কবে হবে বাজেট কে জানে..? ততদিন কি উপজেলা থাকবে..?
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা বাসী। ভয়াবহ ভাঙন যেন পিছু ছাড়ছে না। চোখের পলকে-ই বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি আর বিলাসবহুল স্থাপনা। ভাঙন রোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব:) আব্দুল মান্নান বারবার কাজ হবে এমন আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু গত তিনবছরেও কাজ হচ্ছে না। যার পেক্ষিতে জনমতে বিদ্রুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। জনমতের প্রশ্ন - বাজেট হতে হতে, ততদিন কি কমলনগর উপজেলা থাকবে..?
পাঁচটি উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা গঠিত। যার মধ্যে রামগতি উপজেলাকে দুই’ভাগ করে ২০০৬ সালে কমলনগর উপজেলা ঘোষণা করা হয়।
কমলনগর উপজেলাটি আয়তনে খুবই ছোট। এ ছোট উপজেলাটি মেঘনার কোলে অবস্থিত। যার বেড়ে উঠা মেঘনা নদী নিয়ে। বিগত ত্রিশ বছর মেঘনা তার আপন গতিতে ভাঙছে।
কমলনগরের হাজির হাট বড় বাজার। এ বাজার থেকে পশ্চিমে প্রায় বিশ কিমিঃ দূরত্বে ছিল মেঘনা নদী। এ দূরত্বের মধ্যে বড় বড় বেশ কয়েকটি পুরোনো বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ছিল।
যেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। মেঘনা ভাঙতে ভাঙতে এখন দিশেহারা। প্রতিদিনই ভাঙছে মেঘনা। চোখের পলকেই হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, ভিটেবাড়ি, পুরোনো সব ঐতিহ্য। ভাঙন কবলিত জনগনের আশ্রয়স্থল অন্যর জমি আর প্রধান সড়কের দু’পাশের ঝুপড়ী ঘর। যা মানব সমাজের অপ্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থল।
এমন ভাঙনে উপজেলাটির পুরো আয়তনের (মোট ৩১৪.৮৬ বর্গ কিমিঃ) এর মধ্যে প্রায় ১৮৫ বর্গ কিমিঃ ভাঙনের মুখে রয়েছে। বাকি অংশটুকু মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে খুব শীঘ্রই বিলীন হয়ে যাবে কমলনগর।
কমলনগর উপজেলার পূর্ব-পশ্চিম ২০ কিমিঃ এবং দক্ষিণ -উত্তর ১৮ কিমিঃ মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। দক্ষিণ-উত্তর পার্শ্বে প্রায় ১৮ কিমিঃ বাঁধের মধ্যে মাত্র এক কিমিঃ সামান্য বাঁধ রয়েছে যা বলতে গেলে কিছুই না।
এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উপজেলা কমপ্লেক্স, হাজির হাট বাজার, থানা ভবন, সরকারি কলেজ এখন ভাঙনের মুখে মাত্র এক কিমিঃ দুরত্ব। উপজেলাটি রক্ষায় স্থানীয় সংসদ ও জনগন মানববন্ধন করেও সরকারের নজরে আসতে পারেনি। বারবার মন্ত্রী ও দপ্তরের ফাইল দিয়েও ব্যর্থ হয়। এখন ফাইল প্রসেসিং হচ্ছে। কবে হবে বাজেট কে জানে..? ততদিন কি উপজেলা থাকবে…?
গত কয়েক বছর যাবত নদী ভাঙন রোধে রাস্তা অবরোধ, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিলেও ভাঙন রোধে কোন প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত তিনদিনে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে নদীতে পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঘনার চোখের ইশারায় ভেঙেছে। এসব হঠাৎ ভাঙনে কূল হারা পাখির মত ছটপট করছে স্থানীয় বসবাসকারীরা। এখন তাদের মনে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা ও হতাশা বিরাজ করছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে কমলনগর শুধুমাত্র মানচিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
গত কয়েক বছরে ২০ কিমিঃ ভাঙনে মাত্র ০১ কিমিঃ কোনমতে বাধঁ হয়েছে। এই বাধেঁ ধস নামতে নামতে বাকি কিছু রহিল না। এই বাধঁ এখন শুধু নামে আছে, কাজে নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর আগমনে মেঘনার ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ হবে এমন আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি। এতে এলাকাবাসীর ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে কাজ না হলে আর হবে না।
গত কয়েক দিন মেঘনার বাঁধ যেভাবে ভাঙছে, সেই ভাঙন অব্যাহত থাকলে কমলনগর রক্ষা পাবে না। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত যেন প্রধানমন্ত্রীর দাবি বাস্তবায়িত হয়। কমলনগর যেন মেঘনার ভাঙন রোধে রক্ষা পায়।
গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেঘনার ভাঙনে প্রায় বিশ কিলোমিটার উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, লুধুয়া, পাটারিরহাট, সাহেবের হাটসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙন কবলিত। এভাবে ভাঙন চলমান থাকলে মানচিত্র থেকে কমলনগর খুব শির্ঘ্রই হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দীর্ঘ বছরে নদীর ভাঙনে প্রায় ২২টি বড় হাট-বাজার, ২৫ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ২০টি সাইক্লোন শেল্টার, ১২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৩০০ কিলেমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৩০ হাজার একর ফসলি জমি ও ২৫ হাজার বাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
ভী–বানী/ডেস্ক