গোল রক্ষক রুপনা’র জরাজীর্ণ পরিবার
বিশেষ প্রতিবেদন : গোল রক্ষক রুপনার ঘরে থাকার জায়গা হয় না। থাকে ভাইয়ের বাড়ি।তার মা বাম চোখে সম্পূর্ণ দেখেন না। ডান চোখে ঝাপসা দেখেন। দু পা মাঝে মাঝে ফুলে যায়। টাকা নেই ফলে ডাক্তার দেখাতে পারেন না। তবু্ও বাঁচার তাগিদে প্রতিবেশী ক্ষেত খামারে দৈনিক মজুরির কাজ করেন সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নের সেরা গোল রক্ষক রূপনার মা কালাসোনা চাকমা (৬৫)।
এতে তাঁর দৈনিক আয় হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ টাকা সংসার খরচে যোগান দেন কালা সোনা। এভাবে চলে তাঁর জীবন।
রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বুইয়ো আদাম গ্রামের জরাজীর্ণ বাড়ির সামনে কথা হয় রূপনার মায়ের সাথে।
তিনি বলেন, খুব কষ্টে দিন পার করি। মাঝে মাঝে রূপনা হাজার দেড়েক টাকা পাঠায়। ৬ মাস পর বিধবা ভাতা পায়। সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশের খুটি আর বাঁশের বেড়ার ঘরটি বেশ ঝরাজীর্ণ। এ ঘরে ছেলে বউ ও দুই নাতনির নিয়ে রূপনাদের সংসার।
রূপনার মা বলেন, রাতে তিনি মাটির উপর ফ্লোরিং করেন। বৃষ্টি হলে বাড়িতে পানি ঢুকে মাটির ফ্লোর ভিজে যায়। ঘুম হয় না সেদিন। রূপনা আসলে বাড়িতে থাকার জায়গা হয় না। বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে হয়।
রূপনার বড় ভাই অটিল চাকমা (২৮) বলেন, আমি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি। এখন দৈনিক মজুরি কাজ করি। আমার দুই ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীর খরচ্ও চালাতে পারি না। অর্থের অভাবে মাকে ডাক্তার দেখাতে পারি না।
রূপনার আরেক বড় ভাই শান্তি জীবন চাকমা (৩৫) বলেন, আমি ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। এখন দৈনিক মজুরি কাজ করি। রূপনা তো সারাজীবন ফুটবল খেলতে পারবে না। তার জন্য একটি সরকারী চাকুরী হলে ভাল হয়। না হলে সেও আমাদের মত কষ্ট পাবে।
রূপনার মা বলেন আমার সর্বমোট ৪ সন্তান। দুই ছেলে দুই মেয়ে। রূপনা সবার ছোট। রূপনা যখন আমার পেটে তখন তার বাবা মারা যায়। খুব অভাবের সংসার আমার। আমার কষ্টের শেষ নেই। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। আমার মেয়ের এতটুকু যাওয়ার পেছনে ঘাগড়ার বীরসেন দা, শান্তিমনি বাবুদের অবদান সবচেয়ে বেশী। তারা আমার মেয়েকে ঘাগড়ায় নিয়ে ফুটবল খেলা শিখিয়েছেন।
রূপনার অবিভাবকের প্রয়োজন হলে আমাকে মাঝে মাঝে আমাকে ঢাকায় যেতে হয়। আমাদের কোন টিভি না থাকায় মেয়ের খেলা দেখতে পারি না। আমাদের জন্য একটি ঘর ও রূপনার জন্য একটি সরকারী চাকুরীর ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি রূপনাদের বাড়িতে গিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেড় লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আমাকে ফোন করে রূপনাদের বাড়ি নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি শিগগির বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করব। তাছাড়া রূপানাদের বাড়ি যেতে একটি সাকো পার হতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলব। সেখানে বড় সেতু নির্মাণ করতে হবে।