারণে এমন বাজে আচারণ করা হয়েছে জানা যায়। তিনি বেশ অর্থ বানিজ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে সূত্রে জানা যায়।
জানা যায়, জেলা সদরে প্রতিটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের সাথে মোটা অংকের বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। প্রতিটি রোগীকে বাধ্যতামুলক পরীক্ষার টেষ্ট দিতে হবে এবং সেই সেন্টারে না করালে টেষ্টগুলো দেখা হবে না। অভিযোগকারীর রোগীর দেয়া টেষ্টগুলো অন্য সেন্টারে করানোর কারণে চুক্তি ভিত্তিক আচারণ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী ইব্রাহিম আরও দাবি করেন, একজন গাইনী এসবিবিএস ডাক্তার ৮শত টাকা প্রথম ভিজিট এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে ৫শত টাকা রোগীর কাছ থেকে নেন। তাহলে তিনি ১হাজার ৩শত টাকায় রোগী দেখছেন..?
হাসপাতালের আসা রোগীরা জানান, ডা.নার্গিস পারভীন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকায় রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাকে সরকারি ভিজিটে দেখালে তিনি তার নির্দিষ্ট বেনামে থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো দেখিয়ে দেন। সেখানে তাকে দেখালে বিভিন্ন ধরণের রোগ নির্নয় টেষ্ট ধরিয়ে দেন। মোটা অংকের অর্থ বানিজ্য করেন তিনি। একজন রোগীর সাধারণত ১০ হাজার টাকা নিয়ে তার সাথে রোগ বিষয়ে দেখা করতে হয়। তার কথামত রোগী টেষ্ট এবং দেখা না করলে ধমক পর্যন্ত খেতে হয়। রোগীরা নিরুপায়। যার কারণে কিছু বলতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয়ে কসাইগীরি করছে ডা.নার্গিস পারভীন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, গত সাপ্তাহে তার স্ত্রীকে নিয়ে গাইনী কেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসানটেশান সেন্টারে যাওয়া হয়। ভিজিট ছাড়া যাওয়ায় তাকে খুব ধমক দিয়ে কথা বলেন। জামাল নামে ব্যক্তি বলেন, ডা.নার্গিস পারভীনকে ৪শত টাকা ভিজিট দেয়ায় রোগ নির্নয় ফাইল ছিড়ে ফেলে।
সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, এমবিবিএস অথবা মানবিক সেবায় নিয়োজিত কোন ডাক্তার রোগীর সাথে খারাপ আচারণ করতে পারবে না। রোগীর সাথে বাজে বা অসদাচরণ করা অমানবিক কাজ। এটার শাস্তি গুরুতর। মৌলিক অধিকার হরনকারীর মধ্যে পড়ে তারা।
জেলা সিভিল সার্জন আহমেদ কবির বলেন, ভুক্তভোগী ইব্রাহিমের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নুরে-এ-আলম বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ দেখে খুবই কষ্ট লেগেছে। বিষয়টা অমানবিক। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভী-বাণী/ডেস্ক/আমু