৪২ বার দোকানের স্থান পাল্টালেন কুদ্দুস কাকা
আমজাদ আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনের ৪২ বার দোকানের স্থান পরিবর্তন করেন আব্দুল কুদ্দুস কাকা। কুদ্দুস কাকার বর্তমান বয়স ৬৭ হলেও শিশুকাল মানে ৭-৯ বছর বয়স থেকে নদী পাড়ে চা দোকান করে চলছেন।
বসত বাড়ি ছিল সাহেবের হাট ইউনিয়নের সঠিকগন্জ এলাকায়। নদী পাড়ে ছোট চা দোকান। মাচা তৈরি করে কোনমতে দোকানের বেচা-বিক্রিতে চলছে ৩ মেয়ে ০১ ছেলে ও স্ত্রী’র সংসার। কোনমতে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে। হিমসিম খাচ্ছে প্রতিনিয়ত সংসারে খাওনের জিনিসপত্র কিনতে।
নদীর পাড়ের দোকান ঘরটি গত কয়েক বছরে মাত্র ৪২ বার ভেঙেছে। যতবার ভাঙছে ততবারই নদীর পাড়েই থাকছে। প্রতিবার দোকান ঘর সরাতে খরচ ও অসহ্য লাগছে। কিন্তু কি করার..! এই দোকানের আয়ে চলতে হচ্ছে।
তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছে। ছেলে বড় হলেও আয় রোজগার কিছুই করছে না। এতে তার কষ্ট হচ্ছে। তবে কিছু করার নেই। আগে দোকানে প্রতিদিন ৫ -৬ হাজার টাকা বেচা-কেনা হইত। তাতে খুব সুন্দর ভাবে সংসার চলতো। কিন্তু এখন মাত্র ৪-৬ শত টাকা বেচা-কেনা হয়। এতে তো আর সংসার চলে না। জীবনে তাগিতে বেঁচে থাকা আর কি..!
নদীতে বাড়ি একবার ভাঙলেও জমি কিনে বাড়ি বানাতে পারেনি। বাড়ি করছে অন্যের জমিতে। যদিও বাড়ির জমি শ্বশুর বাড়ি থেকে হক পাওয়া সম্পত্তি। কোনমতে চলছে কি করে জমি কিনে বাড়ি বানাবে..? অর্থ তো নেই… ।
মেঘনার ভাঙন থামছে না। দোকান ঘর তো সরাতেই হবে। তার চোখের সামনে দিয়ে কত বাড়ি, বসতি ঘর, ফসলি জমি ভাঙছে কোন হিসেব নেই। কিন্তু চোখে দেখে কি করবে..? রাক্ষসী মেঘনার পেটে তো জমি ডুকে যাচ্ছে। আর একবার পেটে জমি ডুকলে তো আর বের হচ্ছে না। সাহবের হাটের সফিকগন্জ ও কাদিরপন্ডিতের হাট অনেক বিশাল বড় বাজার ছিল। এখন তো আর নেই নদীতে ভেঙে গেছে।
কথা বলছি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের কাদির পন্ডিতের হাট এলাকার চা দোকানি আব্দুল কুদ্দুস কাকার সাথে।
কুদ্দুস কাকা কথা বলার মধ্যে হতাশ হয়ে নিরব হয়ে যায়। নদী পাড়ে দোকান ঘর করতে জমির পয়সা দিয়ে হয় না। তাই নদীর পাড় থেকে অন্য কোথাও সরে যাচ্ছে না। অন্যখানে দোকান ঘর তুলতে হলে ভাড়া বা জমি কিনতে হবে। টাকা তো নেই কি করে ভাড়া বা জমি কিনে দোকান ঘর করবে..! কুদ্দুস কাকার বর্তমান দোকান দ্বিতীয় ভাঙনে নতুন কাদিরপন্ডিতের হাট এলাকা থেকে পশ্চিমে প্রায় ১২-১৪ কিলোমিটার দুরে সফিকগন্জ ছিল।
কুদ্দুস কাকা বলছে, কবে যে নদী ভাঙনের কাজ হবে। সেটাই বুঝি না। আর কত মেঘনার পেটে মানুষের জায়গা জমি বিলীন হবে। এভাবে হলে তো কমলনগর উপজেলা থাকবে না। তিনি শুনছে নদী ভাঙনের কাজ হবে। সরকার টাকা দিচে। তবে কাজ যে কেন হচ্ছে না। সেটা বুঝেন না। তিনি আর বলেন, সরকার টাকা দিলে কাজ হবে না কেন..? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে..। তবে কারণ আর যাই হোক কাজ হলে ভালো হবে। না হলে আপসোস থাকবে।
কুদ্দুস কাকা আরও বলেন, যখন নদীতে মানুষের জমি ও বাড়ি ভাঙে তখন মানুষ খুব কাঁন্দে। অনেকে নদীর পাড় থেকে ঘর সরাতে চায় না। একেবারে কাছে আসলে সরিয়ে চলে যায়। তবে যারা নদীতে বাড়ি-ঘর হারায়, তারা আর নিজের বাড়ি করতে পারে না। অন্যের জায়গা বা রাস্তার পাশে কোনমতে ঘর বানাই থাকে। তার অনেক আত্মীয় স্বজনরা এখনও বাড়ি-ঘর করতে পারেনি। নদীতে কয়েক বছর আগে যাদের বাড়ি-ঘর ভাঙছে। তারা অন্যের সাহায্য বেঁচে আছে। যতবার নদীতে দোকান ঘর ভাঙবে ততবারই নদীর পাড়ে দোকান ঘর তুলবে। অন্যত্র যাবে না।
পরিশেষে, কুদ্দুস কাকার আকুতি সরকার নদী ভাঙনে টাকা দিছে। যেন কাজটি খুব তাড়াতাড়ি হয়। কাজ হলে তিনি মনে খুব আনন্দ পাবেন।
মেঘনার ভাঙন চলছে বিগত ত্রিশ বছরেও বেশি সময় ধরে। ভাঙনে বাজার, মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসা, শত শত একর ফসলি জমি, হাজার হাজার বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। সরকার গত কিছুদিন আগে প্রায় ৩১ শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কাজের ট্রেন্ডার হলে ঠিকাদার কাজ করছে না। কাজের কোন তদারকিও নেই।
স্থানীয়ভাবে জানা ও দেখা যায় গত কয়েক মাসে মেঘনার ভাঙন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে জোয়ারের পানি বেড়ি না থাকায় রাস্তা-ঘাট, সড়ক ও মানুষের বাড়িতে উঠে যাচ্ছে। এতে গবাদিপশু ও মানুষে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মেঘনার পাড়ের মানুষ নিরুপায় হচ্ছে। চোখের সামনে এসব দেখছে। তবে কিছুই করতে পারছে না।
কুদ্দুস কাকার মত সবার গণদাবি, তাড়াতাড়ি যেন মেঘনার ভাঙনের কাজ হয়।
ভী-বাণী/ডেস্ক