মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » নদ-নদী | সারাদেশ » লক্ষ্মীপুরে দখলের কবলে দাপুটে জারিরদোনা খাল অস্তিত্ব হারাচ্ছে
লক্ষ্মীপুরে দখলের কবলে দাপুটে জারিরদোনা খাল অস্তিত্ব হারাচ্ছে
আমজাদ আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : একসময় বানিজ্যিক পথের যাতায়াত ছিল দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে থাকা খালগুলো। লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর শাখা ব্যবসা-বানিজ্যে দুরন্ত যাতায়াতের একমাত্র পথ জারির দোনা খাল। জারিরদোনা খালের ইতিহাস -ঐতিহ্য দেশ-বিদেশে ব্যাপক। ব্যবসা-বানিজ্য নৌকা, বড় বড় ট্রলার, স্টিমার, বড় বড় বোর্ড ছিল মালামাল আনা-নেওয়ার একমাত্র উপায়। স্থল পথে সড়ক বা রাস্তা নেই বললেই চলতো। কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছে এক সময়কার দাপুটে উপ-শাখা জারিরদোনা খাল। অস্তিত্ব সংকটে হারাতে যাচ্ছে তার গতিপথ। দখলদারের দখলের কবলে বিলীন হতে বসেছে জারিরদোনা নামক খাল।
সবার চোখের সামনে দখল হচ্ছে একসময়ে দাপুটে খাল জারির দোনা। প্রশাসন সহ সব জাতি নিরব ভূমিকা পালন করছে। খাল খননে প্রতি বছর বরাদ্দ হলেও খননের নাম বা লেস নেই। প্রশাসনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগেও মিলছে না কোন প্রকার হস্তক্ষেপ। এমনটাই জানাচ্ছেন বিপদগ্রস্ত সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় কৃষকের ভূমিকা ও ভাবনা হচ্ছে, একসময়ের দাপুটে জারিরদোনা খালে চওড়া ছিল ৪৪ ফুট। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে মাত্র কয়েক ফুট। দখলদারের দখলে ও স্থানীয়দের ময়লার ভাগাড়ে মরতে বসেছে বিস্তৃত খালটি। কৃষকের বারোটা বাজঁছে। সময় মত পানি সংকট ও জলাশয়ে কৃষি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খালের আনাচে-কানাচে বাঁধ দিয়ে ধরছে মাছ। পানি নামতে ও উঠতে বাঁধা পাচ্ছে। খালের দু’পাড়ে বসতি বাড়ি ও দোকানপাটে ভরপুর। যার মুখের সামনে সেই তুলছে দোকানপাট ও বসতি। তাদের দাবি, পানি যাওয়া এবং আসার স্রোত হলেই আর সমস্যা হবে না।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার কিছু এলাকা ঘুরে খালের ছবি নিতে করুন বিধায়ক তথ্য উঠে আসে। কমলনগর উপজেলা চর কাদিরা ভুলুয়া নদী থেকে হাজির হাট, চর ফলকন, পাটোয়ারীর হাট ও রামগতির চর বাদাম, আলেকজান্ডার ও চর আলগীর কিছু অংশে জারিরদোনা খাল মেঘনা নদীতে মিলিত হয়।
কৃষক জৈনক আক্কাস মিয়া বলেন, দার-দেনা করে জমিতে ফলন ফলায়। কিন্তু সঠিক সময় পানি পায় না। আবার পানি বেশি হইলে নিষ্কাশন করতে পারি না। কি করে করমু - খালের বেশির ভাগই ভরে গেছে। মানুষ খালের পাড়ে দোকান ও ঘর-বাড়ি তুলতেছে। প্রতি বছর কৃষি জমিতে লোকসান হয়। প্রচুর দেনা থাকতে হয়।
কয়েক জন কৃষক বলেন, সঠিক সময়ে পানি পাই না আবার পানি পাইলে জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। খালের কারণে যত সমস্যা। কৃষি কাজ করে প্রতি বছর দেনা হতে হয়। তাই জমি চাষ করণ ক্ষেমা দিছি। খালখান খনন বা কাটি দিলে ঠিক মত পানি পাইতাম তাহলে কৃষি কাজ করে লাভবান হইতাম।
জানা যায়, কৃষক ও সচেতন মহল বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও খাল দখল ও ময়লা ফেলার প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে পারেনি । প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত করতে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে জানান তারা।
কমলনগর উপজেলার হাজির হাট বাজারে জারির দোনা খাল নামে আছে। তবে যতটুকু নজর গেছে অস্তিত্ব সংকট ও মরণের আদলে দেখা গেছে। দখল ছাড়াও ময়লার স্তূপের ভরপুর জারিরদোনা খাল।
জারিরদোনা খালের মত জেলায় রয়েছে কমলনগরে মুছার খাল, তুলাতুলি খাল, সদরে গরুর খাল, ভবানীগন্জ খাল, জিয়ার খাল, কাটার খাল, বেড়ীর খাল, রহমতখালী খাল সবগুলো খালই দুষণে দূষিত। দখলদারের দখলের কব্জায় বাক্স বন্ধী।
বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিবির বরাদ্ধ থেকে খাল সংস্কারের জন্য উপজেলা পরিষদ একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়। কিন্তু খালটি সংস্কার না করেই বরাদ্দ উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, এমন তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) লক্ষ্মীপুর জেলার উপ সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে খাল খনন অতি জরুরি। খাল খনন করলে কৃষি জমিতে প্রযাপ্ত পানি সরবরাহ এবং পানি নিষ্কাশনে কোন সমস্যা হয় না। যারা খাল দখলে কাজ করছে তাদের ব্যাপারে প্রশাসনিভাবে কাজ করা হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, খাল দখল ও খননের বিষয়টি সরেজমিনে দেখে তদন্ত করা হবে। কৃষি কাজে সমস্যা হবে এমন কিছু করা যাবে না। কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খাল খননের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ভী-বাণী…