নদীর ভয় ডাকাত ও জলদস্যু
আমজাদ আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
জাল মেরামতে ব্যাস্থ জেলেরা। নদীতে ইলিশ ধরতে যাবে। ইলিশের তেমন দেখা নেই বললেই চলে। মন খারাপ করে জাল মেরামতে করছে জেলে জামাল ভাই।
জামাল ভাই’র নৌকায় সাত জেলে মাছ ধরার সঙ্গী। মাছ ধরতে গিয়ে জাল ছিঁড়ে যায়। মাছেরও দেখা নেই। গতকাল সারাদিনে মাত্র ৭ শত টাকার মাছ পেয়েছে। যেখানে খরচ ৮ -৯ হাজার টাকা। তারমধ্যে জাল ছিঁড়েছে প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকার। হতাশ আর ক্লান্তি নিয়ে পাশে বসে খাচ্ছে দু’জন। বাকিরা সময় কাটাচ্ছে। ভোর হলেই নদীতে মাছ ধরতে যাবে। যার জন্য চলছে জাল মেরামত ও আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি। এই সিজনে একসাথে ১০ হাজার টাকা মাছও পায়নি জামাল ভাই’র নৌকা।
জামাল ভাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কিছু ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলেন, নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ডাকাত ও জলদস্যু, কোষ্টগার্ডের খপ্পরে পড়ে জান-মাল ও শারীরিক নির্যাতনের শিকারের কথা। গভীর রাতে নদীতে যখন মাছ ধরতে যায়। রাতের আধাঁরে নদীতে উৎপেতে থাকা ডাকাতের হাতে কয়েকবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তার নৌকায় থাকা জেলেদের আটক করে। মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের টাকা দেন। মাঝেমধ্যে টাকা দিলেও জানের নিরাপত্তা পাওয়া যায় না। টাকা না দিলে গুলি করে মেরে নদীতে পেলে দেয়।
একদিন গভীর রাত হঠাৎ তার নৌকায় ডাকাত পড়ে। তাকেসহ আটক করে অজানা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। পরে টাকা দিলে গভীর চরে ছেড়ে দেয়। নৌকা আটককৃত সবাই বিকাশ, রকেট, নগদ এসব মোবাইলের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে। এসব বিষয় নিয়ে পরে কোন কথা বললে নদীতে মেরে ফেলার হুমকি-দমকি দেয়। যার কারণে ভয়ে কিছু করা হয় না। নদীতে ডাকাত ভয়ংকর ভয়ের কারণ। তারমধ্যে সরকার জেলে নিরাপত্তার জন্য কোষ্টগার্ড পাহারায় রেখেছে। কিন্তু কষ্টের কথা মাঝেমধ্যে ডাকাতের চেয়েও কোষ্টগার্ড ভয়ংকর আচারণ করে। তাদেরও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে গুলি করে, মারধর করে পুলিশে দিয়ে দেয়।
নদীতে মাছের দেখা নেই। তারমধ্যে ডাকাতে ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে হয়। অনেক সময় টাকা না দিলে মারধর করে নৌকা পুটো করে ছেড়ে দেয় ডাকাতদল। একটা নৌকার দাম প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা। সব কিছু মিলে ডাকাতের হাত থেকে টাকা ছাড়া কেউ ফিরে আসতে পারে না। ডাকাত, জলদস্যু ও সরকারি বাহিনী কোষ্টগার্ড পর্যন্ত জেলেদের আটকিয়ে টাকা নেয়। যেখানে সরকারি লোকের কাছে জেলেরা নিরাপদ নয়। সেখানে ডাকাত বা অন্যরা তো হিসেব-ই নেই।
জামাল ভাই আরও বলেন, নদীতে মাছের খুব আকাল। মাছ নেই বললেই চলে। প্রতিটি জেলে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়। প্রত্যেক মাঝি বা জেলের পরিবারে ৫-৬ জন সদস্য আছে। নদীতে মাছ না পেলে অনেক সময় সংসার চলে না। তারমধ্যে মহাজনের দেনা রয়েছে। জেলেদের সমস্যা ও সমাধান দিতে কেউ পারবে না।
আগে নদীতে জেলে ও নৌকা ছিল কম। এখন নদীতে প্রচুর জেলে ও নৌকা বেড়েছে। সবমিলে নদীতে মাছ পড়লে সমস্যা হয় না।
জামাল ভাই’র সাথে মাহফুজ, মালেক, ইসমাইল, মালেক সহ সাত জন কাজ করেন। তাদের সবার বাড়ি ভোলার পরানগন্জ এলাকায়। জামাল ভাই দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত নদীতে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা ও সংসার সামলান। এরা নদীর অগভীরে ভাসানচর, হাতিয়া, ঠেংগারচর, জাহাজমারা, মাইজচরাসহ সাগরের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে যায়। নদীতে রাত গভীর হলে চলে জীবনের ভয়ংকর হিসেব-নিকাশ।
নদীতে জেলেদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকার মাঝ ঘাট থেকে রাতের আলোতে তুলে ধরেন সংবাদকর্মী আমজাদ আমু।
নদী বা সাগরের মাছ ধরতে জেলেদের প্রতিনিয়ত ভয়ংকর তথ্যচিত্র সবারই জানা। কিন্তু জেলেদের নিরাপত্তার জন্য কোন সুষ্ঠু সমাধান আদৌ সম্ভব হয়নি। নদীর রঙিন স্বপ্নে জেলেরা মাছ ধরতে যায়। কিন্তু রঙিন স্বপ্ন মরিচীকায় প্রতিনিয়ত আটকা পড়ে।