সব ধরনের নৌযানের রুট পারমিট লাগবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
পণ্যবাহী জাহাজ, ট্রলার, স্পিডবোটসহ সব ধরনের নৌযানকে রুট পারমিট নিতে হবে। এর জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে। এছাড়া রুট পারমিটের নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা করলে সাজা পেতে হবে।
এমন সব বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (নৌরুট পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া) বিধিমালা-২০১৯ জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এতদিন শুধু যাত্রীবাহী জাহাজের রুট পারমিট নেয়া বাধ্যতামূলক ছিল।
নতুন বিধিতে রুট অনুযায়ী কতটি নৌযান চলবে সেই সংখ্যাও নির্ধারণ করতে পারবে বিআইডব্লিউটিএ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিধিমালা সংশোধনের যৌক্তিকতা হিসেবে নৌ-মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, নৌ সেক্টরে দুর্ঘটনা কমানো ও শৃঙ্খলা আনতে বিধিমালায় নতুন কিছু বিধি-উপবিধি সংযোজন করা হয়েছে।
এদিকে নৌযান মালিকরা জানিয়েছেন, নতুন এ বিধিমালা তারা মানেন না। পণ্যের গন্তব্য অনুযায়ী পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। কোনো দেশে পণ্যবাহী জাহাজের রুট নির্দিষ্ট করে দেয়ার নজির নেই। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নৌ সচিব মো. আবদুস সামাদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যমান বিধিমালায় সব নৌযানের রুট পারমিট নেয়ার বিধান না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে, বিশৃঙ্খলা হয়। আমরা এসব কমিয়ে আনতে বিধিমালাটি সংশোধন করেছি। এতে দুর্ঘটনা কমবে, শৃঙ্খলা বাড়বে। পণ্যবাহী জাহাজের রুট নির্দিষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব জাহাজ যেসব রুটে চলাচল করবে সেসব রুটের পারমিশন নেবে। প্রয়োজনে মালিকরা সারা দেশে চলাচলের রুট পারমিট চাইতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে প্রণীত দি বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট (টাইম অ্যান্ড ফেয়ার টেবিল অ্যাপ্রুভাল) রুলস সংশোধন করে গত সপ্তাহে ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (নৌরুট পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া) বিধিমালা, ২০১৯ জারি করা হয়।
আগের বিধি অনুযায়ী কেবল যাত্রীবাহী জাহাজের (লঞ্চ) রুট পারমিট নিতে হতো। পণ্যবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড, স্পিডবোট, ট্রলারসহ ইঞ্জিনচালিত অন্য নৌযানের রুট পারমিট নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিলো না।
নতুন বিধিমালায় লঞ্চের পাশাপাশি সব ধরনের নৌযানকে রুট পারমিট নিতে হবে। বিধিমালার তফসিল-৩ সারাদেশের নৌপথকে ১৫টি অঞ্চলে ভাগ করেছে।নতুন বিধিমালার ৩৩ বিধি অনুযায়ী, কোন রুটে কতটি এবং কী ধরনের নৌযান চলবে—সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারবে বিআইডব্লিউটিএ।
নতুন বিধিমালায় নৌযানকে একবছরের জন্য রুট পারমিট দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কার্গো ভেসেল, কোস্টাল ভেসেল, অয়েল ট্যাংকার, কোস্টাল ট্যাংকার বা কনটেইনার জাহাজের রুট পারমিটের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তবে সার্ভে (ফিটনেট) সনদের মেয়াদ শেষ হলে রুট পারমিটের কার্যকারিতা থাকবে না। এতে আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে রুট পারমিট দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আবেদন রুট পারমিট পাওয়ার যোগ্য না হলে তা সরাসরি নামঞ্জুর করে আবেদনকারীকে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
নতুন বিধিমালায় যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজের আলাদা ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাত্রীদের জন্য কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ এবং পণ্য পরিবহনের জন্য ধরন অনুযায়ী দূরত্বের ভিত্তিতে টন প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করে সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দেবে বিআইডব্লিউটিএ।
এক্ষেত্রে নৌযানের মালিক সমিতি বা সংশ্লিষ্ট অন্য সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবে। পরে ওই ভাড়া প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করবে।
বিধিমালায় ভাড়ার টিকিটের নমুনাও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন উৎসব—ঈদ, পূজা, পার্বণ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান—নৌবিহার, শিক্ষা সফর, পিকনিক, বিবাহ ইত্যাদি উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিএ বিশেষ নৌ-সার্ভিস চলার অনুমতি দিতে পারবে।