মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ ও দুর্নীতি » পিআইও’র ঘুষের ১৬ লাখ টাকা উধাও, চার কর্মচারী আটক
পিআইও’র ঘুষের ১৬ লাখ টাকা উধাও, চার কর্মচারী আটক
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াদ হোসেনের কার্যালয় থেকে ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাই একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকেরসহ ৪ কর্মচারীকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন।
আবদুল বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, বিকেলে পিআইও রিয়াদ ও মেহেদী তাদের বাসায় গিয়ে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালায়। এসময় পিআইও বাসার আসবাবপত্র উলট-পালট ও ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ এনেছেন শারমিন।
শারমিন আরও জানান, তার স্বামী বাকের তিনমান পূর্বে পিআইও অফিসে যোগদান করলেও তাকে অফিসের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তার স্বামী (বাকের) এর বিরুদ্ধে পিআইও রিয়াদের এটা সাজানো নাটক। তার স্বামীকে ফাসানো জন্য এই নাটক করা হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ঠিকাদারের অভিযোগ, পিআইও রিয়াদ প্রত্যেকটি কাজেই ঘুষ বানিজ্য করে। ঘুষ ছাড়া তিনি কোন ফাইল বা বিলের চেকে সই করেন না। সম্প্রতি কয়েকটি কাজের বিলের চেকে সই করার জন্য তাদের কাছ থেকে তিনি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন।
উপজেলা কার্যালয়ের কয়েকজনের ভাষ্যমতে, পিআইও’র কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকার কথা নয়। তিনি ঠিকাদারদের টাকা চেক অথবা প্রে-অর্ডার এর মাধ্যমে বিল দেয়ার কথা। তাহলে নগদ টাকা কেন আসবে..? তাও এত টাকা…! তার টাকা গুলোর উৎস কি..?
তারা আরও বলেন, পিআইও রিয়াদ দীর্ঘদিন থেকে ঘুষ বানিজ্য করে আসছেন। তিনি এরপূর্বে যত জায়গায় কর্মরত ছিলেন, সবখানেই ঘুষ বানিজ্য করেছেন। তিনি তার ঘুষ বানিজ্য পাকাপোক্ত করতে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন।
একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচ ব্যক্তি জানিয়েছেন, জুন ক্লোজিং উপলক্ষে পিআইও তাদের কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন। তাদেরকে কমিশন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ঘুষের এ ১৬ লাখ টাকা নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের বিল দেওয়ার কথা। দুদকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
জানা গেছে, রিয়াদ হোসেন রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কমলনগর উপজেলার শূন্যপদে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
থানায় আটক আবদুল বাকের বলেন, আমি তিনমাস পূর্বে যোগদান করলেও আমাকে কোন ধরণের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমি কোন দোষ করেনি। ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পিআইও আমাকে থানায় আটকে রেখেছে। আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকি। পিআইও নিজে এসে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালিয়ে আমার বাসার সকল আসবাবপত্র ওলট-পালট করে দিয়ে গেছে। এছাড়াও গত দিবাগত রাত থেকে আমাকে থানায় আটকে রেখেছে। আমি খুবই অসুস্থ্য।
বক্তব্য জানতে পিআইও রিয়াদ হোসেনের দুইটি মুঠোফোনে রাতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, থানায় চারজনকে ডাকা হয়েছে। তবে পিআইও এখনো কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ দেননি। টাকারও সুনির্দিষ্ট কোন অংক বলেনি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত আমি টাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, চারজনকে থানায় ডাকার কথা শুনেছি। পিআইও অফিসের কিছু টাকারর ঝামেলার কারণে তাদের থানায় আটক করা হয়েছে। পিআইও ‘র সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ভী-বাণী/ডেস্ক