রবিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » মতামত » প্রযুক্তির যুগের কৃষি উৎপাদনে যুবকরাই হবে দেশের আত্মনির্ভরশীল স্বাবলম্বী
প্রযুক্তির যুগের কৃষি উৎপাদনে যুবকরাই হবে দেশের আত্মনির্ভরশীল স্বাবলম্বী
মতামত ডেস্ক : দেশের মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর হলেও হচ্ছে না আত্ননির্ভরশীল। আগামীর প্রজন্ম দিন দিন অলস ও বেকার হচ্ছে। প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে পিছিয়ে যাচ্ছি জীবন সংগ্রাম ও নির্ভরশীলতায়। গত ১৫ বছরে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের শিক্ষিত যুবকরা বেশি বেকার হচ্ছে।
২০২২ সালে এই বয়সী তরুণ বেকারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২১ সালের চেয়ে তা কিছুটা কম (৭ কোটি ৫০ লাখ)। তবে ২০১৯ সালে প্রাক্-মহামারি সময়ের চেয়ে তরুণ বেকারের সংখ্যা এখনো ৬০ লাখ বেশি।
দেশের আগামীর প্রজন্ম বেকার হচ্ছে তো হচ্ছে। এদের বেকারত্বে ধরণ পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। বেকার মানে বেকারত্ব নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষিতরা চাকুরির খোঁজে হন্ন হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। বেকারত্ব দুর করা দেশের কাজ হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের চাহিদার পরিবর্তন করতে পারছে না। দেশের শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা দরকার। পরিকল্পনা থাকলে হবে অর্থের প্রয়োজন। অর্থের প্রয়োজনে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার পর কারিগরি দক্ষতা পরিপূর্ণ জনবল দরকার পড়ে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পূর্ণ জনবলের অভাবে শিল্পের উৎপাদনে নিন্ম চাহিদার বৃদ্ধি পায়। এতে সঠিক পরিমানে উৎপাদন থেকে শিল্পের পরিপূর্ণ চাহিদা ব্যাহত হয়।
দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কর্মসংস্থান। তবে শিক্ষিতরা নিজেদের পন্ডিত মনে করে করছে না কোন ধরণের উদ্যমী কাজ। তারা গোছানো কর্মের পিছনে প্রতিনিয়ত দৌড়াচ্ছে। তৈরি করা কর্মই যেন তাদের জীবিকা প্রদান উৎস। তৈরি করা জীবিকার তাগিদে উপযুক্ত কর্ম না পেয়ে হতাশায় ভোগে প্রতিনিয়ত ধংস হচ্ছে। যদিও কর্মসংস্থানের সন্ধান পায় তাও উপযুক্ত সম্মানি বা বেতন পাচ্ছে না। তাতে আবার বেজায় গতি। অনেক সময় কাজের উপযুক্ত সম্মানির কারনেও বেকারত্ব বাড়ে।
মহামারি করোনায় সারা বিশ্বকে দাঁড় করিয়েছে অন্ধকার আর জীর্নতায়। শুরু হলো জীবনের হিসেব-নিকেশ। প্রজন্ম দিনদিন বাড়াচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদায়। অর্থের দুয়ারে মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বিশ্বের তালমাতাল দৃশ্য। অর্থনৈতিক প্রভাবে বন্ধ হচ্ছে সব দুয়ার। উৎপাদনের সাথে চাহিদার মিল নেই। উৎপাদিত পন্য আমদানি-রপ্তানিতে অসামঞ্জস্যের দিক ধরা দিচ্ছে।
তখনি কামড় খেতে বসেছে মধ্যামায়ের দেশগুলো। যাদের নিত্যপণ্যের চাহিদার বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। কোন পণ্য আমদানিতে বিলম্ব হলে দেশ সংকটে পড়ে। তেমনি দেশ বাংলাদেশ…
মহামারি করোনার সাথে সাথে আমদানি-রপ্তানিতে দেশের রির্জাভ ফান্ড সংকট। দেশে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় ব্যাপক চাহিদা। দেশে অর্থনৈতিক সংকটে বেকার আর বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের উৎপাদন চাহিদা খুবই সীমিত হচ্ছে। উৎপাদিত দেশগুলো নিজস্ব চাহিদা পূরণে তেমন সফলতা পাচ্ছে না। অন্যের চাহিদা মিঠানোর চিন্তা নেই বললেই চলে…।
বিগত বছরগুলো প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেরাই বেকার হচ্ছে। আগামী প্রজন্ম হবে দেশের বেকারত্ব দুরকরণে বড় আর্শিবাদ ও স্বাবলম্বীর মুল লক্ষ্য.. এবং বেকারযুব সমাজ হবে আত্মনির্ভরশীল স্বাবলম্বী।
প্রযুক্তির উন্নতিতে বেকার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারে শিক্ষিতরা কর্মসংস্থান হিসেবে তৈরিকৃত চাকুরিকেই বেঁচে নিচ্ছে। তারা কি একবারও চিন্তা করেছে…তাদের প্রতিদিন ১-২ ঘন্টা সময়ে প্রচুর আয় সম্ভব..? এবং অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদাও পূরণ হবে..? খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারণ কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া বেশি লেগেছে।
দেশে কারিগরি শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার। এতে শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিতরা বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে পারে। যেমন, মৎস্য চাষ, সেলাই, মোমবাতি তৈরি, গরু-ছাগল, ভেড়ার খামার তৈরি, কম্পিউটার প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন, নার্সারি, হ্যাচারি, অটোমোবাইল, ড্রাইভিং, শাক-সবজি চাষ, ক্ষেতে-খামারে উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনসহ যাবতীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে মাসে প্রচুর টাকা আয় করা ও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের ফসল উৎপাদনের জোর দিতে হবে। দেশের মাটি ও মানুষকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীর হতে হবে।
খাদ্য চাহিদা মেটাতে আরও বেশি করে ফসল ফলাতে হবে। আমাদের মাটি উর্বর। নিজের ফসল নিজেদেরই আরও বেশি করে উৎপাদন করতে হবে। তারা চাইলে গ্রামে থেকে ছোট ছোট উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।
ধরেন, দেশের বেকারত্ব দিনদিন বেড়েই চলছে। যুবকরা শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছে কিন্তু চাকুরি তো পাচ্ছে না। শিক্ষার হারের তুলনায় চাকুরির বাজারে চরম মন্দা। দেশের শিল্প-কারখানা সংকট। অর্নৈতিক মন্দায় বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা। শিল্প-কারখানা থাকলেও নেই শিক্ষিত যুবকদের প্রশিক্ষণ।অভিজ্ঞতা অর্জনে পিছিয়ে রয়েছে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত যুবকরা। শুধু অভিজ্ঞতা ছাড়ায় শিক্ষিত যুবকরা দিনদিন বেকারত্ব বাড়াচ্ছে। কিছুদিন পর বেকারত্বের মধ্য হতাশায় পড়ে আত্মহত্যার পথও বেঁচে নিচ্ছে। তারা যদি একটু চিন্তা করে… তাহলে… তাদের জীবনযাত্রার মান খুব দ্রুত উন্নতি শিখরে পৌঁছে যাবে…।
ধরেন…শিক্ষিত সাধারণ যুবকরা শহরে চাকুরি করে প্রতিমাসে আয় করে ১২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এতে বর্তমানে নিত্য পণ্যের সাথে জীবন সংসার চালানো খুবই দুঃসাধ্য। কিন্তু একটু চিন্তা করে কাজ করলে জীবনের গতি ফেরানো সম্ভব..।
যেমন…উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর গ্রামের বাড়িতে ঘরের কোনে, বাগান, উৎপাদিত ধান ক্ষেতের একটু খালি জায়গাতে শাক-সবজির চাষ, পেঁপে গাছের চারা রোপন করা এবং ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করলে খাদ্য সংকট খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব।
কম সময়ে, কম খরচে নিজের পড়ে থাকা খালি জায়গা অথবা সামান্য জমি বর্গা নিয়ে নিজের এবং পরিবারের খাদ্য সংকট দুর করে বাজারজাত করে লাভবান হওয়া যায়। আপনি একটু সচেতন হলেই হবে। খাদ্য সংকট সমাধানে মূখ্যভূমিকা রাখতে দেশের শিক্ষিত যুবকরা।
দেশের ৮০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন হয় মফস্বল ও উপকূলীয় অঞ্চল গুলোতে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে উচ্চ শিক্ষা অথবা চাকুরির সন্ধানে শহরে ভীড় জমাচ্ছে। কিন্তু তারা একটু চিন্তা করলে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গ্রামে থেকেই চাকুরি চেয়ে বেশি অর্থ আয় করতে পারে। বিভাগীয় শহরগুলোও খাদ্য সংকটে ভূমিকা রাখতে পারে। এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ির চাঁদে টবে করে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি ও ফলনাদি উৎপাদন করা সম্ভব।
শহরের জীবনযাত্রার মান নির্নয়ে উপকূলীয় অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের বিভিন্ন ধরণের রোগের মহাঔষৌধ গ্রামের আলো বাতাস আর প্রাকৃতিক হাওয়ার মুক্ত বাতাস।
প্রযক্তির ছোঁয়াকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষিতরা গ্রামে থেকে মাসে প্রচুর অর্থ আয় করতে পারে। শুধু তাদের ধারণার পরিবর্তন দরকার। এতে আগামীর খাদ্য সংকট সমাধানে শিক্ষিত বেকার যুবকরা হবে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী।
আগামী প্রজন্ম দেশের বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের উন্নয়নে শিক্ষিতরাই চাকুরি ছাড়া বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। শুধু তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা হিসেবে তাদের উদ্যোক্তা হতে সাহায্যে করতে হবে। দেশের ক্রান্তিকালে শিক্ষিত বেকাররাই হবে মডেল। এরাই নিত্য পণ্যে উৎপাদনে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বহিঃবিশ্বে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করবে।