এভার কেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া
বিশেষ ডেস্ক : করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান করানোর জন্য রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নেয়া হেয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১৭ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ৯টা ৪২ মিনিটে এভার কেয়ার হসপাতালে পৌছে।
বিষয়টি বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করছেন।
গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়, শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় হয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর আজ প্রথম ফিরোজা থেকে বের হলেন বেগম খালেদা জিয়া।
এর আগে আজ বিকালে ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডামের আজকে সেভেন ডে। কোবিডের পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে এন্ট্রি হচ্ছে। আমি আগেও বলেছি যে, কোবিডের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কোবিডের যত সাবধানতা, যত জটিলতা সেগুলো সাধারণত সেকেন্ড উইকে হয়। সেজন্য আমরা আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করতে চাই।
তিনি বলেন, উনার সব পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু সিটি স্ক্যানটা করানো হচ্ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, খুব দ্রুত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিটি স্ক্যানটা করিয়ে ফেলবো। এছাড়া উনার আর সব যেমন বায়ো কেমিক্যাল প্যারামিটারস, ফিজিক্যাল স্ট্যাটাস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন এবং এপেটাইট, পালস, ব্লাড সার্কুলেশন অন্যান্য সব দিকে উনি- আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছে।
সিটি স্ক্যান কোন হাসপাতালে করানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোথায় সিটি স্ক্যান করাব তার ব্যবস্থাও আমরা করে রেখেছি। যখন করব তখন আপনারা জানতে পারবেন।
ডা. সিদ্দিকী বলেন, কোবিডে কখনোই আপনি আগে থেকে বলতে পারবেন না কন্ডিশন কেমন হবে। এটা খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল একটা রোগ। তবুও আমরা খুব দ্রুত দ্রুত সিটি স্ক্যান করিয়ে ফেলবো খুব দ্রুত। আমরা যদি সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে মনে করি যে, বাসায় রেখে চিকিৎসা করাটা উনার জন্য ভালো হবে তাহলে আমরা বাসায় রাখব। আর সিটি স্ক্যান দেখে যদি মনে করি না আমরা ২/৩ দিনে জন্য বা কয়েকদিনের জন্য উনাকে হাসপাতালে অবজারভেশনে রাখা দরকার-আমরা সেটাও করব। আমাদের ডিসিশনটা নির্ভর করবে সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের উপরে।
নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে গত রোববার খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক একটি টিম চিকিৎসা শুরু চলছে।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত চিকিৎসক টিম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে। নিয়মিতই তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মো. আল মামুন ফিরোজায় গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুলো মনিটরিং করেন এবং সেগুলোর রিপোর্ট চিকিৎসক টিমের প্রধানকে অবহিত করেন।
চিকিৎসক টিমের সদস্যরা জুমে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেন। এসব বৈঠকে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও থাকেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও গুলশানে ‘ফিরোজা’র বাসায় তার গৃহকর্মীসহ আরো ৮ জন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন বাড়ি চলে গেছেন এবং বাকীরা ফিরোজায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
৭৫ বছল বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত। দন্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়, শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন ইউরে্ালিজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ডা. মো. আল মামুন ও গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।