মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » লক্ষ্মীপুরে নিজস্ব অর্থায়নে গণকবর ও মসজিদ নির্মান করেন পুলিশের আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ
লক্ষ্মীপুরে নিজস্ব অর্থায়নে গণকবর ও মসজিদ নির্মান করেন পুলিশের আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : মেঘনার ভাঙনে কবলিত ভিটে-মাটি হারা ভূমিহীন হাজার পরিবারের জন্য নির্মিত হয়েছে গণকবর ও মসজিদ। লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার ভবানীগন্জ ইউপি’র চর মনসা গ্রামে এ গণকবর ও মসজিদ নির্মিত হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এর নিজস্ব উদ্যেগে এটি নির্মান করা হয়। প্রায় ২৯ শতাংশ জমির উপর গণকবর ও মসজিদ নির্মান করা হয়।
আজ মঙলবার দুপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ কবর ও মসজিদের নামফলক উন্মেচন করেন।
এসময় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী জীশান মির্জা, চট্রগ্রাম রেজ্ঞের ডিআইজি ড.আনোয়ার হোসাইন, জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান, দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড জেলা প্রতিনিধি ও লক্ষ্মীপুর২৪ এর সম্পাদক সানা উল্লাহ সানু, ভূমিহীনদের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের সদর দপ্তর এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ভূমিহীনদের জন্য গণকবর ও মসজিদ নির্মান করা হয়েছে। মানুষে পাশে থাকতে হবে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। লক্ষ্মীপুরে ভূমিহীন মানুষের কোন কবর নেই এমন একটি সংবাদ ‘লক্ষ্মীপুর টুয়েন্টিফোর ডটকম’ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করে। বিষয়টি দেখে তার স্ত্রী এবং তার খারাপ লাগলো। পরে সম্পূর্ন নিজের অর্থায়নে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের আয়োজনে জমি ক্রয় করে গণকবর এ মসজিদ নির্মানের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে সবার অধিকার থাকবে। যাদের নিজস্ব কোন কবর দেয়ার জায়গা নেই। তারা সবাই তাদের আত্মীয়স্বজন মারা গেলে কবর দিতে পারবেন। এই গণকবর ও মসজিদ সবার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হল।
তিনি আরও বলেন, মিডিয়া জনগনের মুল শক্তি।সোস্যাল মিডিয়ার কারণে এখানে গণকবর ও মসজিদ নির্মান করা হয়। গণকবর ও মসজিদের বিষয়ে তার সহধর্মীনি জীশান মির্জার অবদান রয়েছে। তিনি সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে।
প্রসঙ্গত,: মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার প্রায় অর্ধেক বিলীন হয়ে যায়। নদীতে ভিটে-মাটি হারানো প্রায় দুই হাজার পরিবার এখন রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের আশে-পাশে বসবাস করছে।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ থেকে কমলগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত ০৮ কিমি: এলাকায় সড়কের দু’পাশে জরাজীর্ণ অস্থায়ী ঘর তুলে কোনমতে বসবাস করছে। কোনমতে জীবনের তাগিদে বেঁচে থাকার পরও জীবন সন্ধিক্ষণে মহাবিপদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বসবাসে থাকা মানুষগুলোর আপনজন মারা গেলে মৃতদেহ দাপনে নেই কোন ধরণের জায়গা বা কবর।
মৃতদেহ নিয়ে কান্নাকাটির চেয়ে হতাশায় ভোগে কবরস্থ করতে। কোথায় করব দিবে, কার জায়গায় কবর দিবে..? এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে জরাজীর্ণ বসবাস করা মানুষগুলো। মৃতদেহ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গেছে কিন্তু দাপন হয়নি। বসবাসরত মানুষগুলোর নির্মম পরিস্থিতি দেখে মহতি উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ (বিপিএম) ড.বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জীশান মির্জা। তারা নিজস্ব অর্থায়নে কবরস্থানের পাশাপাশি মসজিদ নির্মান করে দেন।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙা মানুষে কথা চিন্তা করে পুলিশের আইজিপির উদ্যোগে ভূমিহীন সর্বহারা মানুষগুলোর জন্য গণকবর ও মসজিদ নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ২ হাজার পরিবার পুলিশের পক্ষ থেকে অকল্পনীয় উপহারটি পাওয়ায় খুব খুশি। তারা পুলিশের এমন মহতি উদ্যোগে পুলিশ প্রসংসার পাওয়ার যোগ্য মনে করেন।
ভূমিহীনরা জানান, স্বজন হারানোর বেদনার চেয়েও বেশি চিন্তা ছিল কবর দেয়া। মৃত্যুর পর অনেক সময় মরদেহ নিয়ে কয়েক ঘন্টা বসে থাকতে হয়। কোথায়, কার জমিতে মরদেহ দাফন করা যাবে, তা নিয়ে সবসময় অস্থিরতা কাজ করত। কারো মৃত্যু হলে শুরু হয় এদিক-ওদিক ছুটাছুটি। নিজস্ব কবরে অন্য কাউরে কবর দিতে অনিহা প্রকাশ করা। এতে করে নদী ভাঙা মানুষ গুলোর শেষ যাত্রা হয় বিড়ম্বনার। আল্লাহ রহমতে এখন আর কোন সমস্যা নেই। পুলিশের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদ, গণকবরের পাশাপাশি সেখানে গভীর নলকূপ, মরদেহ ধোয়ার ঘর ও শৌচাগার রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে গণকবরে যাওয়ার জন্য রাস্তাও সংস্কার করা হয়েছে।
ভী-বাণী /ডেস্ক