বাড়ুক না বয়স, তবুও থাকুক ছন্দ
ফিচার ডেস্ক-
কবিগুরুর কথা, কেশে আমার পাক ধরেছে বটে, তাহার পানে নজর কেন এত? সত্যি তা-ই। বয়স, শরীরের বয়স তো সংখ্যা বই কিছু নয়। মন বুড়ো না হলেই হলো।
পঞ্চাশ বছরে পড়েই কেমন যেন আমূল বদলে গিয়েছে সম্পূর্ণার জীবন। শরীরে বড়সড় বদল ঘটেছে। সেই সঙ্গে মনে মনেও বড্ড ভেঙে পড়েছেন। জীবনের সব রং-রূপ যেন কেউ শুষে নিয়েছে। কোনো কিছুতেই মন লাগে না। নিজের জন্যও আলাদা করে সময় দিতে ইচ্ছে করছে না। সাজগোজে মতি নেই। মন নেই সঠিক খাওয়া-দাওয়ায়। শরীরই বা এই অত্যাচার সহ্য করবে কেন? এক সময় সেও প্রতিশোধ নিতে শুরু করল। এই অবহেলাই ক্রমশ রূপান্তরিত হল অপুষ্টিতে। সম্পূর্ণার শরীর হয়ে উঠল রোগের আঁতুরঘর।
বয়সের সঙ্গে শরীরের কিছু এমন বদল ঘটে যা এড়ানো অসম্ভব। সেই বদলগুলোকে মেনে নিয়েই জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পঞ্চাশ বছর নারীর জীবনে শুধুমাত্র একটা সংখ্যা নয়, বরং একটা বড় মাইলফলক। এই সময় মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়। নানারকম শারীরিক বদলের সঙ্গে তখন খাপ খাইয়ে নিতে হয়। ঘুম কমে যায়, শরীর হঠাৎ হঠাৎ গরম হয়ে যায়, অদ্ভুত এক দুর্বলতা আসে। নিজের শরীর যেন নিজেরই নাগালের বাইরে চলে যায়। ফলে পঞ্চাশের পর থেকেই মেয়েদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস
শারীরিক এই বদলের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক মহিলার পক্ষেই বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। বরং পঞ্চাশ বছর থেকে নব উদ্যমে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে হবে। সাজপোশাকে ঔজ্জ্বল্য আনতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ম আনতে হবে। নিজের প্রতি আবার নতুন করে যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। তারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না, সাজগোজে কেমন যেন বুড়োটে ভাব এনে ফেলেন, নিজেদের ইচ্ছেগুলোও প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন। কিন্তু এমন মনোভাব বদলাতে হবে। বরং নব আনন্দে জীবনের স্বাদ নেওয়া শুরু করতে হবে।
ডাক্তারি পুষ্টি
বছর আটচল্লিশ বা পঞ্চাশ থেকে নারী শরীরে হরমোনের যে বদল ঘটে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে বাড়তি কিছু পুষ্টির প্রয়োজন হয়। সেই পুষ্টি খানিকটা খাদ্য থেকে পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু কিছুটা আবার ওষুধের মাধ্যমেও দিতে হয়। শারীরিক বদলের পর প্রয়োজন অনুযায়ী ইস্ট্রোজেন হরমোন ইনজেকশন দিতে হয় অনেক মহিলাকে। কার কতটা প্রয়োজন, সেটা চিকিৎসক ঠিক করেন। অনেকের হয়তো আদৌ এই ইনজেকশন দরকার হয় না। এছাড়া পঞ্চাশ বছরের পর ক্রমশ মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে তাদের এই বয়সে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হয়।
বয়স বেড়ে গেলে অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। তখন শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়। সেরকম হলে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি ট্যাবলেটও খেতে হয়। তবে এরমধ্যে কোন ওষুধ খাবেন এবং কী ডোজে খাবেন, তা অবশ্যই ঠিক করবেন ডাক্তার।
বয়স বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাওয়াদাওয়ার রুটিনেও বদল আনা জরুরি। এই বয়সে মহিলাদের শরীরে প্রোটিনের খুবই প্রয়োজন। তাই মাছ, চিকেন, ডিমের সাদা দু’বেলা খাওয়া উচিত। না পারলে রাজমা, সয়াবিন, ডাল অবশ্য খাবেন। সবজির মধ্যে এই বয়সে ব্রকোলি বেশ উপকারী। ফলের ক্ষেত্রে আপেল খুবই ভালো। তাছাড়াও বেরি জাতীয় ফল, গ্রিন টি এই সবও মধ্যবয়সের মহিলাদের ডায়েটে রাখা উচিত।
শেষ কথা
সব বয়সেই জীবনে একটা ছন্দ থাকা দরকার। মনে রাখবেন, আপনি সব সময়ই অপরিহার্য। তাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন, জীবনটা চুটিয়ে উপভোগ করুন। বয়স বাড়ে বাড়ুক, জীবনের তাল কাটতে দেবেন না।