১৬ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ ছাত্রদল
বিশেষ ডেস্ক :
কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার প্রায় তিন মাস পর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই তিন মাস বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্র সংগঠনটি চালিয়েছেন মাত্র দু’জন নেতা! আর কাউন্সিলের দীর্ঘ ১৬ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি সংগঠনটি। এজন্য সংগঠনটির তৃণমূলের কর্মীরা বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বকে দোষারোপ করছেন।
তারা বলছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে ১৬ মাস অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হচ্ছে না। কারণ বর্তমান কমিটির নেতারা সংগঠনকে গতিশীল করতে চান না এবং যোগ্য ছাত্রদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চান না। তারা নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে চান।
তবে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ার জন্য করোনা মহামারির অজুহাত দেখাচ্ছেন সংগঠনটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন। তিনি বলেন, করোনার কারণে কমিটি গঠনের কার্যক্রম পিছিয়ে গিয়েছিলো। এজন্য কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু করোনার মধ্যে গত ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের হল শাখাসহ সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ, উপজেলা, পৌর শাখা কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
এদিকে ছাত্রদলের বিগত কমিটির ন্যায় বর্তমান কমিটিও রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বিএনপি চেয়েছিলো রাজপথের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ছাত্রদল। কিন্তু কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয় বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত এই ছাত্র সংগঠনটি।
অন্যদিকে কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান কমিটি গত ১৬ মাসে মাত্র ২টি জেলা এবং সারাদেশে উপজেলা, পৌর ও কলেজসহ ১ হাজার ২শ’র মতো কমিটি গঠন করেছে। এমনকি ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটিও দিতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। তবে খুব শিগগির ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
যদিও আন্দোলনের ব্যর্থতার বিষয়ে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতাদের ভাষ্য, কমিটি গঠনের পর ছাত্রদলের মূল লক্ষ্য ছিলো তৃণমূল থেকে সংগঠনকে গোছানো এবং সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
এবিষয়ে ফজলুর রহমান খোকন বলেন, সারাদেশে সব জেলায় কমিটি আছে। আর আমরা দুটি জেলা কমিটি করেছি। এছাড়া উপজেলা, পৌর ও কলেজসহ ১ হাজার ২শ’র মতো কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে দুই ঘণ্টা প্রতীকী অনশন করেছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দরা। শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এই অনশন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দের ব্যানারে এই অনশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ পদ প্রত্যাশী প্রায় ৪০ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দদের অভিযোগ, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর ১ থেকে দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু বর্তমান কমিটির দুই বছর মেয়াদের মধ্যে ১৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তারা তারেক রহমানের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করছেন। এজন্য আমরা অনশনে বসেছি।
পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন বলেন, করোনার কারণে কমিটি গঠনের কার্যক্রম পিছিয়ে গিয়েছিলো। তবে আগামী ১ থেকে দেড় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে। এজন্য আমরা ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কাজ করছি। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক হন ইকবাল হোসেন শ্যামল।