শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » » কুমিল্লায় বন্দুকযদ্ধে নিহত ৩, চলছে নানা প্রশ্ন
কুমিল্লায় বন্দুকযদ্ধে নিহত ৩, চলছে নানা প্রশ্ন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার আরেক আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হলেন।
পরপর দুটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় কুমিল্লার মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক নেতা, মামলার বাদী, এমনকি নগরের সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, আসামিরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা, সেটি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। কে এই হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা, কারা এর পেছনে আছে, সেটি জানা যাচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও নিহত কাউন্সিলরের এলাকার লোকজন এমন প্রশ্ন ও সন্দেহের কথা জানালেন।
গত বুধবার রাত ১টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন চানপুর এলাকায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি নগরের সুজানগর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম (২৮) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর আগে গত সোমবার রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন সংরাইশ বালুমহাল এলাকায় একই মামলার আরও দুই আসামি সাব্বির হোসেন (২৮) ও সাজন (৩২) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সাব্বির হত্যা মামলার ৩ নম্বর ও সাজন ৫ নম্বর আসামি ছিলেন।
গত ২২ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনায় গত ২৩ নভেম্বর রাতে কাউন্সিলর মো. সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। গতকাল পর্যন্ত এজাহারনামীয় পাঁচজন ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধে এজাহারনামীয় তিন আসামি মারা যান। আরও তিন আসামির মধ্যে ২ নম্বর আসামি সোহেল ওরফে জেল সোহেল, ১০ নম্বর আসামি সায়মন ও ১১ নম্বর আসামি রনি পলাতক। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে শাহ আলমের পেছনে পিস্তল হাতে থাকা শুভপুর এলাকার গ্রিলমিস্ত্রি নাজিম ওরফে পিচ্চি নাজিমকে পুলিশ খুঁজছে।
বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ
৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে নগরের পাথুরিয়াপাড়া, সুজানগর, টিক্কারচর এলাকার মানুষ তাঁদের ক্ষোভ ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই সব এলাকা ঘুরে অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিক্কারচর কবরস্থানের ফটকের সামনে অন্তত ১২ ব্যক্তি বলেন, তাঁরা (শাহ আলম, সাব্বির ও সাজন) খারাপ মানুষ ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কারা কাউন্সিলরকে খুন করতে বলল, কে এর পেছনে আছে, সেটি না জেনে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া সমর্থন করা যায় না।
মামলার বাদী ও নিহত কাউন্সিলর মো. সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বলেন, ‘কারা অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, সেই সব গডফাদারের নাম জানানো হোক। এই হত্যাকাণ্ডের আগে-পেছনে কেউ না কেউ জড়িত। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের কাছ থেকে সেটা বের করতে পারলে রহস্যটা জানা যেত।