আমানত
নিজস্ব প্রতিবেদক-
আমানতের খিয়ানত বা বিশ্বাস ভঙ্গ করা একটি বড় গুনাহ। বিশ্বাসগুণ আধ্যাত্মিক উন্নতির মূল। রাসূলুল্লাহ (স.) বিশ্বাস রক্ষার জন্যই পরম শত্রুদের কাছেও ‘আল আমিন’ বা বিশ্বাসী উপাধি পেয়েছেন।
আমানত সম্পর্কে বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য নিচে কিছু হাদিস বর্ণনা করা হলো-
১. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যে পর্যন্ত দুজন শরিক একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে, সে পর্যন্ত আমি তাদের ভেতর তৃতীয় শরিক হয়ে থাকি। যখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাদের কাছে হতে আমি চলে যাই। (আবু দাউদ)
২. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেছেন। বিশ্বাস করে যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত (গচ্ছিত) রাখে, তা তাকে দিয়ে দিয়ো; এবং যে তোমার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তার বিশ্বাস ভঙ্গ কোরো না। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
৩. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (স.) আবুল হাইসামকে প্রশ্ন করলেন ও তোমার খাদেম আছে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, যখন যুদ্ধবন্দি আমাদের কাছে আসে, তখন তুমি এসো, দুটি বালককে বন্দি করে তার কাছে আনা হলে তিনি বললেন, এ দুজনের মতো একজনকে পছন্দ করো। সে বলল আপনিই আমাকে পছন্দ করে দিন। তিনি বললেন, যার সঙ্গে পরামর্শ করা হয়, তার প্রতি বিশ্বাস ন্যস্ত করা হয়; তাকে গ্রহণ কর, আমি তাকে নামাজ পড়তে দেখেছি। তাকে সৎ উপদেশ দিয়ো। (তিরমিজি)
৪. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.)-এর মৃত্যুর পর আলায়া বিন হাজরার কাছ থেকে হজরত আবু বকরের কাছে প্রচুর ধন-রত্ন এসে পৌঁছাল, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে যার প্রাপ্য থাকে অথবা তিনি যাকে যা দান করতে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তাকে আমার কাছে আসতে বলো। হজরত জাবের বললেন, রাসূলুল্লাহ (স.) আমাকে এ ধন দিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনবার তিনি হস্ত প্রসারিত করলেন। তিনি আমাকে এক বোঝা অর্থ দিলেন। গণনা করে দেখলাম ৫০০ দিনার। তিনি বললেন, এর দ্বিগুণ গ্রহণ করো। (বোখারি, মুসলিম)
৫. হাদিস: হজরত আবু হোজায়ফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) আমাদের ১৩টি অল্প বয়স্ক উট দিতে আদেশ দিলেন। আমরা নিতে গেলে, তার মৃত্যু সংবাদ পেলাম এবং আমরা কিছুই পেলাম না। হজরত আবু বকর দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের যাকে রাসূলুল্লাহ (স.) কিছু দিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাকে আসতে বলো। আমি তাকে এ সংবাদ জানালে তিনি আমাদের তা দিতে আদেশ দিলেন। (তিরমিজি)
৬. হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত (স.) নবুয়ত প্রাপ্ত হওয়ার আগে আমি তার বায়াত গ্রহণ করেছিলাম। আমার কাছে হজরতের কিছু প্রাপ্য ছিল। নির্দিষ্ট স্থানে তা নিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করলাম, কিন্তু তা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তিন দিন পর স্মরণ হলে তথায় গিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ (স.) এ স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ। তিন দিন যাবৎ এখানে তোমার অপেক্ষায় আছি। (আবু দাউদ)
৭. হাদিস: হজরত জায়েদ বিন আকরামা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, যখন কোনো লোক তার ভ্রাতার কাছে ওয়াদা করে তা রক্ষা করার ইচ্ছা পাষণ করে, কিন্তু তা রক্ষা করতে অপারগ হয় বা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে না, তার কোনো গুনাহ হবে না। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
৮. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানত। অন্য বর্ণনায়: আল্লাহর কাছে পদ মর্যাদায় সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক এ ব্যক্তির হবে যে, স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করে এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে সহবাস করে সে গোপন কথা প্রকাশ করে। (আবু দাউদ)
৯. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন কোনো লোক কথা বলে গোপন রাখার জন্য তার মনোযোগ আকর্ষণ করে, ইহা আমানত। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
১০. হাদিস: হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন তার পথে কাউকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখো, তার জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেল এবং তাকে প্রহার কর। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
১১. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তিনটি মজলিস ছাড়া অন্য সব মজলিসই বিশ্বাসের সঙ্গে করা হয়: অন্যায়ভাবে হত্যার, হারাম গুপ্তাঙ্গ সম্ভোগের অথবা অন্যায়ভাবে ধন-সম্পত্তি আত্মসাতের মজলিস। (আবু দাউদ)
১২. হাদিস: হজরত সুফিয়ান (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমার ভাইকে তুমি যদি এমন সংবাদ দাও যা সে সত্য বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু তুমি তা অসত্য বলে জান, তা হলে তা তোমার চরম বিশ্বাসঘাতকতা হবে। (আবু দাউদ)
হাদিসগুলো ‘বিষয় ভিত্তিক হাদীসে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ বই থেকে সংগৃহিত।