শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » » কমলনগরে হতদরিদ্র প্রকল্পের কাজ নিয়ে নয়ছয়, চলছে ভেকু দিয়ে কাজ
কমলনগরে হতদরিদ্র প্রকল্পের কাজ নিয়ে নয়ছয়, চলছে ভেকু দিয়ে কাজ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ শুরু হলেও কাজের কোন সন্তোষজনক আলামত পাওয়া যায়নি। কাজ শুরুর আগেই হত দরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ ও টাকা নিয়ে নয়ছয়ের হিসেব চলছে। কাজের ভিতরে চলছে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মহা পরিকল্পনা। উপজেলা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে প্রকল্পের টাকা জায়েজ করতে চেয়ারম্যানদের গোপন বৈঠকও হয়। সেখানে কে কত পাবে.. কত টাকায় ম্যানেজ হবে.. এমনটা উঠে আসে।
তবে কয়েকবার উপজেলা (পিআইও) অফিসে কাজের তথ্যে- কোথায় কোন ইউপির কোন সড়কের কাজ হবে, এমন তথ্যে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুলকে ফোন দিলে তিনি কোন তথ্য দেয়নি। তিনি সব ধরণের তথ্যে দিতে সরাসরি নারাজি প্রকাশ করেন। তবে দায়সারাভাবে পরে জানানো হবে, এমন কিছুও বলেন। কাজ হচ্ছে না জানতে চাইলে ভিন্নখাতে এড়িয়ে যান। তবে তিনি কমলনগর উপজেলা ছাড়াও রামগতি উপজেলা (পিআইও)’র দায়িত্বে রয়েছেন। সেখানেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
কিছু ইউনিয়নে দেখা যায় শ্রমিক নয়, ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে হতদরিদ্র কর্মসূচির কাজ। যা সরাসরি প্রকল্প বিরোধী কাজ।
এদিকে,তালিকাভুক্ত মোট উপকারভোগীর ৩৩ শতাংশ নারী শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলে বাস্তবে নারী শ্রমিকদের দেখা নেই। শুরু হওয়া বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ হচ্ছে ভেকু মেশিনে।
তবে শ্রমিকদের কাজের টাকা তাদের মোবাইল ফোনের সিম নাম্বারে আসার কথা। কিন্তু তা সিম নাম্বারেই আসবে-সেটা শ্রমিক নয়, চেয়ারম্যানদের সিম নাম্বারে আসবে। কারণ শ্রমিকদের নামে সিম ও এনআইডি চেয়ারম্যানরা আগেই নিয়ে তাদের জিম্মায় রেখেছে। কাগজ-কলমে শ্রমিকদের হাজিরা দেখিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে টাকা উত্তোলনের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এদিকে, ৪০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের নেই সঠিক তদারকি। তদারকি বিষয়ে জানতে চাইলে আসে দায়সারা উত্তর।
এমন অনিয়ম চলতে থাকলে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা ও কাজ নয়ছয় হয়ে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। কর্মসূচির সময়সীমা ৪০ দিন। নির্ধারিত ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা।
এবার কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি, সাহেবেরহাট, চর লরেন্স, চর মার্টিন, চর ফলকন, পাটারিরহাট, হাজিরহাট, চর কাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে বরাদ্দ চার কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৯টি ইউনিয়নে দুই হাজার ৭৬১ শ্রমিক কাজ করার কথা। একজন শ্রমিকের ৪০০ টাকা করে প্রতিদিনের বরাদ্দ ১১ লাখ চার হাজার ৪০০ টাকা। এ কর্মসূচির নন-ওয়েজ বরাদ্দ ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৬০ টাকা। নন-ওয়েজসহ কমলনগর উপজেলার জন্য মোট বরাদ্দ চার কোটি ৬২ লাখ চার হাজার ২৬০ টাকা।
বরাদ্দের বেশিরভাগ নদী ভাঙন কবলিত সাহেবেরহাট, কালকিনি, চর ফলকন, পাটোয়ারীরহাট ইউপিতে। যেগুলোর বেশির ভাগই নদী গর্ভে বিলিন। তাহলে এমন বরাদ্দের কাজ কোথায় হচ্ছে- জনগন জানতে চায়।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, যথাসময়ে (জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে) কোনো ইউনিয়নে কাজ শুরু হয়নি। কাজ শুরু হতে হতেই প্রকল্পের ৮-১০ দিন শেষ। এদিকে, প্রকল্পের দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও নেই কাজের অগ্রগতি।
বুধবার সরেজমিন চর মার্টিন ইউনিয়নের হাবিবউল্লাহ কারি জামে মসজিদ সমাজের রাস্তায় একজন শ্রমিকও দেখা যায়নি। সেখানে চলছে ভেকু দিয়ে কাজ। মঙ্গলবার চর কালকিনি ইউনিয়নের কালকিনি-সাহেবেরহাট সড়কে শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও ভেকু দিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। অন্য ইউনিয়নে নামমাত্র শুরু হওয়া কাজে ৮-১০ জন শ্রমিকের দেখা মেলে। দু-চারটি প্রকল্পে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক দেখা যায়। প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক সময় পার হয়ে গেলেও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে তার বেশিরভাগই হচ্ছে ভেকু মেশিনে। এদিকে বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রমিকরা।
জানা গেছে, চলতি কর্মসূচির টাকা উপকারভোগী শ্রমিকদের মোবাইল ফোনে (বিকাশে অ্যাকাউন্টে) আসবে। শ্রমিকদের ওই টাকা আত্মসাৎ করতে কূটকৌশল চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তিনি কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্পের তালিকা নোটিশ বোর্ডে দেওয়ার বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলা হবে।
ভী-বাণী/ ডেস্ক