শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » » এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’
আরেক শোকবার্তায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় এ শিল্পী তার অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’
এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মন্ত্রীদের শোক
এদিকে এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। পৃথক-পৃথক বার্তায় তারা এ শোক প্রকাশ করেন।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মন্ত্রীদের মধ্যে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রতিভাবান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, সর্বজন নন্দিত শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান তার অনন্য অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
শোকবার্তায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের একজন কিংবদন্তী। তার সুনিপুণ অভিনয় দর্শক হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে। বাংলা সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অপরিসীম। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট অভিনেতাকেই হারায়নি, আমরা হারিয়েছি একজন মহান ব্যক্তিত্বকে। তার শুন্যতা পূরণ হবার নয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ অভিনেতা তার অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান তার কালোত্তীর্ণ অভিনয়ের মাধ্যমে টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। জনপ্রিয় এ অভিনেতা তার অনবদ্য অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শক হৃদয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান নিপুণ অভিনয় দিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। তার চলে যাওয়া বাঙালি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের মাঝেই তিনি এদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। শোক বার্তায় আমু বলেন, জনপ্রিয় এই অভিনেতা তার অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে জাতি একজন গুণী শিল্পীকে হারালো, যা নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ঢাকার দুই মেয়রের শোক
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোক বার্তায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশ একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ অভিনেতা তার অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে পুরোধা ব্যক্তিত্ব। অভিনয়ের জোরেই ব্যক্তি এটিএম শামসুজ্জামান ধীরে ধীরে নিজেকে এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। তার চলে যাওয়া বাঙালি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
প্রতিমন্ত্রীদের শোক
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় বলা হয়, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহ আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রতিমন্ত্রী।
এতে আরও বলা হয়, এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের শক্তিশালী অভিনেতা। তার মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শক্তিমান এ অভিনেতা তার অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গুণী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০।
শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বর্ষীয়ান এ অভিনেতাকে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তার মেয়ে কোয়েল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, তার বাবার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পরে শুক্রবার বিকেলে এটিএম শামসুজ্জামানকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রথম চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন ‘জলছবি’ সিনেমায়। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন তিনি।
১৯৬৫ সালে অভিনেতা হিসেবে সিনেমায় অভিষেক ঘটে তার। অসংখ্য খণ্ড নাটক এবং ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ অভিনেতা। একমাত্র সিনেমা ‘এবাদত’ পরিচালনা করেও সুনাম অর্জন করেন এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি।