বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » জীবন চিত্র | প্রশাসন » গল্পটা পরিবর্তনের, একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার - ইউএনও সুচিত্র
গল্পটা পরিবর্তনের, একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার - ইউএনও সুচিত্র
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে খুবই আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণা যোগাতে কাজ করছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় নব যোগদান কৃত নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস। তিনি সাইকেল, মোটরসাইকেল, গাড়ি থেকে নেমে উপজেলার প্রতিটি স্তরে সাধারণ মানুষের সুখ, দুঃখে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। গ্রামের পাড়ায়, চায়ের দোকানে বসে থাকা মানুষের সাথে মিলে-মিশে উন্নয়ন মুলক কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করছেন। কাঁচাপাকা সড়কে মানুষের যাতায়াতের দৃশ্য ধারণ করছেন। সড়ক সংস্করে নজির দেখাচ্ছেন। মাত্র কয়েক মাসে সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছেন। তার সচেতনতা পোস্টগুলো দারুন অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেইসবুকে তার বেশ কিছু কাজের দৃশ্য চোখে পড়ে - একটা বড় নড়বড়ে সাঁকো, যেখান দিয়ে হাজার মানুষের যাতায়াত প্রতিনিয়ত। সেখানে নদীর স্রোতের পানি প্রবাহিত হয়। যার কারণে ব্রিজ বা কালবার্ড দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে নিজের আগ্রহে সাধারণ মানুষের জন্য মাটি, বালির বাধঁ দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা করেন।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারে আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন। কাজের ব্যস্থতায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন অসহায় পরিবারগুলো পাশে।
ঘর নেই, থাকার জায়গা নেই। খোঁজ নিয়ে ঘর মেরামতে আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন।অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তের আর্থিক অনুদান, কম্বল, খাবার, নতুন ঘর মেরামতের সরজ্ঞাম দিচ্ছেন। গ্রামীণ পথে বাইসাইকেল করে মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। যতটুকু সম্ভব সহায়তা করছেন।
সুচিত্র রঞ্জন দাস (ইউএনও)কমলনগর, কাজের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেইসবুকে তার অনুভূতি গুলো শেয়ার করে লিখেন….কিছু কথা তুলে ধরা হল-
# গল্পটা পরিবর্তনের, একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার…স্রোতের টানে রাস্তা ভেঙ্গে আশেপাশের বাড়িগুলো ভেসে যেতো লবনাক্ত জলে….
কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হলো, যেখানে মোটর সাইকেলে, হেঁটে, সাঁকো পার হয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে আজ গাড়িতে বসেই গেলাম।
এটাই আনন্দের, অনুপ্রেরণার….
# উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ২ বান্ডিল টিন, খাবার, কম্বল ও নগদ অর্থ (ছয় হাজার) প্রদান করা হয়েছে।
# মানুষের সব কষ্ট হয়তো দূর করা যাবে না, কিন্তু সহানুভূতি নিয়ে পাশে তো থাকা যাবে।
# চারপাশের গুটিকয়েক জায়গার চিত্র, কষ্টার্জিত অর্থ নষ্টের পাশাপাশি সমাজ জীবনে অপরাধ বৃদ্ধিতে ইহা প্রভাব রেখে চলেছে। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে চাই শৃঙ্খল ভেঙ্গে…
# চর লরেন্স গ্রামের ডেকোরেটর কর্মী আব্দুর রহমান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। মৃতের সৎকার কাজ সম্পাদনের জন্য ডেকোরেটর মালিক এর নিকট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০,০০০ টাকা নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।
# মেঠো পথ, গ্রামীণ আবহ, সঙ্গী তখন দ্বিচক্রযান…..
মাঠের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ দেখার জন্য যাবো উপজেলার আনাচে-কানাচে, হতে পারে সেটা ধানক্ষেতের আইল ধরে ছুটে চলা, বা খাল পাড়ের সরু পথে এগিয়ে যাওয়া…তাই চার চাকাকে ছুটি দিয়ে দুই চাকার গাড়িতে আরোহণ।
# এভাবেই সকল ইউনিয়নের সকল মেঠো পথে ছুটতে চাই, হতে চাই ভালোকিছুর অংশীদার।
# স্বপ্নের বীজ বপন, একটু প্রত্যাশা নিয়ে পথচলা, আরো একটা ভাবনা বাস্তবায়নের শুরুর গল্প…।
# এক স্বপ্নের যাত্রা, যে স্বপ্ন ধীরলয়ে ডালপালা মেলে ছড়িয়ে গেছে দূর থেকে দূরে…একজন মানুষেরও গল্প, যিনি চেয়েছিলেন নদীভাঙ্গা এ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হোক…একটি জনপদের গল্প, এক স্বপ্ন পূরণের গল্প…সব গল্পের পূর্ণতা যিনি দিয়েছেন তিনি শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ স্যার। স্বপ্নযাত্রা, একটি অ্যাম্বুলেন্সের নাম, যার চার চাকায় ভর করে একজন অসুস্থ মানুষ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হবার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
# মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের সাথে মিশেছে শীতল বাতাস, কাঠের নৌকা বারবার এদিকে ওদিকে কাত হচ্ছিল। তবু আমরা ইলিশ রক্ষায় ছুটে চলেছি….। শত ভাগ মেঘনায় সকল মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় অভিযান..।
# খাল-বিলের গল্প ও বাটারফ্লাই ইফেক্ট:
শৈশব কৈশরে ত্রিকোণাকৃতি ছোট জাল দিয়ে খালে বিলে কতো মাছ ধরেছি; মাছগুলো কচুরিপানায় লুকিয়ে থাকতো! সে গল্প সবারই ছোটবেলা জুড়ে রয়েছে। আজ সেই খালগুলো মৃতপ্রায়; যে খালে একসময় ডুব দেয়া যেতো সেখানে আজ হাত ধোয়ার অবস্থাও নেই। অপরদিকে, বর্ষা এলেই খাল-বিল পূর্ণ হয়ে পানি উঠে যাচ্ছে বাড়ি ঘরে, বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে চারপাশ। বাড়ির পাশের ছোট নদী, ছোট খাল-বিলের গল্পগুলো প্রজন্ম থেকে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছোট একটা বিষয় নিয়েই আজকের কথোপকথন। আপনার বাড়ির পাশেই দেখবেন ২০ ফুট খালের গলা চেপে ধরে ৫ ফুটের ছোট কালভার্ট বানানো হয়েছে। এভাবে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, খালগুলো মৃতপ্রায় হয়ে উঠেছে। এটা কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ির সামনেই বানাচ্ছি।
আমরা একটু সচেতন হলেই এই পানি প্রবাহের সমস্যাগুলো দূর করতে পারি, ফিরে আসতে পারে সেই অতীত গল্পের দিনগুলো।
উপরের প্রতিটি কথা মানুষকে সচেতন এবং আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়ণের কাজ করতে অনুপ্রেরণা যোগাতে কাজ করবে। প্রতিটির কথার আলাদা চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিটি কথার মাধুর্য মর্যাদা সম্পূর্ণ। লেখার অর্থ খুঁজতে (uno kamalnagar) ফেইজবুক আইডি দেখতে পারেন।
সুচিত্র রঞ্জন দাস আরও বলেন, গ্রামীন জনগোষ্ঠী নিয়ে সঠিকভাবে কাজ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সবার দোরগোড়ায় উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা পৌঁছাতে সময় নিচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলেন কমলনগর উপজেলা হবে জেলার স্বপ্নের চোখ।
ভী-বাণী/ডেস্ক